Breaking Bharat: সন্তানের (child’s) জীবনের মূল উদ্দেশ্য কী বলুন তো? টাকা রোজগার নয় , বাবা-মায়ের হাসি আর আনন্দের কারণ হওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ! সন্তানকে বড় করেন যিনি, তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কি সন্তানের নয়?
দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ করে তারপর পৃথিবীর আলো দেখানো- মা মানেই এক আত্মত্যাগের নাম। শুধুমাত্র গর্ভে লালন করা নয় আত্মজকে জন্ম দেবার পর তাকে স্নেহ দিয়ে পালন করে সমাজে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটা একটা বড় দায়িত্ব যেটা মা ছাড়া কেউ নিতে পারেন না।
বাবা মা দুয়ে মাইল একটাই সত্তা। সন্তানের উৎসের কারণ, সন্তানের প্রকৃত আত্মা। গোটা পৃথিবী কোন একজন মানুষকে ভালোবাসে তাকে চোখে দেখার পর বা সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর । মা ভালবাসেন তারও ৯ মাস আগে থেকে, যখন ভ্রুণ হিসেবে একটা ছোট্ট মাংসপিণ্ড তার গর্ভের মধ্যে দিনে দিনে বাড়তে থাকে।
‘বাবা মা’ কে ভালো রাখার দায়িত্ব কি সন্তানের নয়?
সাবধানে পা ফেলা, এটা ওটা না খাওয়া, নিজের যাবতীয় ইচ্ছেকে বিসর্জন দেওয়া, সন্তানের সুখে নিজের সুখ ভুলে যাওয়া – এই সব কিছু প্রতি মুহূর্তে করতে করতে সন্তানকে বড় করেন যিনি, তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কি সন্তানের নয়? খুব কঠিন নয় এই কাজটা। মা-বাবা খুব অল্পেতেই তুষ্ট হয়ে যান, সন্তানের উপর রেগে থাকতে পারেন না কোনও কারনেই।
আজকের দিনে বৃদ্ধাশ্রম-এর সংখ্যা বাড়ছে তার কারণ কিন্তু শুধু পরিস্থিতি আর পরিবেশ নয় বরং মানসিকতা। মা তো শ্রেষ্ঠ বন্ধু হওয়া উচিত, তাকে দূরে ঠেলে রাখার প্রবণতা তৈরি হবে কেন? মায়ের সবথেকে ভালো বন্ধু হতে পারি তার সন্তান আর সন্তানেরও কাছের বন্ধু তার মা বাবা।
এই বন্ধনটা পৃথিবীর সৃষ্ট বন্ধন। বাইরের পৃথিবীর মানুষকে আপনার সমস্যার কথা বলে বোঝাতে হবে। কিন্তু যার ভেতর থেকে আপনার জন্ম তিনি আপনাকে তো অন্তর থেকে চেনেন তাই না? এই সন্তানের দায়িত্ব মাকে ভেতর থেকে ভালো রাখা, কোন বাহ্যিক মোড়কে নয় বরং সত্যি সত্যি অন্তর থেকে ভালোবাসা (responsibility of the child is to keep the mother well)।
একটা সময় পর মা বাবার সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব তৈরি হয়। আশ্চর্যজনকভাবে এটা সত্যি। আসলে ছোট থেকেই সন্তানের জীবনের গণ্ডিতে মা-বাবা থাকেন ।যত সে বড় হয় আস্তে আস্তে পরিসর বাড়তে থাকে, নানা মানুষের সমাগম হয় জীবনে। তখনই আগের মানুষগুলো পুরনো হয়ে যায়।
নতুন মানুষের সঙ্গ পেতে, সময় দিতে বেশি ইচ্ছে করে। তৈরি হয় দূরত্ব কোথাও কোথাও সম্পর্কে ফাটল। জানেন মনোবিদরা বলেন সন্তানের আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-পরিচয়ের উপর মায়ের প্রভাব বড্ড বেশি। মায়েরা এরকমই হয়। জীবনের বিভিন্ন দিককে নানাভাবে প্রভাবিত করেন নিরলিপ্ত ভাবে।
আবার মায়ের হৃদয়ে কোনও ভার বা অন্তরে কোনো ক্ষত থাকলে তা সন্তানকে অস্বস্তিতে রাখে। দুজনেই তো দুজনের পরিপূরক তাই না? অযথা অকারনে মায়ের উপর দোষারোপ করা বন্ধ করুন। বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে পার্টি করতে গেলে সেই দারুন মুহূর্ত গুলো ভাগ করে নিন মায়ের সঙ্গেও।
কীভাবে করবেন সেটা আপনার ব্যাপার । কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন বা কী করছেন সেই বিষয়ে মা জানতে চাইলে অকারণে রিয়াক্ট করবেন না। ভুলে গেলে চলবে না আপনার উপর তার সব থেকে বেশি অধিকার আছে। মেজাজ ডি সেলিব্রেট করা নয়, প্রত্যেকটা দিনই মায়ের কাছে কিছু স্পেশাল করে দেখান।
অফিসের ব্যস্ততা কাজের ফাঁকেও একটু সময় করে ফোনে কথা বলুন। তাকে বোঝান আপনি তার সঙ্গেই আছেন। মনে রাখতে হবে যখন সন্তান ছোট থাকে ,মা ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তার মাথার উপর, যাতে রোদ ঝড় বৃষ্টি কিছুই তাকে প্রভাবিত না করতে পারে। সন্তান বড় হলে মায়ের জন্য তাকে সেই কাজটি করতে হবে মুখে না বললেও মায়েরা এমনটাই চায়।
আরো পড়ুন- Breast cancer : মহিলাদের বয়স ৩০ পেরোলেই সব থেকে বেশি চিন্তার কারণ কি ব্রেস্ট ক্যান্সার?
আপনার মধ্যে আপনার মা তার নিজের ফেলে আসা মেয়ে বেলা কে দেখার চেষ্টা করেন। তাই সেই অনুভবকে সম্মান জানানো কি আপনার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না? নিজের বিরক্তি বা খারাপ লাগা গুলোকে মায়ের উপর চাপিয়ে দেবেন না। সন্তান যতই বড় হয়ে যাক মায়ের থেকে বড় তো সে নয়, কোনদিন হতেই পারবে না।
আরো পড়ুন- অহংকার পতনের মূল! কখনোই নিজেকে নিয়ে অহংকার করবেন না, তাহলেই সব শেষ!
তাই মায়ের উপর কথা বলাটা কখনোই উচিত নয়। মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন (Take care of mother’s health)। তার না পূরণ হওয়া ইচ্ছে গুলোকে আবার তার মধ্যে জাগিয়ে তুলুন, তাকে নতুন জীবন দিন। নিজেকে যতটা সময় দিচ্ছেন নিজের কাজ বা বন্ধু-বান্ধবকে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তার ডাবল গুরুত্ব আর সময় মাকে দেবার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন- A. R. Rahman : দিলীপ কুমারকে চেনেন? অস্কারজয়ী সুরকার নিজের নাম বদলে সুপারষ্টার! কীভাবে?
একটা কথা কি জানেন, মানুষের মুখ দেখে জ্যোতিষী ভুল বলতে পারেন, কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে মা কখনো ভুল বলতে পারেন না। এটা মাতৃত্বের অহংকার নয় বরং নারীত্বের অপার ক্ষমতা।
মা কে ভালো রাখুন মায়ের থেকে বড় আর কিছু হয় না। প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করে সন্তান তা হল মা। কোনদিনই মাতৃ ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। তাই নিজের একটু ভালো থাকার জন্য মাকে অনেকটা খারাপ রাখার কোনও মানে নেই। দুজনেই ভালো থাকুন দুজনকে নিয়ে, একে অন্যের আত্মা হয়ে।