Breaking Bharat : গোয়েন্দাদের দেখতে (Detective Storys) সিনেমা হলে যান ? কদর কমল নাকি সত্যান্বেষী রহস্য সন্ধানীদের? টলিউডের অনুসন্ধান করলে হয়তো এমন সিদ্ধান্তেই উপনীত হবেন গোয়েন্দা বাবুরা নিজেরাই। কিন্তু কেন? চলুন উত্তরটা খোজা যাক!
পৃথিবীতে ছোট হতে হতে বোকা বাক্সতে বন্দি হয়েছিল আগেই, এবার তা মুঠো বন্দি। আসলে পুরো জগৎটাই স্মার্ট ফোনের দৌলতে চলে এসেছে হাতের মুঠোর মধ্যে। তাই মুঠো বন্দি জগতে সবার আগে বিনোদন হয়েছে অনেক নিজের। মানে অনেকটা কাস্টমাইজড হয়ে যাওয়ার মত।
যতটা ইচ্ছে ততটা বেছে নেওয়া।ওয়েব সিরিজ আর শর্ট ফিল্মসের বাজারে কমছে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রবণতা। অনেকটা ৫০ ওভারের খেলা যেন টুয়েন্টি টুয়েন্টিতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই বলে গোয়েন্দাদের রোজগার কি বন্ধ? (Detectives earn what?) টলিউডের অনুসন্ধান করলে হয়তো এমন সিদ্ধান্তেই উপনীত হবেন গোয়েন্দা বাবুরা নিজেরাই। কিন্তু কেন? চলুন উত্তরটা খোজা যাক!
গোয়েন্দা গল্পের চাহিদা ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে?
আজকের ব্যস্ত দিনে টানা দু আড়াই ঘণ্টা একটা জায়গায় বসে সিনেমা দেখা মুশকিল । কারণ এত সময় কারোর হাতে নেই। সেক্ষেত্রে মোবাইলে ডাউনলোড করে নেওয়া কিংবা ওয়েব সিরিজ পার্ট পার্ট করে দেখাটাই এখন অনেক বেশি কুল।
তবে এসব করতে গিয়ে বাঙালি গোয়েন্দা গল্পের চাহিদা ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে (demand for Bengali detective stories is gradually falling)। ফেলুদা ব্যোমকেশ অবশ্য আগের মতই গল্প নিয়ে আছেন কিন্তু দর্শকদের মন জয় করতে পারছেন না এই যা। দায় কি এড়াতে পারে টলিউড বা সিনেমার নির্মাতারা? ২১, রজনী সেন রোড কিংবা হ্যারিসন রোড বা পরবর্তীতে কেয়াতলা এই ঠিকানাগুলো আজ আর বাঙালির ডেসটিনেশন নয়।
ত্রিমূর্তি অর্থাৎ ফেলুদা তোপসে আর জটায়ুর বাজার পড়তির দিকে। সত্যান্বেষী আর অজিতকেও আজকাল আর কেউ পাত্তা দেন না। কিন্তু বাঙালির হলোটা কি? সত্যজিৎ শরদিন্দুর গল্প পড়ে যারা পাগল ,২০২২ সালে সেই গল্পকেই সিনেমায় বাস্তবায়িত হতে দেখলে কেন আর মন ভরছে না?
বাঙালির মননে ফেলুদা মানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?
কারণটা একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। বাঙালির মননে ফেলুদা মানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ব্যোমকেশ বক্সী (Byomkesh Bakshi) মানে কি চিড়িয়াখানা ছবির উত্তম কুমার কে মনে হয়? তবে মনে হয় তাই সার কারন এই দুই লেজেন্ড আর বেঁচে নেই। তাই বলে সিনেমা তো আটকে থাকতে পারে না।
মানিকবাবু জটায়ু চরিত্রের জন্য যে লালমোহন গাঙ্গুলিকে মানে সন্তোষ দত্ত কে বেছে ছিলেন, তাঁর প্রয়াণের পর আর ফেলুদা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে ফেলুদা কিন্তু থেমে থাকেননি। পরিচালকের হাত পরিবর্তন হতে হতে গল্প থেকে সিনেমা, সিনেমা থেকে নাটক, নাটক থেকে ওয়েব সিরিজ, সবেতেই রূপান্তরিত হয়েছেন সময় এবং চাহিদা অনুযায়ী।
একই ব্যক্তি কখনো ব্যোমকেশ কখনো ফেলুদা?
একই ঘটনা ব্যোমকেশ বক্সীর সঙ্গেও ঘটেছে। বাংলা সিনেমাতে তো এমন নজিরও আছে যেখানে একই ব্যক্তি কখনো ব্যোমকেশ কখনো ফেলুদা। তিনি হয়তো ভালোলাগা ভালোবাসা বা টাকার জন্যই কাজটি করছেন কিন্তু চরিত্র হিসেবে দর্শকের মনে গেঁথে যাচ্ছেন কি? এ বিষয়ে নাম বলতে হয় আবির চট্টোপাধ্যায়ের। যথেষ্ট দক্ষ এবং গুণী একজন অভিনেতা।
ধুতি পাঞ্জাবিতে সত্যান্বেষীর বেশে তাকে ভালোবেসে ছিল বাঙালি জনতা। কিন্তু কোথাও গিয়ে তিনিও যেন দর্শকের মন ভাঙলেন হয়ে উঠতে চাইলেন বাদশাহী আংটির ফেলুদা। আবার নতুন করে চমক তৈরির আশা জাগার কোন ইঙ্গিত পেলেন না দর্শক। কারণ ফের আবির ফিরলেন ব্যোমকেশের মহিমায়।
ফেলুদা চরিত্রেও পরিবর্তনের পর পরিবর্তন:
ফেলুদা গল্পে সব্যসাচী চক্রবর্তীর পর আর কাউকে সেভাবে জায়গা দিতে পারেনি বাঙালি দর্শক। কিন্তু সেখানেও পরিবর্তনের পর পরিবর্তন। রবি ঘোষ অনুপ কুমার বিভু ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অনির্বাণ চক্রবর্তী – একের পর এক যেটাই ওকে পেল বাঙালি দর্শক মাথা ঘুরে যাবার যোগার।
আরো পড়ুন- Tirupati Balaji Temple : তিরুপতি বালাজি মন্দিরে দিনের পর দিন মাথার চুল দান করা হয়! কেন জানেন ?
এখানেই শেষ নয় ফেলুদা চরিত্রেও পরিবর্তনের পর পরিবর্তন। যে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এককালে ছিলেন তোপসে তিনি আবার ওয়েব সিরিজের হয়ে গেলেন ফেলুদা। তোপসে বদলেছে অসংখ্যবার। সিনেমা আর ওয়েব সিরিজের দৌলতে কখনো ফেলুদা সব্যসাচী চক্রবর্তী ,কখনো পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কখনো আবির চট্টোপাধ্যায়, আবার কখনো টোটারাই চৌধুরী।
মানুষের মনে গোয়েন্দা গল্প (Detective Story) :
পরিবর্তন এসেছে ব্যোমকেশের সিরিজেও। কখনো আবীর কখনো যীশু, কখনও সুজয় ঘোষ আবার কখনো সুশান্ত সিং রাজপুত। মুনাফা আর বক্স অফিসের দিকে তাকাতে গিয়ে বাঙালি দর্শকের আঘাত করে ফেলেছেন প্রযোজক পরিচালকরা। এখন পরিণাম মিলছে হাতেনাতে। মন ভরছে না বাংলার সেরা গোয়েন্দা গল্পে তাই দর্শক আজ আর সিনেমা হলে যান না।
আরো পড়ুন- iPhone : আইফোন কী ভাবে এত স্পেশাল হল? জনপ্রিয়তার শীর্ষে আইফোন! রহস্যটা কী?
মানুষের মনে গোয়েন্দা গল্পের দুটি সেরা চরিত্রকে নিয়ে যে উন্মাদনা ছিল, এতজন পরিচালক, এত অভিনেতার ভিড়ে চরিত্রের সেই রোমাঞ্চ, ধ্বংস হয়ে গেছে। সেলুলয়েডে আর ঝড় তোলে না মগজাস্ত্র বা সত্য অন্বেষণের রাস্তাগুলো।
আরো পড়ুন- Nepali girls : নেপালের মেয়েরাই আরাধ্যা দেবী, দেশের ঘড়ি চলে ৪৫ মিনিট পিছিয়ে! জানেন?
লক্ষ্য করে দেখবেন যত ফেলুদা-ব্যোমকেশের ভিড় আর বৈচিত্র সিলভার স্ক্রিনে বেড়েছে , ততই যেন সেলুলয়েডে এই গোয়েন্দাদের উপস্থিতি ঘিরে উত্তেজনার পারদ কমতে থেকেছে। একই দিনে দুই ফেলুদা মুক্তির লড়াই হল, ব্যোমকেশ ফেলুদার অভিনেতাদের টক্কর হল, এই সব কিছুর সাক্ষী রইল বাংলা সিনেমা।
আর তার পরিণামে বাংলা সিনেমার দর্শক গোয়েন্দা গল্পকে আর মাথার উপর তুলে রাখতে পারলেন না। তাই এই কেসটা কার্যত হারতেই হলো ফেলুদা ব্যোমকেশ দুজনকেই।