Breaking Bharat: নৌকা চড়ে গঙ্গায় প্রেম করতে গেলে প্রিন্সেপ ঘাট (Princep Ghat) কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না , তাই না? সুন্দরী কলকাতার স্থাপত্য সম্পর্কে কতটা জানি বলুন তো?
প্রেম করতে গেলে একটা ঠিকঠাক জায়গা তো দরকার তাই না? কিন্তু খাস কলকাতার বুকে, ইঁট কাঠ পাথরের জঙ্গলের মাঝে প্রেম করার জন্য ফাঁকা জায়গা পাওয়া যায়? সবাই বলেন গঙ্গার ধারে প্রেম করার নাকি একটা আলাদা আমেজ আছে। কিন্তু ফাঁকা গঙ্গার ধার কোথায় পাবেন? বাবুঘাট বা মিলেনিয়াম পার্ক সব জায়গা থেকেই হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশ্যে লঞ্চ চলাচল করে।
এই জায়গার ভাবনা যখন মাথা থেকে অনেকটা দূরে যাবে ,তখনই বাবুঘাট ছেড়ে আরো একটু এগিয়ে যাবেন আপনি। লক্ষ্য যখন দ্বিতীয় হুগলী সেতু, তখনই পাবেন। আহা! এত সুন্দর দেখতে তাকে চোখ ফেরানো দায়। যদি সেখানে যাওয়ার সময় হয় দেখবেন অনেক প্রেমিক মন ঘোরাফেরা করছে। বাদ নেই শিল্পীরাও কেউ আঁকছেন তো কেউ ছবি তুলছেন। এরই মাঝে টুক করে ঘাসের বনে বা প্রিন্সেপ ঘাটের বড় থামের আড়ালে চুটিয়ে প্রেম করা (Making love at Prinsep Ghat)।
প্রতিবেদনের শুরুতে কেমন একটা ভালোবাসা ভালোবাসা মেজাজ ছড়িয়ে পড়লো তাই না? আড্ডা মাত্র কয়েকটা দিন তারপর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব আসছে। পুজো এলে প্রেম আসবেনা তাই কি হয়? যখন বিকেল গড়িয়ে শহরের বুকে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসবে , চারিদিকে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখার জন্য, নিভৃতে নিরালায় প্রিয় সঙ্গীকে নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন এই প্রিন্সেপ ঘাটে।
প্রিন্সেপ ঘাট ইতিহাস (Princep Ghat ):
আজকেই যে ঘাট কে নিয়ে এত আলোচনা তার সূচনা কিন্তু ব্রিটিশ পিরিয়ডে। এই ঘাট তৈরি হয় আনুমানিক ১৮৪১ সালে, অর্থাৎ সিপাহী বিদ্রোহের কয়েক বছর আগে। ব্রিটিশদের বিভিন্ন জাহাজ থেকে মালপত্তর মূলত এই ঘাটেই ওঠানামা করত। জেমস প্রিন্সেপ – এর নামই এই ঘাট এবং স্মৃতিসৌধ (james prinsep ghat kolkata)।
অথচ অনেকেই তার বিষয় বিশেষ কিছু জানেন না। জেমস প্রিন্সেপ মাত্র ২০ বছর বয়সে ইংল্যান্ড থেকে এদেশে এসেছিলেন। এই শহরে মূলত তিনি চাঁদপাল ঘাটে নেমেছিলেন। তিনি চাকরি করতেন কলকাতার টাঁকশালে। প্রাথমিকভাবে তাকে সহকারী ধাতু পরীক্ষক হিসেবে কাজে রাখা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময় নানা স্থানে বদলি হয়েছেন তিনি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারত শাসন করছে, তখনই ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন জেমস। পড়াশুনা করতে করতে সম্রাট অশোকের শিলালিপির মধ্যে লুকিয়ে থাকা তথ্য উদ্ধার করেছিলেন প্রিন্সেপ।
প্রত্নতত্ত্ববিদ জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতেই মূলত এই নির্মাণ:
আসলে প্রাচীন লিপিগুলো মূলত গ্রীক এবং ব্রাহ্মণ লিপিতে লেখা থাকতো। আর এই দুটি ভাষা জানতেন সাহেব। সেদিক থেকে বিচার করলে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের জগতে একটা বড় অবদান রয়েছে তার, অস্বীকার করার উপায় নেই। যাকে নিয়ে কথা সেই ঘাটের কারুকার্য আর স্থাপত্য নিয়ে এবার একটু জানা যাক।
আরো পড়ুন- Uterus : হিস্টেরেক্টোমি বাড়ছে কেন? কর্পোরেট অফিসের চাপেই কি জরায়ু বাদ দিচ্ছেন মহিলারা?
ব্রিটিশ যুগে ঘাটটি নির্মিত হয়েছিল একথা আগেই বলেছি। প্রত্নতত্ত্ববিদ জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতেই মূলত এই নির্মাণ (This building is in memory of James Prinsep)। এই ঘাটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল প্যালাডিয়ান পোর্চ। এই স্থাপত্যের নকশা তৈরি করেছিলেন ফিজগেরাল্ড। প্রিন্সেপ ঘাট (Princep Ghat) কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটা। ঔপনিবেশিক আমলের গোড়ার দিকে যাত্রীবাহী জাহাজ থেকে ওঠানামার জন্য ব্যবহার করা হত।
আরো পড়ুন- Bapuji Cake : মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রিয় বাপুজী কেক, এই বাপুজী কেক আজও বাঙালির নস্টালজিয়া!
এই ঘাট ব্যবহার করা হতো। এখন ভাবতেও অবাক লাগে, পরাধীন ভারতে যত ব্রিটেন থেকে যত বড়লাট এসেছেন তাঁরা নেমেছেন এই ঘাটেই। নামকরা সেনাপতি থেকে শুরু করে বিশপ, বিচারপতিরা আবার এখান থেকেই জাহাজে করে নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।এই আলোচ্য প্রিন্সেপ ঘাট এর অবস্থান বোঝাতে গেলে, ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ওয়াটার গেট ও সেন্ট জর্জেস গেটের মাঝের জায়গাকেই ইঙ্গিত করতে হয়।
আরো পড়ুন- Home : ঝড় ঝাপটার মুখে আপনার বাড়ি? প্রকৃতির রোষানল থেকে কী করে বাঁচাবেন নিজের বাড়ি?
প্রিন্সেপ ঘাটের সৌন্দর্য (beauty of Prinsep Ghat) নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কবি, সাহিত্যিক, সিনেমার পরিচালক গায়ক গায়িকা, নায়ক নায়িকা, শিল্পী, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই এই জায়গায় একবার যেতে চান। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তকে দেখার একটা আলাদা মহিমা আছে। যদিও সকালে প্রিন্সেপ ঘাট সাধারণের জন্য খোলা থাকে না। তবে সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে একদিন প্ল্যান করতেই পারেন।