Breaking Bharat: মনের কষ্ট ভোলাতে দিয়ে নিজের ভুলে মনকে অবসাদে ঠেলে দিচ্ছেন না তো? মদ শরীরের শুধু নয় মনের জন্য কত ক্ষতিকারক জানেন?
সেই আদিম সময় থেকে আজ পর্যন্ত দুঃখ কষ্ট মানুষের নিত্য সঙ্গী। আজ সেই সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিটি মানুষ কমবেশি এগিয়ে চলেছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে যখন দুঃখ কষ্টের পরিমাণটা বেড়ে যায় তখন কি আর সেটার সঙ্গে লড়াই করা যায়? উত্তরটা একবাক্যে না।
শরীর খারাপ করলে যেমন ওষুধ খেতে হয়, মন খারাপ মানেই যেন ‘মদ’, অন্তত এই প্রজন্মের অনেকেরই এমনটাই ধারণা এবং বিশ্বাস। কিন্তু এটা যে কত বড় মিথ্যে আর কত বিপদের হাতছানি ডেকে আনতে পারে সে সম্পর্কে কারুরই স্পষ্ট ধারণা নেই। মদ শুধু শরীরের নয় মনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই কথা বলছেন চিকিৎসকেরাই (drinking alcohol harmful effects)।
সাধারণত মন ভালো না থাকলে মদ খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে এটা যে শুধুমাত্র মন খারাপ থাকলেই হয় তা নয়, আনন্দে উল্লাসে, পুজোতে উৎসবে সবেতেই এখন ‘মদ’ খাওয়ার প্রচলন বাড়ছে। কিন্তু যেটাকে মনে হচ্ছে মন ভালো রাখতে পারে সেটা আসলে মনের ক্ষতি করছে।
চিকিৎসকরা বলেন ‘অ্যালকোহলের পরিমাণ’ প্রতি এক ডেসি লিটার রক্তে প্রায় ৫০ মিলিগ্রামে পৌঁছয় তখন মানুষের মেজাজ ফুরফুরে বলে বোধ হয়। কিন্তু ‘সুরা প্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ‘ এনে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা নিজেরাই। কারণ বিজ্ঞান বলছে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে শুরু হয় সাইকোমোটোর ডিপ্রেশন।
আর একবার যদি আপনি এই রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেখান থেকে মুক্তি পাবার উপায় সহজে মিলবে না । সেক্ষেত্রে আপনার গোটা জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভব না থাকবে। পরিসংখ্যান বলছে যত সময় যাচ্ছে ততই অ্যালকোহল সেবনের সংখ্যা এবং পরিমাণ দুটোই বাড়ছে।
আগে এক একদিন মদ খাওয়ার চলছিল কিন্তু এখন সেটা রেগুলার হ্যাবিট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রজন্মের অন্ততপক্ষে প্রায় ৯০% অ্যালকোহলের নেশায় আসক্ত। আর এর থেকেও ভয়ংকর পরিণাম হচ্ছে ডিপ্রেশন।
গবেষণা বলছে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে যদি অ্যালকোহলের পরিমাণ ১০০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায় তখন শুরু হয় অ্যাটাক্সিয়া। আপনি বুঝতেও পারবেন না যে কখন নিজের মেজাজ এবং আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করতে শুরু করে। একেই বলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ডিপ্রেশন। এর থেকে হৃদযন্ত্র, রেচন তন্ত্র সবটাই বিঘ্নিত হয়।
আর ঠিক কারণেই অ্যালকোহলকে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ‘সাইকোট্রপিক ডিপ্রেসেন্ট’। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে এই সাইকোট্রপিক ডিপ্রেসেন্ট আসলে কী?
উত্তর হল NSW-এর স্বাস্থ্য দফতরের সংজ্ঞা অনুযায়ী যে সব বস্তু আমাদের মানসিক কাজ, আচার-আচরণ, মানসিক ও শারীরিক অনুভূতি এবং জীবনের নানা অভিজ্ঞতাকে বিঘ্নিত করে, তাদেরকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘সাইকোট্রপিক ডিপ্রেসেন্ট’ বলা হয়।
আরো পড়ুন – যমজ সন্তান নিয়ে একাধিক ভুল ধারণা আছে, আসল সত্যিই জানেন কি?
আসলে এর কার্যপদ্ধতি অনেককটা এইরকম, অ্যালকোহল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রাথমিকভাবে ব্যহত করে। কিন্তু যেহেতু মাথা সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে আছে তাই সারা দেহে এই ঘটনার প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে অতিরিক্ত মদের আসক্তি আমাদের নার্ভগুলোকে শিথিল করে দেয়।
আরো পড়ুন – বলিউডি গ্রেট ভিলেন গব্বর নিজের স্ত্রীয়ের জন্য কী করেছিলেন ভাবতেও পারবেন না!
এর ফলে স্মৃতিশক্তি এবং যুক্তিভিত্তিক ভাবনা-চিন্তা করতে সমস্যা দেখা যায়। মদ মস্তিষ্কের স্নায়ু থেকে ক্ষরিত বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের কাজকে ব্যহত করে বলে দেখা গেছে। স্নায়ুকোষের পর্দায় বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার রিসেপ্টর থাকে যার মধ্যে অন্যতম হল গামা-অ্যামাইনোবিউটাইরিক অ্যাসিড), গ্লুটামেট, এন্ডোক্যানাবিনয়েডস প্রভৃতি।
আরো পড়ুন – ‘টি সিরিজ’ কোম্পানির গান-বাজনা শোনেন, কিন্তু ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় আছে কি?
আলকোহল গিয়ে সোজা সেই নিউরোট্রান্সমিটার রিসেপ্টরগুলির যাতায়াতে বাধা দেয়। ব্যাস খেলা শুর। ঘুম কম, যখন তখন রেগে যাওয়া, মনঃসংযোগ হারানো, আপনি প্রাথমিক ভেবে বুঝতেও পারবেন না যে গভীর অবসাদের শিকার হচ্ছেন আপনি । তাই আগে থেকে সতর্ক হোন।