Breaking Bharat: সন্ধ্যেবেলা মুচমুচে মোগলাই পরোটা (Mughlai Paratha) হলে ব্যাপারটা জমে ক্ষীর! তাই না? দিনের কাজের চাপে নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে সন্ধ্যেবেলায় পেটের পোকাটা নড়ে ওঠে? মুচমুচে খাস্তা কিছু খেতে পেলে মন্দ হয় না, তাই না?
সারাদিন কাজ আর কাজ একটু ভালো করে খাওয়ার সময় টা নেই। বাড়ি বসে কাজ হলে দুপুরের লাঞ্চ প্রায়শই স্কিপ করতে হয়। কাজের চাপে দুপুর গড়িয়ে কখন যে বিকেল হয় খেয়াল পরে না। কিন্তু যেই না সন্ধ্যে হলো অমনি পেটের ভেতর যেন ১০১টা ছুঁচো যেন ডন বৈঠক করতে থাকে। তখনই মনে হয়, এবার একটু কিছু খাওয়া দরকার।
আচ্ছা, এই সময় যদি গরম গরম মোগলাই হাতের সামনে এসে যায়? আহা, সারাদিনের ক্লান্তির পর এ যেন অমৃত। যদি পারেন রবিবারের সকালেও এই খাদ্যকেই চোখ বুজে মুখে চালান করুন। দেখবেন বাইরের এটা ওটা খাবার ইচ্ছেটুকু একেবারে দূরে চলে যাবে।
বাঙালি খাবার-দাবারের প্রতি দুর্বলতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে শুধুমাত্র বাঙালি খানাপিনাতেই নজর রাখতে হবে। সুদূর চীনের চাউমিন আর চিলি চিকেন বাংলা বানিয়ে দিচ্ছে নিজের মতো করে। আফগানদের বিরিয়ানি কলকাতার কাছেও এখন হার মানবে। কারন একটাই বাঙালির টিপিক্যাল কিছু বৈশিষ্ট্য (bengali mughlai paratha)।
মোগলাই পরোটার ইতিহাস (Mughlai Paratha):
রান্না যে দেশেরই হোক না কেন প্রতিটি বাঙালি ঘরে আর বাঙালি মানসিকতায় একজন করে ভজহরি মান্না লুকিয়ে থাকেন। তাইতো বাংলার ছেলে মেয়েরা বিদেশে কাজ করতে গিয়েও মাছের ঝোল ভাতের স্বাদ ভুলতে পারেন না। হয়তো তাতে লেগে থাকা মায়ের গন্ধটা খুব স্পষ্টভাবেই মনে পড়ে যায়।
যাইহোক এবার একটি ভাজা ভুজির জায়গায় চলে আসা যাক (Mughlai Paratha Recipe)। আগেই বলেছি মোগলাই পরোটার কথা তাহলে এই দিয়ে চলুক না আজকের দিনটা। এইটার পরোটার একটা বিশেষ ব্যাপার আছে তাহল এর ভেতরের স্টাফিং। বাঙালিরা সাধারণত ত্রিভুজের মত পরোটা দেখতে ও খেতে পছন্দ করেন।
কিন্তু এ যেন এক বর্গক্ষেত্র। অনেকটা দরজার মত যার দুটো কপাট খোলা যায়। অর্থাৎ মোগলাইয়ের দুটো ভাঁজের কথা বললাম। নামটার মধ্যেই মোঘলদের একটা সম্পর্ক আছে মনে হচ্ছে না? আলবাত আছে! তবে সুদূর রাজধানী থেকে কলকাতা আসার মধ্যে ঠিক কি আর কেমন যোগাযোগ মানে কী সম্পর্ক, সেটা বোধহয় ঠিক জানা নেই আপনার আমার।
ময়দার তৈরি পাতলা আস্তরণ যেটা প্রথমে রুটির মত গোল গোল করে বেলে তারপর বড় করে চার চৌকো ভাঁজ করে নেওয়া হয়। এর ভেতরে থাকবে স্টাফিং মানে পুর। ডিম, মাংস ছোট ছোট করে কুচানো পেঁয়াজ, লঙ্কা কিছু মসলা, বিস্কুট গুঁড়ো বা কর্নফ্লাওয়ার। ভাসন্ত তেলে ভেজে ফেলার পর পুরো স্বাদটাই যেন স্পেশাল হয়ে যায়। এহেন খাবার মুঘল সম্রাটদের বড় প্রিয় ছিল।
তবে মোগলাই যে মুঘল সম্রাটদের নিজস্ব আবিষ্কার এটা বোধহয় বলা যাবে না। কারণ তাদের রান্নায় কখনো পারস্য দেশের আবার কখনো তুর্কির একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইতিহাসের পাতায় মুঘল সম্রাটদের নাম মনে রাখতে যে কবিতাটা ব্যবহার করা হতো সেখানে চতুর্থ নামটি আসতো জাহাঙ্গীরের ।
আরো পড়ুন- Panta Bhat : সকালে পান্তা ভাত? রান্না করা সাদা ভাতে জল ঢেলে দিন, আর অ্যাসিডিটি থেকে পান মুক্তি!
যিনি বাস্তবিকভাবেই ভোজন রসিক ছিলেন। কিন্তু একঘেয়ে খাবার কার ভালো লাগে? তিনি আবার সম্রাট তাই নতুন কিছু তো অবশ্যই তার জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।সেই সময় সম্রাটের খাস রাঁধুনি ছিলেন এই বাংলার বর্ধমান জেলার রাঁধুনি আদিল হাফিজ উসমান। তিনি এই মোগলাই খানা বাদশাহী দরবারে হাজির করেন। ব্যাস কেল্লাফতে , সম্রাট নতুন খাবারের প্রেমে কুপোকাত।
আরো পড়ুন- Pizza : পিৎজার পর্দা ফাঁস! মোগলাই পরোটা কে পিছনে ফেলে পছন্দের খাদ্য তালিকায় পিৎজা?
আদিল যদিও রেসিপি কারুর সঙ্গে শেয়ার করেননি। ক্রমেই সময় যায়, মুঘলদের হাত থেকে ভারতের দায়িত্ব সরে যায়। দিল্লির আসনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আবির্ভাব ঘটে। আদিল হাফিজ উসমানের বংশধরেরা তখন এই মহা মূল্যবান রেসিপি কে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আর তার ফলাফল তো একেবারে হাতে মানে বাঙালির পাতে।
আরো পড়ুন- Coffee: খাবারের জিনিস তৈরি হয় প্রাণীর মল থেকে? যা কিনা বিদেশে কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হয়!
কোনও খাবার নিয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্যই তার ইতিহাস জানাটা দরকার। আসলে কি বলুন তো যাকে ভালোবাসছেন তার অতীতটাকেও আপন করতে হয় বর্তমান টাকে আগলে রাখতে হয়। অনেকেই বলেন বাংলাদেশের ঢাকাতে নাকি মোগলাইয়ের জন্ম। এই তথ্যের বিশেষ প্রমাণ মেলে না। তবে কলকাতা তথা বঙ্গের বুকে যতদিন যাচ্ছে ততই বিদেশী খাবারের ভিড়ের মাঝেও নিজের স্বতন্ত্র জায়গা কে আরো প্রতিষ্ঠিত করছে মোগলাই পরোটা।