Breaking Bharat: টাইটানিক (Titanic) কি শুধুই জাহাজ নাকি না ভুলতে পারা এক স্মৃতির ক্ষতচিহ্ন? ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় পড়া জলে জাহাজ চলে শব্দগুলো এখনো মনের মাঝে বিধে আছে। কারণ যে জাহাজটাকে নিয়ে অনেক আশা-ভরসা ছিল সে জাহাজটা জলে ডুবে গেছে। আর একরাশ ক্ষতচিহ্ন বুকে চওড়া দাগ হয়ে রয়ে গেছে আজও। এক কথায় বোধহয় সলিল সমাধি শব্দটাকে জাস্টিফাই করেছিল টাইটানিক জাহাজ (Interesting facts about the Titanic)।
চারটি কম্পার্টমেন্ট যদি সম্পূর্ণভাবে জলে ভরেও যেত তাহলে দিব্যি ভেসে যেতে পারতো টাইটানিক। কিন্তু দুর্ভাগ্য বোধ হয় এভাবেই আসে তাই আরো একটা কম্পার্টমেন্ট জলে ভরে গেল আর সেটাই বোধহয় কাল হল টাইটানিকের ভাগ্যে। কথায় কথায় স্মৃতিচারণায় আজ টাইটানিক।
টাইটানিক কি শুধুই জাহাজ?
টাইটান গ্রিক পুরাণের শক্তিশালী দেবতা। এই জাহাজ তৈরির সময় সেই কথাকে মাথায় রেখেই নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ারদের বিশ্বাস ছিল এই জাহাজ এতটাই শক্তিশালী হবে যা গোটা বিশ্বের কাছে নিদর্শন হয়ে থাকবে। মানুষের হাতে তৈরি শ্রেষ্ঠত্বের বিরল উপাদান হয়ে ওঠা টাইটানিক যেভাবে অবিশ্বাস্য এক পরিণতিতে ধ্বংস হল সেটা আজও ভাবলে শিউরে ওঠে সকলে।
ছোট করে টাইটানিক নামে ডাকলেও পুরো জাহাজটির নাম ছিল ‘রয়্যাল মেল স্টিমার টাইটানিক’ সংক্ষেপে আরএমএস টাইটানিক। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯১২ প্রায় ৫ বছর ধরে চলে এই জাহাজের নির্মাণ কাজ। ব্রিটেনের বেলফাস্টের হারল্যান্ড & ওলফ্ শিপইয়ার্ডে, হল্যান্ডের ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে তৈরি হলো টাইটানিক।
দৈর্ঘ্যের হিসেবে তিনটে বড় ফুটবল মাঠের সমান এই ‘টাইটানিক‘। সেযুগে দাঁড়িয়ে আধুনিক প্রযুক্তির বিপুল সমাহার টাইটানিকের অন্দরে লক্ষ্য করা যায়। সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াস কোর্ট, তুর্কিস বাথ, ব্যয়বহুল ক্যাফে – কী নেই? ফার্স্ট ক্লাস আর সেকেন্ড ক্লাসের যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশাল লাইব্রেরীর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল।
আরো পড়ুন – অভিনয় না করেও বলিউডের মালাইকা আরোরা কি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করে?
নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ মার্কিন ডলার। ৬০ হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জাহাজটি যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন কেঁদেছিল গোটা বিশ্ব। পরবর্তীকালে একটা সিনেমা তৈরি করে সে ঘটনার কিছুটা বিবরণ দেয়ার প্রচেষ্টা হয়েছিল বটে কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরো ভয়ংকর আরো বিভীষিকাময়।
ফার্স্ট ক্লাস হোক বা সেকেন্ড ক্লাস যাত্রীদের সুবিধার জন্য লিফট এর ব্যবস্থা ছিল প্রতিটি শ্রেণীতেই। ফার্স্টক্লাস এর জন্য প্যাকেজ ছিল আজকের হিসেবে প্রায় ৯৫ হাজার ৮৬০ ডলার। তাহলেই ভাবুন কাদের চড়ার ক্ষমতা ছিল এই জাহাজে। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল, ইংল্যান্ডের সাইদাম্পটন নৌঘাঁটি থেকে প্রথম প্রমোদযাত্রা শুরু করেছিল টাইটানিক, গন্তব্য ছিল নিউইয়র্ক।
আরো পড়ুন – তালা আবিষ্কার! তালা চাবি ব্যবহার করেন নিশ্চয়ই, তবে উৎপত্তি কীভাবে জানেন?
টাইটানিকের যাত্রা পথের সামনে বিশাল ভাসমান বরফখন্ড আছে এমন সংকেত পেয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিন দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন বটে। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ আরেকটি জাহাজ রেডিও বার্তা তে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিল টাইটানিককে।
এছাড়াও আরও একটি জাহাজ সতর্ক করলেও রেডিও বার্তার দায়িত্বে থাকা জ্যাক এবং হ্যারল্ড এই তথ্য মূল কেন্দ্রে প্রেরণ করেন নি। রাত এগারটা চল্লিশ এ যখন আইসবার্গ দেখতে পেল টাইটানিক তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আইসবার কি ধাক্কা খেয়ে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ চিড়ে যায়।
আরো পড়ুন – ‘বাঘের মাসি বিড়াল’কে ভালোবেসে আদর করে পোষ্য করে রাখেন কেন?
জল ঢুকতে শুরু করে একের পর এক ডিপার্টমেন্টে, আর পাঁচটা কম্পার্টমেন্ট জলে ডুবে যাওয়ায় ভার ক্রমশ বাড়তে থাকে।। নিকটবর্তী বেশ কিছু জাহাজে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয় ,সংকেত মিলে ছিল বেশ কিছু জাহাজের থেকে। মধ্যরাতে প্রায় বারোটা নাগাদ লাইফ বোট নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুটো কুড়ির মধ্যে আটলান্টিকের অতলে চিরকালের মত তলিয়ে যায় টাইটানিক।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয় ১৯৮৫ সালে। ২০১২ সালে টাইটানিক জাহাজের ডুবে যাওয়ার ১০০ বছর পর, ধ্বংসাবশেষকে ‘ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আজও রয়েছে অনেক রহস্য ,আজও হয়তোবা না জানা অনেক গল্প হয়ে যাওয়া টাইটানিকের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে যা উদ্ধার হবে না আর কোনদিন।