Breaking Bharat: নারী পুরুষ দুজনই সমান তবু কেন বাড়ছে শিশু কন্যা হত্যা (female child)? নির্লজ্জের মত বাড়ছে পুত্র সন্তানের চাহিদা? দেবী দুর্গা বা মা কালীর পায়ের সামনে হাতজোড় করে পুজো করা নিত্য দিনের ঘটনা। পাশাপাশি কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যাও যেন রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যযুগের মানসিকতা আজও একই রকম রয়ে গেছে। সমাজ এতোটুকু পাল্টাইনি। বেড়েছে শিক্ষিতের সংখ্যা কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা হয়েছে কি ? তা নিয়ে বড় প্রশ্ন এখনও ।
কন্যা ভ্রুন হত্যার কারণ কি? (female child):
ভাবতে গেলে অবাক লাগে সারা পৃথিবীতে পুত্র সন্তানের তুলনায় কন্যা সন্তানের জন্মের হার অনেকটাই কম। অবশ্য ভারত এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী। তবে এই নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সম্প্রতি ল্যানসেট একটি সার্জারি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ।
তাঁরা জানিয়েছে, প্রতি ২৫ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে অন্তত একজন গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন। পুত্র সন্তানের চাহিদা আজও বেশি। যদিও কন্যা সন্তানও যে অনেক পরিবারের সমাদৃত হচ্ছে না সে কথা বলা ভুল তবে তুলনা করতে গেলে সংখ্যাটা কম। যে দেশের পরিচয় দেশমাতৃকা অর্থাৎ নারী, নদীমাতৃক দেশ আর নদীও নারী।
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনা:
সেই দেশে কন্যা সন্তানের চাহিদা নেই একথা ভাবতে গেলেও পিছিয়ে পড়তে হয়। ভারতবর্ষ জুড়ে হিন্দু ধর্মের ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে বেশিরভাগ দেবতাই নারী অর্থাৎ দেবী। অথচ সেই দেশেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনা। হিসেব বলছে ১০০জন কন্যাসন্তান পিছু ১০৫ জন পুত্রসন্তানের যদি জন্ম হয়, তবে তা স্বাভাবিক।
কিন্তু এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ কারণ কন্যাসন্তানকে মায়ের পেটে থাকাকালীনই ভ্রূণহত্যা করানো হয়। এর পেছনে সমাজতাত্ত্বিক যে কারণটা ঘোরাফেরা করে তা হল পুত্র সন্তান বংশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অর্থাৎ বংশের প্রদীপ হিসেবে তাকে ধরা হয়।
বাবা-মা চাইছেন তাদের কন্যা সন্তান যাতে না হয়?
অন্যদিকে পৃথিবীতে যত সময় যাচ্ছে বাড়ছে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা তাতে কিছুটা হলেও শঙ্কিত সমাজ। সবমিলিয়ে প্রতি বাবা-মা চাইছেন তাদের কন্যা সন্তান যাতে না হয়। অথচ পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে গেলে ওদের নারীদের প্রয়োজন এই কথাটা সমাজের মোটা মাথায় ঢোকেনা।
পুরুষ তো আর একা সন্তানের জন্ম দিতে পারেনা। অসামাজিকতা এবং অশিক্ষার কারণে সন্তানের জন্মের আগেই পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে ভেদাভেদের মানসিকতা বহাল রয়েছে। ভ্রূণ হত্যা মহাপাপ একথা যেমন ধর্মের নিরিখে বলা হয়েছে তেমনি বিজ্ঞানসম্মত কারণ দেখিও বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ওই যে বাস্তবিক প্রয়োগ কোনও ক্ষেত্রেই নেই।
কন্যা সন্তানের ভ্রূণহত্যার ঘটনা আগের থেকে কমেছে?
আপনি জানলে অবাক হবেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিবছর ভারতে ৬০ লক্ষের বেশি গর্ভপাত করা হয়। তবে সব রাজ্য যে একইভাবে ভাবছে এমনটা নয়। পরিসংখ্যান বলছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে সাম্প্রতিককালে কন্যা সন্তানের ভ্রূণহত্যার ঘটনা (consequences of female child foeticide) আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।
আরো পড়ুন – Eating Rice : প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত? জানেন ভাতেই লুকিয়ে আছে অমরত্বের স্বাদ!
শুধু শহরের মানসিকতায় নয় বেশ কিছু মফস্বলের মানুষও কন্যা সন্তান হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এই ক্ষেত্রে নারী সুরক্ষার বিষয়টিকে অবহেলা করা যায় না। বাড়িতে কন্যা সন্তান এলে সবার আগেই যেটা মাথায় আসে তা হল মেয়ে মানেই পরের ধন তাই টাকা পয়সা খরচ করে তাকে অন্য বাড়ি পাঠাতে হবে। অর্থাৎ কিনা? মেয়ে মানেই সে অন্যের বলি প্রদত্ত।
আরো পড়ুন – PMJDY : বাড়ি বসেই লাখপতি? ‘জন ধন যোজনা’র মাধ্যমে এই কাজটি করে দেবে ব্যাংক!
২০২২ সালে দাঁড়িয়ে এ ভাবনার যে একেবারে পরিবর্তন ঘটেনি তেমনটা নয়। তবে আরও কিছুটা সময় লাগবে সমাজের শিক্ষার মান উন্নত হতে। আজকাল সহবাস থেকে শুরু করে নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক বা পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে সমাজ যতটা সদর্থক পদক্ষেপ করেছে তা প্রশংসনীয়।
আরো পড়ুন – Momo Recipe : মোমোর স্বর্গীয় স্বাদ, আহা! কেন মোমোকে নেপালি খাবার বলা হয়? জানেন?
আশা করা যায় নারী এবং পুরুষ দুজনের সমাজ এবং জগত সংসার কে চালাতে যে সমান ভূমিকা সেটাও খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের সকল মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমনিতেই গর্ভধারণের সময় লিঙ্গ নির্ধারণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সভাপতি কোন হাসপাতাল বা নার্সিংহোম এই কাজ করতে চাইবে না।
আরো পড়ুন – Zomato : এক ক্লিকে বাড়িতে এসে গেল খাবার? জোম্যাটোর জয়জয়কার হল কী ভাবে?
অনেক ক্ষেত্রে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও তাকে হত্যা করা হয় সেদিকে প্রত্যেকের সচেতন থাকা প্রয়োজন। বছরের পাঁচটা দিন দেবী দুর্গার পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়া আর বাকি ৩৬০ দিন তাকে পায়ের নিচে রাখার মানসিকতা না বদলালে আসল পরিবর্তন কখনোই আসবেনা।