Breaking Bharat: আগুন ছাড়া জীবন চলেনা। তা সে রোদের তেজে গরমের আগুন হোক বা জ্বালানির। মূল্যবৃদ্ধির আগুনকেও অস্বীকার করা যায়না। অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে কিংবা চিতার আগুন – একটা দেশলাই কাঠি যে কী করতে পারে সেই ধারণা বোধহয় দেশলাই বাক্সের (Deslai box) নিজেরও নেই। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এই যে দেশলাই বাক্সের পাশে যে বাদামী রঙের অমসৃণ পৃষ্ঠ থাকে, তাতে দেশলাই কাঠি ঘষলে কেন আগুন ধরে? আজ এর উত্তরই দেব আপনাকে।
আগেকার দিনে মানুষ পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে পেরেছিলেন। সেটা ছিল ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন তাপ এবং সেই থেকে আগুনের সৃষ্টি। কিন্তু এরপর সভ্যতা যত এগিয়েছে মানুষ নিজেকে আরও উন্নত করতে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে। আর সেখান থেকেই নানা তত্ত্ব আবিষ্কার হয় আর সেখান থেকেই আসে নানা তথ্য। আসলে দেশলাই কাঠি বাক্সের (Deslai stick box) বাদামী অংশে ঘষে আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয়ে থাকে।
আমরা সবাই জানি আগুন ধরানোর জন্য মূলত তিনটি উপাদানের দরকার হয় – তাপ, অক্সিজেন এবং জ্বালানী। এবার দেশলাই বাক্সের (Match Boxes) দুপাশে যে বাদামী রং এর প্রলেপ দেখা যায় তা মূলত লোহিত ফসফরাস। আপনাকে জানাই, ফসফরাস দু ধরণের হয়। লাল এবং সাদা। অর্থাৎ লোহিত ফসফরাস আর শ্বেত ফসফরাস। দেশলাই বাক্সে লোহিত ফসফরাস থাকে তাই এই লাল বা বাদামী রং দেখা যায়। এই লোহিত ফসফরাসের সাথে ঘর্ষণ বৃদ্ধির জন্য সূক্ষ্ম কাঁচের গুড়া মিশ্রিত করে প্রলেপ দেওয়া হয়ে থাকে।
এবার যখন একটি কাঠিকে ঐ পৃষ্ঠে ঘষা হয় তখন কিছু তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপে লোহিত ফসফরাসের গঠন ভেঙ্গে গিয়ে ফসফরাসের আরেক রূপভেদ শ্বেত ফসফরাসে রূপান্তরিত হয়। এই সাদা বা শ্বেত ফসফরাস খুবই সক্রিয় একটি মৌল। উৎপন্ন হবার সাথে সাথে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সে আরও তাপ উৎপন্ন করে এবং আগুনের সূত্রপাত হয়। এই কাজ কিন্তু সরাসরি লোহিত ফসফরাস করতে পারে না।
এতো গেল বাক্সের কথা (Deshlai Baksho)। এবার বলি কাঠির বারুদের ব্যাপারে। কাঠির মাথায় বেশ কিছু যৌগ থাকে। একটি হলো পটাশিয়াম ক্লোরেট ( KClO3 )। শ্বেত ফসফরাসের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপে এটি ভেঙ্গে গিয়ে প্রচুর অক্সিজেন তৈরী করে যা আগুন জ্বালানোর অক্সিজেন সরবরাহ করে। মানে এক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটে। KClO3⟶KCl+O2
আরো পড়ুন- Airplane round windows : এরোপ্লেনের গোল জানলা আপনাকে নিরাপত্তা দেয়, জানেন কি?
জানিয়ে রাখি যে কিন্তু এই আগুনটি ক্ষণস্থায়ী। এটি কিন্তু উৎপন্ন হয়েই কাঠির কাঠে আগুন ধরাতে পারে না।এর কিছু সময়ের প্রয়োজন। এই আগুনটিকে তাই কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখার জন্য দ্বিতীয় আরেকটি যৌগ ব্যবহার করা হয় – অ্যান্টিমনি ট্রাই সালফাইড ( Sb2S3 )। এটি অক্সিজেনে পুড়ে সালফার ডাই অক্সাইড তৈরী হয়।এই দুয়ের ক্রিয়া বিক্রিয়ায় কিছু সময় পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন- Over in Walkie-talkie : ফোনে হ্যালো, কিন্তু ওয়াকিটকিতে কথা বলতে গেলে ওভার কেন বলতে হয় ?
ততক্ষণে কাঠিতে আগুন ধরে যায়।তবে এসবের পাশাপাশি কাঠির গায়ে মোমের প্রলেপ থাকে যাতে করে কাঠিতে আগুন নিয়ন্ত্রিত ভাবে জ্বলতে পারে। আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন কেন কয়লার মতো অনেকটা বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলে না? এর পিছনেও বিজ্ঞানসম্মত কারণ আছে। এগুলি প্রস্তুতির সময় কাঠিগুলোকে অ্যামোনিয়াম ফসফেট ( (NH4)3PO4 ) এ ভেজানো হয় যাতে দহণের অবশিষ্ট তাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরো পড়ুন- NASA : মহাকাশের বিস্ময় জানতে NASA এর এত আগ্রহ কেন? এই রহস্য উদ্ঘাটন করে কি লাভ?
আরো পড়ুন- Refresh: আপনি কি জানেন বেশি রিফ্রেশ করলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়? তাহলে রিফ্রেশ কেন করে?
তাহলে বুঝলেন তো বিষয়টা খুব একটা সহজ নয়। এক তুড়িতে দেশলাই কাঠি তে আগুন জলে কিন্তু প্রক্রিয়াটা এক তুড়িতে হয় না।