Breaking Bharat: দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu)- দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতির সম্বন্ধে জানেন? দেশ যখন মা, তখন দেশ চালাবার ভারও এক মহিলার কাঁধে! ভারতের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে জানার যেন শেষ নেই ।
একটা নাম যা রাজনীতির বিভাজনকে বন্ধ করে দিয়েছে। বিজেপির বিরোধিতা করা তৃণমূল কংগ্রেসও এই একটা নামের কাছে কার্যত মাথা নিচু করেছে। দ্রৌপদী মুর্মু – দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি তিনি। কোনও বর্ণবিদ্বেষ কোনও জাতিভেদ কোনও বিভেদের পাঁচিল নয়, স্নেহশীলা, শিক্ষিতা মিষ্টভাষী দ্রৌপদী মুর্মু যেন প্রমাণ করে দিয়েছেন নারী শক্তি দেশের আসল চালিকাশক্তি সেই কথা।
দ্রৌপদী মুর্মু (draupadi murmu biography):
বয়স ৬৪ বছর, বিরোধী মনোনীত যশবন্ত সিনহাকে পরাজিত করে দ্রৌপদী মূর্মুর দেশের সর্বোচ্চ প্রধান পদে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। ১৯৫৮-এ ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামে জন্ম তাঁর। জীবনের প্রথম দিন থেকেই তিনি অন্যকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তার কার্যাবলীর মধ্যে দিয়ে।
পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে সামনে এগিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন তিনি। তার জীবনের সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বহু মানুষ জানতেন না। এমনকি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিনতেন না অনেকে, এ কথা বললেও এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না। দ্রৌপদী মুর্মুর গ্রামে তিনিই প্রথম মহিলা যিনি স্কুল পেরিয়ে কলেজের দোলগোড়ায় পা রেখেছিলেন।
ভারতের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি (draupadi murmu):
নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে একজন ভালো শিক্ষিকা হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি তার প্রমাণ কর্মজীবনের বিবরণের মধ্যে দিয়েই পাওয়া যায়। রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে শিক্ষকতা করেন তিনি। পরবর্তী পর্যায়ে ওড়িশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগে জুনিয়র সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
রাজনীতি মানে নিজের স্বার্থসিদ্ধি নয় বরং পিছিয়ে পড়া মানুষের বিশেষ করে জনজাতির ও মহিলাদের উন্নয়ন করতে হবে। এই ভাবনা মাথায় নিয়েই রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ শুরু করা। প্রতিভা পাতিলের পর তিনিই ভারতের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি (Second woman President of India)। তিনি সাঁওতালি এবং ওড়িয়া ভাষায় যথেষ্ট সাবলীল এবং আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন তিনি একজন চমৎকার বক্তাও বটে।
ওড়িশায় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকারের সময়ের তিনি দু বছরের কিছু বেশি সময় ধরে বাণিজ্য ও পরিবহন দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন অনায়াসে। কাজে খুশি হয়ে রাজ্য সরকার পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের স্বতন্ত্র দায়িত্বে রাজ্য মন্ত্রী করেন তাকে।
একাধারে মন্ত্রিত্ব অন্যদিকে বিধায়ক পথ সুশৃংখলভাবে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি:
২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন তিনি। জাতীয় স্তরে যা সম্প্রচারিত করা হয়। সেখানেই ২০০৪৭ সালের ভারত গড়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে দেন স্পষ্ট করে। কী ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলে শততম স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি পালনে ভারত জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে, সেই ইঙ্গিত দেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলারা রাষ্ট্রপতি।
আরো পড়ুন – Benefits of corn : পপকর্ণ ভালোবাসেন? আর রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া ভুট্টা? কত গুন আছে জানেন?
ভাবতে অবাক লাগে এই মানুষটা জীবনে চরম দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ এই পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি তাঁর সবচেয়ে কাছের তিনজন মানুষকে হারিয়েছেন। ২০০৯ সালে তাঁর বড় ছেলে লক্ষ্মণ মুর্মু, ২০১৩ সালে তাঁর ছোট ছেলে সিপুন মুর্মু এবং ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী শ্যাম চরণ মুর্মু মারা যান (draupadi murmu family)।
আরো পড়ুন – Home loan : সংসারের প্রয়োজনে, বাড়ির দরকারে ঋণ নেওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকে কি?
বিধাতা পরীক্ষা নিতে ছাড়েননি তবুও। এই সময়ের মধ্যেই তাঁর মা ও ভাইও মারা যান। কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। নিজের সব থেকে কাছের মানুষকে হারিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন ঠিকই কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবার মানসিকতাকে বিসর্জন দেননি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
আরো পড়ুন – JOY MAA TARA : তারাপীঠের তারা মায়ের অপার লীলা, তার স্মরণে এলেই মনোবাঞ্ছা পূরণ? কী ভাবে?
রাজ্যপাল হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা আর শাসনব্যবস্থাকে আগলে রেখেছিলেন। দলীয় পদ থেকে আইনসভা, সেখান থেকে রাজ্যপালের অফিস – রাস্তাটা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে সব স্তরেই দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। প্রায় ১৩৮ কোটি ভারতবাসীর এই দেশ গর্বিত দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেয়ে।