Breaking Bharat: (Brothel soil) বেশ্যা বাড়ির মাটি ছাড়া দূর্গা পূজা হয় না! কিন্তু কেন হয় না সেটা জানেন? মণ্ডপের আতিশয্য যতই থাক , পুজোর পূর্ণতা মায়ের মূর্তি দর্শনে। এখানেই যেন পূণ্য অর্জন। অথচ মায়ের মূর্তি তৈরি করতে যা সবার আগে দরকার, তাই নাকি আসে তথাকথিত অপবিত্র স্থান থেকে (durga puja need brothel soil)। আহা! ঈশ্বরের বিচার না মহিমা?
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গা পূজা । পুজোর আগেই জায়গায় জায়গায় শুরু হয় খুঁটি পুজো । সঙ্গে আবার কাঠামো পুজোয় মহা ধুমধামে লক্ষ্য করা গেছে বছর গুলোতে। থিম বনাম সাবেকির লড়াই হয় বছরের পর বছর। কোন প্রতিমা সেরার সেরা তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দুর্গাপূজা মানে পাঁচটা দিন অন্য জগতে বাংলা ও বাঙালির বিচরণ। এ পুজো এক উৎসবের আকার নিয়েছে যুগ যুগ ধরে। দুর্গাপূজো মানে বাঙালি জীবনযাত্রা খাওয়া দাওয়া ধরণ ধারন পাঁচ দিন সম্পূর্ণ অন্যরকম।
বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা (Brothel soil):
চিন্ময়ী মা মৃন্ময়ী তে রূপ পান। আর মাটি আসে পতিতাপল্লী থেকে। শাস্ত্র বলে অশুদ্ধ’ পতিতালয়ের মৃত্তিকা ছাড়া শুদ্ধ মতে মায়ের মূর্তি গড়া যায় না। কী আশ্চর্য সকালে দিনের আলোতে পুরুষ যাকে মা বলে পুজো করে, রাতের গভীরে তাকেই শরীর আর মাংসপিন্ডের বিচারে অশুদ্ধ করে।
সমাজ বলে ওই নারী নোংরা তাই তার সভ্য সমাজের ঠাঁই হয় না। অশুদ্ধ’? সমাজের ‘বিদ্বজন’-দের মতে পতিতাপল্লি মানেই অশুদ্ধ জায়গা (nishiddho pallis)। সেখানে প্রতি রাতে চলে ‘বেলেল্লাপনা’। পুরুষ সে তো এক রাতের বিলাস সঙ্গিনী খুঁজবেই তাই বলে নারী এভাবে নিজের বস্ত্র ত্যাগ করে নগ্ন হয়ে পুরুষের শরীরে মিশে যাবে?
এ এক গভীর অপরাধ তাই না? যে অপরাধ করে তার কোনও দোষ হয় না। কিন্তু সেই অপরাধ বয়ে নিয়ে যেতে হয় যাদের তাদের অস্তিত্ব সমাজের কাছে চক্ষুশূল। কিন্তু পুজোর আগে সেখানেই ছুটে যাওয়া। এটা হিপোক্রেসি নয় কি?
সমাজ যাদের এভাবে দূরে ঠেলে রেখেছে, আদিশক্তি কিন্তু তাদেরই কাছে টেনে নিয়েছে। তাঁর ত্রিনয়নে সবাই সমান। তাই তো দেবীমূর্তি গড়তে অবশ্যম্ভাবী এখানকার মাটি। শাস্ত্রে তেমন বিধানই দেওয়া আছে। অকালবোধনের সময় মহিষাসুরমর্দিনীকে গড়তে হবে পতিতাপল্লীর মৃত্তিকাতেই। সম্পূর্ণ না হলেও আংশিকভাবে এই মাটি লেপতেই হবে চিন্ময়ীর কাঠামোয় (durga puja soil)। এই কথা বলা আছে শাস্ত্রে। কিন্তু কেন?
দুর্গা মূর্তি তৈরি করতে কেন বেশ্যালয়ের মাটি লাগে?
শরত কালে মহামায়া দেবী দুর্গা রূপে পূজিতা। অকাল বোধনে মোট ন’টি রূপে পূজিতা হন তিনি। নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই পায় তারাই। সমাজ যাদের কোণঠাসা করে রাখে সারাবছর, দেবীবন্দনায় তারাই পূজিত হন মানুষের মনে।
তবে এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনিও আছে। পুরাণে বলা আছে, ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভাঙাতে উঠেপড়ে লাগেন দেবরাজ ইন্দ্র। স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে তিনি ঋষির ধ্যানভঙ্গের জন্য পাঠান। অপ্সরার নাচে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভেঙে যায়।
রাজর্ষির মতো একজনের ধ্যান ভাঙানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেবরাজ নিজে তা পারেননি। অথচ এক অপ্সরা অবলীলায় সেই কঠিন কাজ সম্পন্ন করেন। হোক না স্বর্গের, তবু মেনকা তো আর সতী রমণীর পর্যায়ে পড়েন না।
আরো পড়ুন- Ghost : বাস্তবে কখনো ভূত দেখেছেন? আদৌ ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে কতটা সন্দিহান আপনি?
জানেন ভাবতেও অবাক লাগে দ্বাবিংশ শতাব্দীর মধ্য গগনে এসেও শরীর ছাড়া নারীর অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারল না সমাজ। আর বিধাতাও তাই বিধির নিয়ম বেঁধেছেন সেভাবেই। প্রতিবছর বাড়ির ঠাকুরদালানে বা পাড়ার মণ্ডপে হয়ে যায় এক নিঃশব্দ বিপ্লব। সকলকে হারিয়ে, মহিষাসুরমর্দিনীর আশীর্বাদ নিয়ে যুদ্ধজয়ের হাসি হাসেন শুভকাজে ব্রাত্য পতিতারাই।
আরো পড়ুন- Ishwar Chandra Vidyasagar : বিশ্বের দরবারে আজ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম কি আদৌ আছে?
যে পুরুষ নারীকে ৩৬০ দিন ভাবে ভোগ্য বস্তু, কী করে তার উলঙ্গতাকে আলিঙ্গনের বাহানায় পিষ্ট করা যায়, এই চিন্তায় মগ্ন থাকে , তাদেরকে মাথা নোয়াতে হয় নারীর কাছেই। তথাকথিত ‘অশুদ্ধ’ নারীদের ঘরের মাটি দিয়ে যে মূর্তি গড়া, তার সামনেই নতজানু হতে হয় হাজার হাজার হাজার ‘বিশুদ্ধ’ পুরুষকে।
আরো পড়ুন- A. P. J. Abdul Kalam : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম তার সম্বন্ধে কতটা জানেন?
এই না হলে কী আর ঈশ্বরের বিচার! যতবার বাড়বে ধর্ষণের ঘটনা, ততবার মা দুর্গার পায়ের নিচে এসে এভাবেই মুখে না বলেও হার স্বীকার করতে বাধ্য হবে পুরুষ প্রজাতি। এটাই নিয়ম আর এই নিয়ম কেউ বদলাতে পারবেনা । পুরুষের ললাট লিখন এটাই।