Breaking Bharat: ‘ফাঁসি’ শব্দটা শুনলেই আঁতকে ওঠেন তাই না? সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয় আদৌ কি তাই বলে জেল ম্যানুয়াল ?
জীবন সবার বড্ড প্রিয়। তাই তো বলে ,
“মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই “
কিন্তু চোখের সামনে যখন জানতে পারেন যে এই দিনেই জীবন শেষ হয়ে যাবে, তখন কি আর বাকি দিনগুলোই একটু একটু করে বেঁচে থাকা যায়? এতগুলো কথা বলার কারণ আজকে আমরা যে ফাঁসি শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হব সেটাও মৃত্যুর অপর নাম।
আচমকা মৃত্যু বা রোগীর রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর সঙ্গে পার্থক্যটা কোথায় বলুন তো? আপনি হয়তো জানেন আগামীকালের পর আপনি আর কোনদিন এই পৃথিবীর সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন না। ঠিক সেই কারণেই কি এই ধরনের সাজা প্রাপ্ত আসামিদের অন্তিম ইচ্ছা জানতে চাওয়ার কথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়? বাস্তবে কি এমনটা ঘটে?
সিনেমা বা মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে ফাঁসি দেবার আগেই তার অন্তিম ইচ্ছে জানতে চাওয়া হয় বলে দেখানো হয়েছে, সেটা কতটা আইন সম্মত আর কতটা মানবিক। ঠিক এই জায়গায় আপনাদের জানাই যে জেলের ম্যানুয়ালে অন্তিম ইচ্ছে ব্যাপারটা কোথাও কোনও উল্লেখ নেই বলেই সূত্র মারফত জানা যায়।
শুনতে হয়তো কঠিন লাগে কিন্তু একজন মানুষকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনত অনেক নিয়ম মানতে হয়। বলা যেতে পারে যে দিন আদালত থেকে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়, ঠিক সেই দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যায় জল্লাদের।
প্রশ্ন এক, ফাঁসির সময়ে কারা উপস্থিত থাকতে পারেন?
উত্তর: ফাঁসির সময়ে জল্লাদ অবশ্যই থাকবেন কারণ তাকে ছাড়া গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।এবার সঙ্গে জেল সুপারিনটেনডেন্ট, ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং অবশ্যই মেডিক্যাল অফিসাররা উপস্থিত থাকেন।
মেডিক্যাল স্টাফ না থাকলে ফাঁসি হয় না কারণ তিনি মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেন। মৃত্যু-পরোয়ানায় সই করার জন্য জেলা আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেটও থাকেন। এবার যদি আসামি চায় তবে তার ধর্মের প্রতিনিধি (আত্মীয় নন) সেখানে থাকতে পারেন। এটার বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রশ্ন দুই, ফাঁসি কী ভাবে দেওয়া হয়?
উত্তর : এই প্রক্রিয়ার জন্য যে দিন আসামিকে ‘ফাঁসি’ দেওয়া হবে, তার ঠিক একদিন আগে ফাঁসিকাঠ পরীক্ষা করা হয়। একটি ডামি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেখা থেকে শুরু করে যার ফাঁসি হবে তার শারীরিক দৈর্ঘ্য এবং ওজন অনুসারে ফাঁসিকাঠ থেকে নিচে কতটা গভীর গর্ত খোঁড়া প্রয়োজন সেটা ঠিক করে নেওয়া হয়। এই দায়িত্বে থাকেন মেডিক্যাল অফিসাররা।
সিনেমার মতোই ‘ফাঁসি’ দেওয়ার আগে অপরাধীর মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। কোনও ভাবেই যাতে আবেগের বশবর্তী হয়ে উপস্থিত কেউ আইন অমান্য করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন তাই শেষ অবস্থায় আর আসামির মুখ দেখানো হয় ফাঁস আগে থেকেই তৈরি করা থাকে এবং কাপড়-ঢাকা অবস্থায় আসামির গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়।
এর পর জেল সুপারিনটেনডেন্ট এর সঙ্কেত দেওয়ার অপেক্ষা। ব্যাস সেটা পেলেও ‘ফাঁসিকাঠের নিচের পাটাতন’ খুলে দেওয়া হয়। এবার জল্লাদ লিভারে টান দিলে দেহটি ঝুলে পড়ে। মেডিক্যাল মতে ‘ফাঁসিকাঠে‘ দেহটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। মৃতের দেহ পরিবারকে দেওয়া হবে কি না, সেই সব কিছুই প্রশাসন ঠিক করে।
প্রশ্ন তিন, ভোরবেলাতেই কেন অপরাধীদের ফাঁসির দেওয়া হয়?
উত্তর : আমরা সবাই জানি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা ভারতীয় দণ্ডবিধির সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ফাঁসি।সূর্যোদয়ের আগে অপরাধীদের ফাঁসিকাঠে চড়ানোর পেছনে কিন্তু এক নয় একাধিক কারণ আছে।
প্রথম: আইন অনুসারে ফাঁসির জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেকগুলি নিয়ম মানতে হয়।
আরো পড়ুন – শিকাগো স্মৃতির ঐতিহ্য! কিন্তু সেই শহরের হঠাৎ ‘কসাইখানা’ নাম হল কেন?
নানা নথিপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে লেখালেখির একাধিক কাজ করতে হয়। সূর্যোদয়ের আগে পুরো ব্যাপারটা মিটে গেলে জেলের দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে।
দ্বিতীয়: ফাঁসি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অনেকে এই শাস্তির বিরোধিতা করেন। ঝামেলা এড়াতে ভোরেই জেল এই কাজটি করতে চায়।
আরো পড়ুন – ডেকান ওডিসি! রেলগাড়ি চড়তে কত খরচ হতে পারে? এক রাতের ভাড়া ১১ লক্ষ টাকা হতে পারে?
তৃতীয়: মৃত্যু নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে মনে করা হয় যত দেরি হবে যার শাস্তি হবে তার মানসিক চাপ বাড়বে।
চতুর্থ: ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর কয়েক ঘন্টা পর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রেই। ফাঁসি সূর্যোদয়ের আগে হলে পরিবারের তরফেও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়াকর্ম এর জন্য অনেকটা সময় থাকে বলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন – ‘স্টেগনোগ্রাফি’ বলতে আপনি কী বোঝেন? প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে জড়িত এই বিদ্যা কোন কাজে লাগবে আপনার?
প্রশ্ন চার, ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?
উত্তর: মৃত্যু কষ্টের কিন্তু যতটা যন্ত্রণা কম দেওয়া যায় সেটাই লক্ষ্য। ফাঁসির দড়ি নরম আর মসৃণ করার জন্যে পিচ্ছিল পদার্থ লাগানো হয় তাই মোম, সবরি কলা, তেল, ঘি ইত্যাদি ব্যবহার করার রীতি আছে।