Breaking Bharat: শীত গ্রীষ্ম বর্ষার ভরসা কে সি পালের ছাতা (k c paul umbrella) কাটিয়ে ফেলল ৭৮ বছর, স্বাধীনতার আগে ব্যবসা শুরু এখন কেমন আছে সেই ছাতার দোকান?
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আজকাল আর ছটা ঋতুকে ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না। যেটা পাওয়া যায় সেটা হলো বীভৎস গরম তা না হলে দফায় দফায় বৃষ্টি । যেমন আজকাল হচ্ছে আর কি! আর এই দুইয়ের ক্ষেত্রেই আপনার মাথাকে ঢাকা দেবার বা আড়াল করার জন্য দরকার ছাতা। ছাতার ভরসাতেই শীত দৃশ্য বর্ষা হৈ হৈ করে বেরিয়ে যাবেন আপনি।আর আজকের প্রতিবেদনে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ছাতার কথা (kc paul umbrella shop)।
দেশ তখনও স্বাধীন হয় নি। ব্রিটিশ পিরিয়ডের অপশাসনের বিরুদ্ধে তখন লড়াই করছেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী। সেই সময় ব্যবসা শুরু করল কে সি পালের ছাতা (KC pal umbrella started business)। সাল ১৯৪২, তখন বাঙালি রোদ কিংবা বৃষ্টি নিয়ে চিন্তিত ছিল না। বাঙালির মাথার উপরে তখন পড়ছিল বোমা। নেতাজি তখন সিঙ্গাপুরে, জাপানে রাসবিহারী বসু তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। আর শ্যামবাজার, খিদিরপুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ছে জাপানি বোমা।
আবার স্বাধীনতা আন্দোলনের নতুন নতুন মোড় দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশদের তাড়াতে না পারলে তো এই যুদ্ধের হাত থেকেও নিস্তার নেই। নিতান্তই ভয়ে কাবু যাঁরা, তাঁরা তখন নৌকোয় উঠে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামের দিকে। কলকাতায় থাকা আর সম্ভব নয়। কিন্তু তুলসীদাস পালের ছাতার ব্যবসা ছেড়ে যেতে পারলেন না ছেলে কার্তিকচন্দ্র পাল। বরং সেই ব্যবসাকেই আরও খানিকটা বাড়ানোর চেষ্টা করলেন তিনি (kc paul umbrella owner)।
এভাবেই বড়বাজার পুরুষোত্তম রায় স্ট্রিটে তৈরি হল প্রথম দোকানটি। তবে দুঃখের বিষয় কার্তিকচন্দ্র ওরফে কে. সি. পাল ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত দেখে যেতে পারেননি। দেখতে দেখতে ৮০ ছুঁতে চলল বড়বাজারের সেই দোকান। আর এখন ডালপালা মেলে পরিধিও বেড়েছে অনেকটাই। ১৯৪৭ সালে মাত্র ৫২ বছর বয়সে কে. সি. পাল এর মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরলেন দুই ছেলে অনাথনাথ এবং বিশ্বনাথ।
বাকি দুই ছেলে অলোকনাথ এবং দেবনাথ তখন রীতিমতো ছোটো। তবে অনাথনাথ ছিলেন ব্যবসার ব্যাপারে অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। সেই ২৪ বছর বয়স থেকেই সারা দেশ ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এদেশে অনাথনাথের নামের সঙ্গে পরিচয় নেই, এমন ছাতার ব্যবসায়ী পাওয়া মুশকিল।হ্যাঁ, বাঙালির কাছে ছাতা মানেই তো কে. সি. পাল।
আরো পড়ুন- jeet actor : বাংলা ছবির বস সুপারস্টার জিৎ, লাইম লাইটে আসার নেপথ্য কাহিনী জানেন ?
নামের উপরে সরকারি আর চিহ্নের দিকে না তাকিয়েই বাঙালি নিশ্চিন্তে ভরসা রেখেছে। ওই যে নিচে লেখা, ‘সিন্স ১৯৪২’, ওটুকুই যথেষ্ট। রোদ, ঝড় অথবা বৃষ্টিতে একান্ত বন্ধুর মতো। কখনো কখনো তাকে দেখা যায় বৃদ্ধের লাঠি হয়েও। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে। তিন ফোল্ডের ছাতা অনায়াসে ঢুকে যায় আধুনিকার ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে (k c paul umbrella wholesale price)।
আরো পড়ুন- বেদের মেয়ে জোৎস্না দেখেছেন? এই ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যে জানেন? Beder Meye Josna
আজকাল ছাতার পাশাপাশি বর্ষাতির ব্যবসাতেও বাজার দখল করেছে কে. সি. পাল। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার উড়িষ্যা ছাড়িয়ে ব্যবসা ছড়াচ্ছে আসাম এবং ত্রিপুরাতেও। কে. সি. পালের পরবর্তী প্রজন্মরাও হয়তো আসমুদ্র হিমাচলকেই তাঁদের ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চান।ব্যবসার ভাগাভাগি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চার নাতি এখনও একসঙ্গেই থাকেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউর সাবেক গড়নের ‘তুলসী ভবন’এর মধ্যেই।
আরো পড়ুন- Sunny Leone : সানি লিওনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন তার স্বামী লিড গিটারিস্ট ড্যানিয়েল ওয়েবার
সেইসঙ্গে দুটি দোকানের ১০ জন কর্মচারী এবং সিমলা অঞ্চলের কারখানার ৪০ জন কর্মী, সবাইকে নিয়েই কে. সি. পালের পরিবার। গড়ে প্রতিদিন ২০ ডজন ছাতার যোগান দিয়ে চলেছেন তাঁরা। গল্প আর ব্যবসা দুটোই এগিয়ে চলেছে এখনও পর্যন্ত কাঁচামাল আসে বাইরে থেকে । ভবিষ্যতে আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঙালির মননে, প্রয়োজনে- শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কে সি পালের ছাতাই একমাত্র ভরসা।