Breaking Bharat: সর্বনাশা গেমের নেশা আপনাকে সন্তানের থেকে দূরে সরাচ্ছে না তো? সতর্ক হোন (Game addiction)! মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন? আপনার বাড়ির সন্তান সারাক্ষণ কল্পনার জগতে বিচরণ করছে? নিজের সন্তানকে বাঁচাবেনই কি করে?
এই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সম্পর্ক সন্তান আর বাবা-মার মধ্যে। এই সম্পর্কের বন্ধন অটুট। যেন এক আলাদা বন্ধুত্ব থাকে এই সম্পর্কের ভিতের মধ্যে। হবে নাই বা কেন, এ যেন সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টির মেলবন্ধন। বিজ্ঞান বলবে বংশ, প্রকৃতি, সমাজ এভাবেই এগিয়ে যায়।
কিন্তু শুধুই বংশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়, সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের দৃঢ়তা একটা আলাদা পৃথিবী সৃষ্টি করে। কিন্তু আজকের দিনে এই সমীকরণটা পাল্টে যাচ্ছে। কাজের তাগিদে সময়ের অভাব ঘটছে প্রতিটি সম্পর্কে। তার আসল গুনছে এই সমাজ। দূরত্ব বাড়ার কারণে ঘটছে সর্বনাশা কান্ড, যা শুনলে শিউরে উঠবেন আপনি!
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?
যতদিন যাচ্ছে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছি। ডিজিটাল যুগে আজকাল সবকিছুর জন্য ভরসা ইন্টারনেট। ছোটবেলায় পড়া রচনার কথা মনে আছে, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? এটাই এখন ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নেট দুনিয়ায় কত কী ঘটে তার বিন্দুমাত্র ধারণা করতে পারবেন না।
টনক নড়ে তখন, যখন সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে যায় আপনার আমার পরিবারে। আর এর কারণ হিসেবে সবার আগে যে নামটা উঠে আসে তা হল অনলাইনে গেম এর আসক্তি (Addiction to online games)। আজকের দিনে এটা শুধু একটা রোগ নয় , মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে। একটা গানের লাইন তুলে ধরতে ইচ্ছে করছে, ” ডাকছে আকাশ ডাকছে বাতাস ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস, ও ছেলেরা খেলা ফেলে, শুধুই কেন পড়তে যাস?”
শিশু মন শুধুই কি পড়াশুনায় আটকে থাকতে পারে?
প্রতি মুহূর্তে এমনটাই ঘটছে। আসলে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা এখন অতীত। সবুজ মাঠ নেই আর সেই মেজাজটাও হারিয়ে গেছে। কিন্তু শিশু মন শুধুই কি পড়াশুনায় আটকে থাকতে পারে? স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে তো একটা কথা আছে। ব্যাস অনলাইন দৈত্য এখানেই থাবা বসালো। বাবা মা ও দেখলেন বেশ তো!
একটা যন্ত্র আর একটা কানেকশন ছেলে মেয়েকে ঘরের মধ্যে কোন দুষ্টুমি ছাড়াই নিজের মতো থাকতে দিচ্ছে। অতএব সাধুবাদ জানালেন অজান্তেই সর্বনাশা দৈত্যকে। শহরের ইট, পাথর আর কংক্রিটের আড়ালে আটকা পড়ছে শিশুদের রঙিন শৈশব (Children’s colorful childhood)। গ্রামের শিশুরা খেলাধুলোর কিছুটা সুযোগ পেলেও শহরের শিশুদের সেই সুযোগ কম।
মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন?
বড়দের মতো শিশুদের মধ্যেও ভর করছে শহুরে যান্ত্রিকতা। ফলে তারা খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে মাউসের বাটন টিপে, কম্পিউটারের পর্দায় গেমস খেলে, কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। ধীরে ধীরে তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কম্পিউটার-মোবাইল-ট্যাব গেমসের ওপর (Children Addiction to online games)।
শৈশব আর শিশুর সারল্য হারিয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। বেশিরভাগ পরিবারে বাবা-মা দু-জনেই কর্মব্যস্ত। উভয়েই ছুটছেন ‘কেরিয়ার ও সফলতা’ নামক সোনার হরিণের পিছনে। এদিকে সন্তান বড় হচ্ছে প্রায় একা একা। অনেক অপরিণামদর্শী অভিভাবকই শিশুকে খাবার খাওয়াতে, তার কান্না থামাতে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন।
ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় চারের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপর সাত ও আটের দশকের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছয়। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেম-এর নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস।
এরপর অ্যাটারি কোম্পানি বাজারে আনে বিখ্যাত গেম পং। তারপর ধীরে ধীরে অ্যাটারি, কোলেকো, নিনটেনডো, সেগা ও সোনির মতো ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো নানা উদ্ভাবন ও প্রচার চালিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর আনাচকানাচে মানুষের ঘরে পোঁছে দেয় পুঁজিবাদী সভ্যতার এই বিনোদন-পণ্য।
নিজের সন্তানকে বাঁচাবেনই কি করে? (Game addiction):
আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকে (Plays video games)। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে অল্পবয়সি শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। এদের দৌলতে গ্লোবাল ভিডিও গেম বাজারের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৮.৯০ মিলিয়ন ডলার!
এর মধ্যে ‘মোবাইল গেমিং’-ই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আয় করা সেক্টর। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে গেমিং প্রতি বছর ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুঝতে পারছেন কি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ? বাঁচবেন কি করে? নিজের সন্তানকে বাঁচাবেনই কি করে?
আরো পড়ুন- Raghu Dakat : অত্যাচারী জমিদার-মহাজনদের ত্রাস, চিনুন গরিবের রবিনহুড রঘু ডাকাতকে!
যে প্রশ্নগুলোকে খুব কঠিন বলে মনে হয় আসলে তার উত্তর সহজ আর সরল হয়। সেটা ছোটবেলার পড়াশোনার বই হোক বা বড় বেলার জীবনের বই। সন্তান যখন আপনার এই পৃথিবীতে তাকে এনেছেন তাই দায়িত্ব পালন আপনাকেই করতে হবে। আপনার সন্তানকে ব্যস্ত রাখার জন্য মোবাইল কখনোই আপনার জায়গা নিতে পারে না।
আরো পড়ুন- People : আজকের দিনে ভাল মানুষের বড় অভাব, সৎপথে চলতে বড়ই কষ্ট হয়! কি করবেন ?
জানি আপনার কাজের প্রচুর চাপ তবুও সন্তানের থেকে বড় কিছু হয়? ওদের জন্যই তো এইসব? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও ভার্চুয়াল মিডিয়ামে আসক্তির ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা কমে আসে, শিশু-কিশোরেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন- Temple : পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে যাব পুজো দিতে কিন্তু সেখানেও বিধি নিষেধ! বিশেষ পোশাক? কেন?
ভিডিও গেমের প্রতি কম সময় ব্যয় করা সম্ভব হলে, সম্পূর্ণভাবে এই গেমিং থেকে সরে এলে তবেই ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একটু সময় দিন, মাঠে খেলার সুযোগ না থাকলে বাড়ির ছাদে অথবা উঠোনে কিংবা রাস্তায় হাত ধরে বেরিয়ে পার্কে যান । এখন তো প্রচুর পার্ক , গঙ্গার ধারে ছিমছাম পরিবেশে যেতে পারেন কিংবা কোনও এক্সিবিশনে নিয়ে যান আপনার সন্তানকে।
আরো পড়ুন- Ice Cream : আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন? আহা! কী করে,কোথা থেকে এল আইসস্ক্রীম ?
তাতে হয়তো আপনার শারীরিক বিশ্রাম একটু কম হবে কিন্তু মানুষের পরিতৃপ্তি ,কোয়ালিটি টাইম দারুন ভাবে কাটবে। মন্দিরে যান, নিজের দেশের সংস্কৃতির কথা জানান সন্তানকে সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ করুন। ছোটবেলার ঘরের কোণে বসা খেলা গুলোকে ফিরিয়ে দিন না তার জীবনে।
কবিতা গল্প ছড়া গানে তাকে সংস্কৃতিমনস্ক করে তুলুন। অচড়ি মোবাইলের গেমি নয় আপনার ভালোবাসার প্রেমে পড়বে সে। তবেই না মা-বাবা আর সন্তানের বন্ধন!