Breaking Bharat: শুধু জল খাওয়ার জন্যই কি পুকুর খনন? তাও আবার খাস কলকাতার বুকে? প্রতিবেদনের শুরুতেই এমন কথা দেখে একটু অবাক লাগছে কি? খুব স্বাভাবিক। এরপরের কথাটা বললে তো অবাক হবেন আরও।
জল খাওয়ার জন্য পুকুর খনন বিষয়টাই একটু অদ্ভুত (Digging ponds for drinking water)। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন পুকুরের জল (Pond water) কেন খাবেন? সে তো অপরিশোধিত। একদম ঠিক বলেছেন আপনি। কিন্তু পুকুর খনন মানুষের জল খাওয়ার জন্য নয়।
এখানেই তো চমক ! এই পুকুরের জল গরুদের জন্য (Pond water for cows)। কি আবার চমক লাগল? কলকাতার বুকে এমন কাণ্ড জেনে? তাহলে বলি এ পুকুর আজকের নয়, বহু যুগ আগের। শহর কলকাতাকে যারা চেনেন বা ধরুন নিত্য যাতায়াত, কখনো না কখনো এই পুকুর তাদের চোখে পড়ে থাকবে।
এইটুকু কলকাতার একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। নিউমার্কেট জায়গাটা চেনেন নিশ্চয়ই ? নিউ মার্কেটে যাওয়ার জন্য লিন্ডসে স্ট্রিট কলকাতায় বেশ বিখ্যাত রাস্তা। এই রাস্তা জওহরলাল নেহেরু রোডের যেখান থেকে বেরিয়েছে , ঠিক তার উল্টো দিকে ময়দান এর মধ্যে এই পুকুর অবস্থিত। মানি নিউমার্কেট থেকে রাস্তা পেরিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে যারা যাবেন তাদের বাহাতে করবে এই বিশেষ পুকুর।
কি মনে পড়ছে ? ওহো, আপনাকে তো পুকুরের নামটাই বলা হয়নি। পুকুরের নাম মনোহর দাস পুকুর (Manohar Das Pond)। বেশ কিছু বছর আগে পর্যন্ত বাম জমানায় পুকুরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। বর্তমান সরকার সংস্কার করে পুকুরটিকে আগের মত প্রাণোচ্ছল করে তুলেছে। পারলে একবার পুকুরটিকে দেখতে পারেন। শুধু গরুর জল খাওয়ার উদ্দেশ্য কলকাতার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এই পুকুর খনন (dig a pond) করা হয়েছিল।
মানুষের জন্য তো কত কিছুই থাকে কিন্তু অবলা জীবের জন্য কে ভাবে? ব্যবসায়ী মনোহর দাস শাহ এই কথাটি মনে রেখে আনুমানিক ১৮০০ সালে এই পুকুর খনন করেছিলেন। মানে বুঝতেই পারছেন শুধু কয়েক বছর নয়, কয়েক যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে এই পুকুর। আসলেই সেই সময় এত দোকানপাট ছিল না।
ময়দানে গরু ঘোড়া চড়ে বেড়াত। স্বাভাবিকভাবেই রোদে ঘোরার পর তারা ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত বোধ করত। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ বিঘা জমির ওপরে এই বড় আকারের পুকুর কাটা হয়েছিল (This large pond was cut)। তবে শুধু জলপান নয় গরুর মতো অবলা তৃণভোজী জীবেরা যাতে খেতে পারে, তার জন্য পুকুরের চারপাশে ১০০ বিঘে জমি কিনে তাতে গো-চারণের ব্যবস্থাও করেন ব্যবসায়ী।
আরো পড়ুন- একা একলা জীবন কাটানোর কী কী সুবিধা ও অসুবিধা আছে ? Breaking Bharat
পুকুরটি যখন খনন করা হয় তখন এর চারপাশকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। পুকুরের চারকোণায় ছিল অষ্টভুজাকার চারটি ছোট ছোট মন্দির। তাতে ছিল শিব, বিষ্ণু, দুর্গা ও সূর্যের মূর্তি। সেই মন্দির গুলি এখনো আছে বটে কিন্তু তাতে কোন বিগ্রহ নেই। একটু সময় নিয়ে যদি সেই জায়গায় যান তাহলে ভালো করে লক্ষ্য করলে পুকুরের পূর্ব পাড়ে একটি মার্বেলের ফলক দেখতে পাবেন। সেখানেই পুকুরের ইতিহাস লেখা আছে।
আরো পড়ুন- আপনি কি বশ হয়ে যাচ্ছেন? আপনাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে? হিপনোটিজম সম্পর্কে জানেন?
পুকুরের কথা না হয় বললাম কিন্তু যার মাথা থেকে ভাবনা এসেছিল এবার সেই ব্যবসায়ীর সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। বেনারসের অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন।জন্ম ১৭২৭ সালে, ১৭৮০ সাল নাগাদ তিনি কলকাতায় আসেন। তাঁর নানা কীর্তি সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। শুধু কলকাতা নয় কাশী, বৃন্দাবন, গয়া-সহ নানা তীর্থক্ষেত্রে তিনি বহু মন্দির, কুণ্ড ও ফলক তৈরি করেছেন।
আরো পড়ুন- যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ? মুঠো মুঠো পেইনকিলার খেয়ে নিচ্ছেন না তো? জানেন পেইনকিলার আসলে কি?
বড়বাজারের ‘মনোহর দাস কাটরা’ তাঁরই তৈরি। তিনি অবলা জীবেদের কথা ভাবতে পেরেছিলেন। আর তাই এমন এক পুকুর তৈরি করে গেছেন যা আজও কলকাতার বুকে রয়েছে। এবার মহানগরীর পথে পা বাড়ালে, একবার দেখে যেতে ভুলবেন না গরুদের জন্য খনন করা পুকুরটিকে (Digging the pond for cows)।