Breaking Bharat: জুয়াড়ি দের নিরাপত্তা দেয় পুলিশ? মহিলাদের জুয়া খেলার মেলা সম্পর্কে কিছু জানা আছে? মেলা মানেই মিলন ক্ষেত্র। কিন্তু এ কেমন জায়গা, যেখানে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা হয় ? মনে প্রশ্ন জাগছে তো আর নিশ্চয়ই ইচ্ছে করছে দেখার , চলুন যাই।
মালদহের মোকাতিপুরে বেহুলা নদীর তীরে এক বিশেষ মেলা হয় মুলো ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে। শান্ত নদীর তীরে আমগাছের নিচে বিস্তৃত মেলা। সঙ্গে পুজো আর দিনভর চলে জুয়া খেলা।
মেলায় অবাধে জুয়া খেলছেন মহিলারা:
মালদহ জেলার উল্লিখিত মেলার ইতিহাস সুপ্রাচীন। অদ্ভুতুড়ে মেলা বললেও কম বলা হবে না। এখানকার মানুষের ধ্যান জ্ঞান হল জুয়া। মানে ছোট থেকে বড় সকলের মন প্রাণ জুড়ে শুধুই আছে জুয়ার রাজত্ব। সবথেকে আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল গ্রাম্য ক্যাসিনোর পাহারায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ স্বয়ং।
বিশাল আম বাগান জুড়ে চলে খেলা। সকাল হতে না হতেই শুরু বিভিন্ন রকমের জুয়া খেলা। মানে মেলার মাঠে যার যেখানে পছন্দ নিজের ইচ্ছেমতো জুয়া খেলতে বসে যাওয়া যেতেই পারে। মুলো ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে মালদহের মোকাতিপুরে বেহুলা নদীর তীরে আয়োজিত এই মেলাকে স্থানীয়রা জুয়াড়ি মেলা বা লেউড়ির মেলা নামে ডেকে থাকেন।
আটপৌরে বাংলার বুকে এই ধরনের এক মেলার এমন স্বাভাবিক চিরাচরিত দৃশ্য ভাবতেই পারেন না অনেকে। প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছিল আজও একই ভাবে চলে আসছে এই রীতি। এমনকি জমজমাট জুয়ার রমরমা দেখে কার্যত তাজ্জব হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না আপনার।
প্রকাশ্যে জুয়া খেলেন মহিলারাও:
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহু প্রাচীনকালে মহিলারা দূর থেকে এই স্থানে পুজো দিতে আসতেন। তবে তারা একা আসতেন না সঙ্গে আসতেন কিছু পুরুষ, কারোর স্বামী, বা ভাই কিংবা আত্মীয়। মহিলারা সারাদিন পুজোর আয়োজন করতেন, স্নান করতেন। কিন্তু এতটা ফাঁকা সময় থাকায় পুরুষসঙ্গীরা মাততেন জুয়া খেলায়। কিন্তু এর অপর মতের সঙ্গে আছে মঙ্গল কাব্যের যোগ।
বেহুলা লখিন্দরকে নিশ্চয়ই মনে আছে? অনেকে বিশ্বাস করেন লেউড়ির মেলার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে প্রাচীন বেহুলা নদী। এবং মনসামঙ্গল কাব্যে যে যাত্রার কথা লেখা আছে অর্থাৎ বেহুলা তাঁর মৃত স্বামী লখিন্দরকে ভেলায় করে এই পথে এই নদীর উপর দিয়েই নিয়ে গিয়েছিলেন ।
সেই থেকেই নদীর এমন নাম। যদিও এই মতবাদ বা বিশ্বাসের সত্যতা যাচাই কোনও ভাবেই সম্ভব হয় নি।কারণ আমরা কোনও বিশ্বাস বা ভক্তিকে আঘাত করতে চাইনা। তবে এখানেই শেষ নয় জুয়া খেলার প্রাচীন রীতি মেনে এই মেলায় এখনও মহিলা পুরুষ সকলেই জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন।
মানে কোনও বারণ নেই বললেই চলে। এখানে বেহুলা নদীর তীরে পরিবারের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে লক্ষ্মী পুজো করেন মহিলারা। পুজোর প্রসাদ হিসেবে ভক্ত এবং মেলায় আগত মানুষকে লেউড়ি মিষ্টান্ন দেওয়ার চল লক্ষ্য করা যায়।
তবে সকাল থেকে যে জুয়ার আসর বসে তা সন্ধ্যা হতে না হতেই শেষ হয় এবং সকলে বাড়ি ফিরে যান। অন্ধকারে এখানে কোনও ধরনের খেলা বা মেলার অনুমতি দেওয়া হয় না। আর এই সারাদিনের বিষয়টি যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় তারজন্য থাকে রাজ্য পুলিশের কড়া নজর।
তাহলে কী বুঝলেন, এই রাজ্যের নানা প্রান্তে কত কী ঘটে, কিন্তু খবর রাখা হয় না নিজেদের ব্যস্ততার জন্য। ঠিক বললাম তো?