Breaking Bharat: মনীষী তালিকায় বিশ্বের দরবারে আজ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম কি আদৌ আছে? জুলাইয়ের শেষেই চলে গেছেন দয়ার সাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar), শেষ জীবনে কোথায় ছিলেন তিনি? বীরসিংহ গ্রামে জন্মাননি ঈশ্বরচন্দ্র?
দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর সম্পর্কে নতুন করে বলার মত কিছু নেই। তবে এই কথা অস্বীকার করতে পারেন না কেউই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা স্বামী বিবেকানন্দের মতো বরেণ্য মনীষী তালিকায় বিশ্বের দরবারে আজ বিদ্যাসাগরের নাম নেই। বাঙালির কাছে এটা শুধু অসম্মানেরই নয় লজ্জার বটে। এমনকি ছোট থেকে বড় হওয়া বিদ্যাসাগরের যে ইতিহাস জেনে তার অধিকাংশই ভুল বলছেন ঈশ্বর চন্দ্র গবেষকরা (ishwar chandra vidyasagar upsc)।
বর্ণপরিচয় এর জনক তিনি। কথা বা লেখা বাংলা ভাষা প্রয়োগ করে আজ যাই করি না কেন সবটা করার অধিকার বা পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি। অথচ তাকে নিয়ে নেই চর্চা। শুধু তাই নয় উনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকারের হাতলে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছিলেন যাঁরা তাঁরা অনেকেই আজ ব্রাত্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী (Ishwar Chandra Vidyasagar):
সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় কে মনে আছে? চেনেন আপনি? বলবেন হ্যাঁ, কিন্তু বলুন তো তাঁর জন্ম তারিখ? লজ্জার কথা যে উত্তর দিয়ে ভিরমি খাবেন বাঙালিরাও। আরেক সমাজ সংস্কারক পন্ডিত বিদ্যাসাগর। তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গেলে তার পদবীটুকু পর্যন্ত আজ ব্যবহার করা হয় না।
কী দুর্ভাগ্যজনক! আজ নারীর এত উত্থান ,রাস্তা করে গিয়েছিলেন ওই মানুষটি। কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের নিয়মে আটকে থাকার সমাজকে নতুন চিন্তবে জাগিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। নারী স্বাধীনতার সোপান সবার আগে তাঁরই কণ্ঠে শোনা যায়।
জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ ,তবে গ্রামের নাম বীরসিংহ নয় বীর সিংহা। আসলে সিংহের মতোই দৃপ্ত ছিল তাঁর তেজ তাই গ্রামের নামটা বদলে গেছে আপনা হতেই। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তারা নিজেদের শিক্ষা, সংস্কার, আন্তরিকতা, কঠোরতা, দয়ালুতা ও নিষ্ঠার জন্য প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যাঁর কারণে তিনি অমর।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন (ishwar chandra vidyasagar):
১৮৪১ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে প্রধান পন্ডিতের পদ লাভ করেন । তাকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় । এর আগে ১৮৩৯ সালে ল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিদ্যাসাগর ’ উপাধি লাভ করেন । সাগর উপাধি তার জন্য যথার্থই ছিলাে ।
বিদ্যার সাগর , জ্ঞানের সাগর , দয়ার সাগর , করুণার সাগর , মানবতার সাগর , প্রগতিশীলতার সাগর , বিবেকের সাগর সব বিশেষণই তার ক্ষেত্রে যথাযথ ও সুপ্রযােজ্য । যদি বলা হতাে ব্যক্তিত্বের সাগর , বােধ করি তা – ও অপ্রযুক্ত হতাে না । বােধােদয় , বর্ণপরিচয় , কথামালা , চরিতাবলী , ঋজুপাঠ প্রভৃতি ।
বাংলাভাষায় বলসঞ্চার , সংস্কৃত বাহুল্য মুক্তির জন্য বেতাল পঞ্চবিংশতি , শকুন্তলা , সীতার বনবাস প্রভৃতি রচনা করেন তিনি। এছাড়াও রঘুবংশ , সর্বদর্শ সংগ্রহ , কুমারসম্ভব , কাদম্বরী , মেঘদূত , উত্তররামচরিত , অভিজ্ঞান শকুন্তলম প্রভৃতি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ।
মায়ের প্রতি টান, নারীর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ মনোভাব – এই সবটাই আধুনিক যুগেও পুরুষের উচিত তাঁর থেকে শিখে নেওয়া। সমাজ সংস্কারেও তার অনন্যসাধারণ ভূমিকা বাঙালী জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । তার একাগ্র ও অনলস প্রচেষ্টায় বিধবাবিবাহ আইন প্রণীত ও প্রচলিত হয় ।
হিন্দু বিধবা নারীদের কাছে তিনি এক মহামানব স্বরূপ । তিনি নিজ পুত্রকে দিয়ে প্রথম বিধবা বিবাহ করান । দুস্থ মহিলাদের সেবা – সহায়তা দিয়ে বাঁচানাের জন্য । তিনি হিন্দু ফ্যামিলি এ্যানুয়িটি ফান্ড ’ গঠন করেন স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনের ব্যবস্থাও করেন । নারীর জীবন বদলে দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন- Love Relation: প্রেমে পড়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছেন? এবার!
স্ত্রী শিক্ষা প্রসারে এনেছিলেন বিপ্লব। সেদিনের সেই পদক্ষেপ করার সময় তার বিরোধী ছিলেন অনেকেই। কিন্তু তিনি যখন সংকল্প করতেন সেদিন সম্পূর্ণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়তেন না। মাতৃভক্তির জন্যও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবদন্তী হয়ে আছেন । তিনি চিরদিন কুসংস্কার , গোঁড়ামি আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আপােসহীনভাবে লড়াই করে গেছেন ।
বিদ্যাসাগরের অজানা তথ্য (Ishwar Chandra Vidyasagar):
বাঙালী জাতি সর্বপ্রথম বড় হবার , যােগ্য হবার , মানবিক হবার , আধুনিক হবার , প্রগতিশীল হবার ও বিশ্বজনীন হবার সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিলাে বিদ্যাসাগরের মধ্যে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্বন্ধে বলেছেন— “ তিনি । হিন্দু ছিলেন না , বাঙালী বা ব্রাহ্মণ ছিলেন না , ছিলেন ‘ মানুষ ।
আরো পড়ুন- A. P. J. Abdul Kalam : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম তার সম্বন্ধে কতটা জানেন?
এই মন্তব্যের তাৎপর্য অতলস্পশী । কারণ কারাে যথার্থ মানুষ হওয়া অতাে সহজ নয় । রবীন্দ্রনাথ আরাে বলেছেন — তাহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয় বট তিনি বঙ্গভূমিতে রােপণ করিয়া গিয়াছেন , তাহার তলদেশ জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে ।
ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় যে তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি কী করেছিলেন, কোথায় ছিলেন খোঁজ রাখেন না কেউ। আপনি জানেন কারমাতা নামের এক স্থানে নিজের জীবনের শেষ ষোল সতের বছর কাটিয়েছিলেন
আরো পড়ুন- বিদ্যাসাগর। Kalnagini : কালনাগিনীর ছোবল! লখিন্দরের মৃত্যুর কারণ যে সাপ,সে আসলে নিরীহ?
আজও সেই জায়গা বাঙালির অগোচরে থেকে গেছে। তবে ভুলি নি আমরা। অনুরোধ রইল আপনার কাছে নিজের দর্পণে দেখে বিদ্যাসাগর কে চিনুন। আর সমাজকে দেখান বিদ্যাসাগরের আদর্শের দর্পণ।