Breaking Bharat: তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। আর সেই গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী। তিনি ইলা মজুমদার (Ila Majumder)। আজ তার কথাই বলছি আপনাদের। ইঞ্জিনিয়ার মানেই কি একজন ছেলেকেই মনে হয়? মহিলা ইঞ্জিনিয়ার কেন নয় বলতে পারেন?
স্বাধীনতার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ একটু একটু করে নিজেকে সেরার আসনে বসাতে সক্ষম হয়েছে। মেধা হোক বা কঠোর পরিশ্রম বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছেন বঙ্গ সন্তানরাই। আজ আপনাকে পরিচয় করাব এমন এক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যিনি প্রযুক্তি বিদ্যার ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন।
সময়টা স্বাধীনতার কিছু পরেই ওই বছরে। প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যয়নে তখন পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। পশ্চিমবাংলার পশ্চিমবাংলার তৎকালীন নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দরজা খুলে দিলেন মহিলাদের জন্যে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুইজন ছাত্রী।
একজন পড়াশোনাকে আর এগিয়ে নিয়ে গেলেন না। অপরজন অটুট জেদ আর ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ১৯৫১ সালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেন। তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার (Bengal’s first engineer)। আর সেই গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী। তিনি ইলা মজুমদার (Ila Majumder)। আজ তার কথাই বলছি আপনাদের।
আজকের দিনে নারী পুরুষ সমান সমান ভাবধারা চারপাশে মুখরিত হয়েছে। সুযোগ বেড়েছে নিজেকে প্রমাণের। কিন্তু ইলা মজুমদার এর সময়কালে সেই অবকাশ ছিল না। ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে ইলার জন্ম।
বাবা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা ছিলেন গৃহবধূ। যতীন্দ্রবাবু ছোট থেকেই মেয়ে বলে সংস্কারের বেড়াজালে ইলাকে বাঁধেন নি। বরং মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলেন। ১২ বছর বয়সেই ইলা সাইকেল চালাতে পারত। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জিপ চালানো শিখে ফেলেন তিনি।
খুলনায় নবম শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করে ১৯৪৫ সালে ইলাদের পরিবার কলকাতায় চলে আসে। সেই বছর ইলা স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তি হন পরের বছর। দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে। সেখান থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি তে উত্তীর্ণ হন।
স্বপ্ন ছিল আলাদা কিছু করার। তাই লক্ষ্য পূরণ করতে এরই মধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইলা ভর্তি হন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (Bengal Engineering College)। প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম দরকার বলে অধ্যক্ষ তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেন। শেষে ইলা ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তিনি ডাক্তারি পড়ার সুযোগও পেয়েছিলেন কিন্তু যাননি। তিনিই ছিলেন ওই কলেজের প্রথম মহিলা ছাত্রী তথা বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। ছাত্রদের মাঝে একা ছাত্রী। প্রাথমিক অসুবিধা থাকলেই সবটাই কাটিয়ে ওঠেন তিনি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পুলিন বিহারী ঘোষ এই সময় তার পাশে দাঁড়ান।
কলেজে তিনিই ছিলেন ইলার অভিভাবক। ১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হলেন ইলা। তারপর ট্রেনিং করতে সোজা গ্লাসগো যাওয়া। ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন। তিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারী যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানায় কাজ করেছেন। সেই সময় ইলা থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে।
ওখানে ছয় মাস চাকরি করার পর দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার ছিলেন তিনি। কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
আরো পড়ুন- What is knowledge? জ্ঞান কাকে বলে? তবে কি ডিগ্রি অর্জন করতে পারলেই হবে?
ইলা মজুমদার ছিলেন ওই কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল। ১৯৮৫ তে জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি সাফল্যের সঙ্গেই কাজটি সম্পন্ন করেন।
আরো পড়ুন- শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারীর তালিকা! সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় নারী। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কোন নারীরা ?
এতদূর পড়ার পর এবার কী মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে যে লড়াই করে চলেছেন নারীরা,সেই লড়াইয়ের উদ্বোধন হয়ে গেছিল অনেক আগেই। ইলা মজুমদার ছিলেন ব্যতিক্রমী এক মহিলা। পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোয় এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আসলে আমরা সবাই ইতিহাস হয়ে যাই একটা সময়ের পরে, তবে ইলা ইতিহাস তৈরি করেছিলেন ।