Breaking Bharat: আইফেল টাওয়ার বিবাহিত জানেন? আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) ভালো লাগে না এমন মানুষ আছেন? ইতিহাস জানেন ? প্রেমের শহর প্যারিস আর সেই শহরের প্রেমের চিরন্তন সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। শহরটার সৌন্দর্য্যের জন্য আইফেল টাওয়ার এর একটা ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন।
কথায় আছে ভাগ্যবান হলে তবে নাকি প্যারিস শহরে যাওয়া যায় (Paris can be visited)। আজ সেই স্থাপত্য নিয়ে কিছু কথা আর কথায় কথায় অনেকটা রাস্তা ধরে প্যারিসের অলি গলি হেঁটে চলে যাওয়া।
আইফেল টাওয়ার প্যারিস শহরের চ্যাম্প ডে মাস শহরে অবস্থিত (Eiffel Tower in Paris city)। এই স্থাপত্য আর প্রেমের মধ্যে যুগ যুগ ধরে একটা সম্পর্ক চলে আসছে। কিন্তু এই মহান কীর্তি কার আর এর নেপথ্যের কাহিনী কী, সেটা জানতে ইচ্ছে করে না? আজ এই নিয়েই বলি কথা।
অনেকেই হয়তো জানেন যে মরিস কোচলিন এবং এমিলে নৌগুয়ের কে এই টাওয়ার নির্মাণের সৃষ্টিকর্তা বলা হয়ে থাকে। তবে সাধারণত আইফেল টাওয়ারের নির্মাণে কৃতিত্ব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গুসতাভে আইফেলকে দেওয়া হয়। এই টাওয়ারের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে (Eiffel Tower facts)।
আসলেই পৃথিবীতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে বা সেগুলি দেখতে হলে আপনাকে টিকিট কেটে দেখতে হবে। আর এখানেই অনেকটা এগিয়ে আইফেল টাওয়ার। জানা যায়, পৃথিবীতে টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পরিদর্শনকারী স্থান গুলির মধ্যে আইফেল টাওয়ার সবথেকে বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করে।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য। আসলে টাওয়ার টি ১৮৮৯ সালে বিশ্ব মেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে নির্মাণ করা হয়। গুস্তাভে আইফেল প্রথমে স্পেনে টাওয়ারটি নির্মাণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এত বিশাল নির্মাণকে অদ্ভুত ভেবে স্পেন সরকার প্রত্যাখ্যান করে দেন।
পরবর্তীকালে প্যারিসে নির্মাণকার্য চলতে থাকলে স্থানীয় মানুষ এ বিশাল কালো রঙের নির্মাণকে অশুভ হলে বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টাওয়ার টি প্রায় ১০ হাজার টন ওজনের এবং পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি। সূত্র ঘেঁটে জানা যায়, প্রত্যেক সাত বছর অন্তর এটি রং করা হয় এবং এই রং পুরোপুরি স্থানীয় সংস্কৃতি রীতি মেনে হয় এবং তা হাতেই করা হয়। এখনো পর্যন্ত মোট ১৮ বার রং করা হয়েছে।
আরো পড়ুন- Sridhar Acharya: শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ শ্রীধর আচার্যকে চেনেন ? বিদ্বান মানুষটি কেন পেলেন না সঠিক কদর?
এবার ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যাক। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জার্মানি প্যারিস শহর দখল করে নেয়। তখন ফ্রান্সের মানুষ আইফেল টাওয়ারের লিফটের কেবল কেটে দেন। যাতে হিটলারের সেনা তাদের নাৎসি পতাকা আইফেল টাওয়ারের উপরে না লাগাতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শেষ কালে যখন জার্মানি যুদ্ধের হারার মুখে এসে দাঁড়ায় তখন এডলফ হিটলার আইফেল টাওয়ার সহ প্যারিস শহরের সমস্ত কিছু ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। কিন্তু হিটলারের এক সেনানায়ক তার আদেশ অগ্রাহ্য করেন এবং তার ফলস্বরূপ টাওয়ারটি আজ ফ্রান্সের ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে আছে।
এই বিশাল নির্মাণ টি যদি উপরে উঠে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে প্রায় ১৬৬৫ ধাপ সিড়ি চেপে উঠতে হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় তলা লিফট এবং সিড়ি দুইভাবেই যাওয়া যায়, কিন্তু তৃতীয় তলা উঠতে লিফটের ব্যবহার করতেই হবে।
প্রথম তলাতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং বসার স্থান তৈরি করা আছে। যেখান থেকে পর্যটকরা প্যারিস শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। আচ্ছা আপনি কি জানেন যে এই স্থাপত্য বিবাহিত? কি, বিষম খেলেন বুঝি? তাহলে ব্যাপারটা খোলসা করে বলা যাক।
বেশি পুরোনো নয়, ২০০৭ সালের ঘটনা। যখন একজন মহিলা নিজের দাম্পত্য জীবনের থেকে বিরক্ত হয়ে যান এবং আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে বিবাহ করে নেন । পরবর্তীকালে এই মহিলা নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এরিকা লা টুর আইফেল। আইফেল টাওয়ারে জনপ্রিয়তা এত বেশি যে পৃথিবীতে এই আইফেল টাওয়ারের ত্রিশটিরও বেশি রেপ্লিকা দেখা যায়।
আরো পড়ুন- Learn Music: গান শিখতে চান? গায়ক বা গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন আছে? তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য
এত সুন্দর এবং অবাক করা নিদর্শনের রাত্রে ফটো তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ধরা হয়। কারণ সেখানকার সরকার টাওয়ারের আলোকসজ্জা টিকে নিজস্ব কপিরাইট হিসেবে মনে করেন। প্যারিস শহরের এই ঐতিহ্য শালী জিনিসটিকে সাজাতে প্রায় ২০০০০ বাল্ব এর প্রয়োজন হয়।
আপনারা আরো একটি ঘটনা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে গরমকালে রেল লাইনের মতো আইফেল টাওয়ার ছয় ইঞ্চির মত বেড়ে যায় এবং সূর্যাস্তের পর চওড়া কিছুটা কমে যায়। এই অদ্ভূত ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের কাছে আগে আশ্চর্য মনে হল এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন- Patharkuchi plant: হঠাৎ করে পাথরকুচি গাছ হয়ে গেল কেন? আর এই পাথরকুচি গাছ যদি কেউ খায় কী হয়?
পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ যেমন জাপান, আমেরিকা এরা নিজেদের জনবহুল শহর গুলোতে এই রেপ্লিকা গুলি তৈরি করেছে। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আইফেল টাওয়ারের নির্মাণকারী গুস্তাভে আইফেল টাওয়ারের এক হাজার ফুট উপরে তৃতীয় তলায় নিজের জন্য একটি প্রাইভেট ঘর তৈরি করেন।
এই ঘরটির সমস্ত বিখ্যাত মানুষের নিয়মিত যাতায়াতের জায়গা ছিল। তাই এইসব বিখ্যাত মানুষের আবিষ্কারের নিদর্শন বর্তমান পর্যটকরা ঘরটি পরিদর্শনের সময় দেখতে পারেন।