Breaking Bharat: প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচ্যের হয়ে আমাদের দেশ একের পর এক স্থাপত্য কীর্তির দাবিদার। পড়াশোনা হোক বা সংস্কৃতি , ভারত সবসময়ই এগিয়ে। আজকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরিকাঠামো শিক্ষাব্যবস্থা সবদিক দিয়েই সেরার সেরা যে বিশ্ববিদ্যালয় তার নাম নালন্দা (Nalanda University)। আজ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যেতে পারেনি কেউই।
ভারতের সেই ঐতিহ্যবাহী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস (History of Nalanda University) এবং পঠন-পাঠন, স্থাপত্য আজ আমাদের আলোচনায়। ইতিহাসের পাতায় কয়েকটা লাইন পড়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কে চিনে ওঠা প্রায় অসম্ভব। চলুন অতীতে ফিরে বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় একবার ঘুরে আসা যাক।
আপনি কি জানেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় দিনগুলিতে এখানে ১০,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী এবং প্রায় ২০০০ জন শিক্ষক তথা অধ্যাপক ছিলেন। মানে গড় অনুপাত করলে ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতি একজন শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতটা এলাকাজুড়ে ক্যাম্পাস থাকতে পারে? ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় নালন্দার ৮টি আলাদা ক্যাম্পাস এবং ১০ টি মন্দির ছিল, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রার্থনাকক্ষ এবং ক্লাসরুম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ৯ তলা লাইব্রেরি ছিল।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি তে কতগুলি বই থাকতে পারে বলে আপনার ধারণা? নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত পান্ডুলিপির সংখ্যাটা জানলে চোখ কপালে উঠবে। প্রায় ৯০ লক্ষ পাণ্ডুলিপি সহ কয়েক মিলিয়ন বই ছিল। আর এই সংখ্যাটা তৎকালীন সময়ের,তাহলে তো বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই কী বিশাল আকার লাইব্রেরী ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে (nalanda university is famous)।
কেবল ভারতই নয়, কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইরান, গ্রীস, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য অনেক দেশের শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসতেন বলে জানা যায়। সেই সময় সাহিত্য, জ্যোতিষশাস্ত্র, মনোবিজ্ঞান, আইন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, যুদ্ধ, ইতিহাস, গণিত, স্থপতি, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনৈতিক, এমনকি ওষুধপত্র নিয়েও এখানে পড়াশোনা হত। মেন গেট থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ছিল। চারিদিক মাঠ দ্বারা পরিবৃত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। তাহলে সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চয়ই একটা ধারণা করতে পারছেন। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিয়ন ছিল যারা নানা রকমের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি হল ছিল যেখানে অনুষ্ঠান করার সুযোগও ছিল।আটটি বিশাল বিল্ডিং, দশটি মন্দির, প্রার্থনা হল এবং ক্লাসরুম ছাড়াও এই কমপ্লেক্সটিতে সুন্দর বাগান এবং হ্রদও ছিল। বিদেশ থেকে এসে পড়াশোনা করার জন্য, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সুবিধাও ছিল।
আরো পড়ুন- Kamrup Kamakhya Temple : সতীপীঠের ৫১ পীঠের এক পীঠ কামরূপ কামাখ্যা নিয়ে আলোচনা কেন?
আরো পড়ুন- Bathroom on the go : ঘুরে বেড়াতে গিয়ে কখনও বাথরুম পেয়েছে ? কী করা যায় এই ক্ষেত্রে?
খাওয়া পরা, ওষুধপত্র কোনও কিছুরই সমস্যা ছিল না। প্রায় ৮০০ বছর অস্তিত্বের পরে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১৯৩ সালে ধ্বংস করা হয়। বখতিয়ার খিলজির অধীনে তুর্কী মুসলিম হানাদারদের দ্বারা নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা যায়। শুধু তাই নয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার পর প্রায় ছয় মাস ধরে লাইব্রেরীর সমস্ত বই পুড়তে থাকে বলে জানা যায় (nalanda university reconstruction)।
আরো পড়ুন- Why feel shamed? ইস কী লজ্জা! আহা শুনতে কতই না সোহাগ জাগে, কিন্তু লজ্জা কেন লাগে?
তবে সব শেষ হয় না বোধহয় কিছু শুরুর ইঙ্গিত থেকেই যায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। প্রায় ৮০০ বছর পর পুনরায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চালু করা হয়েছে এবং সেখানে রীতিমতো একাডেমিক পড়াশোনা শুরু হয়েছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আবার হারানো গৌরব ফিরে পাবে নালন্দা আবার হয়ে উঠবে সেরার সেরা।