Breaking Bharat: বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর প্রতি পার্বণে প্রতি জেলায় যেন এক আলাদা মেজাজ। প্রতি মাসে কিছু না কিছু বিশেষ উৎসব। বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে সেই চৈত্র পর্যন্ত। আজ বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রবেশ করব আমরা। মানে হেমন্তের শেষ আর শীতের শুরু ঠিক এই সময়েই পাড়া গ্রামের ঘরে ঘরে টুসু উৎসবের মেজাজ। অগ্রহায়ণের শেষ দিন থেকে পৌষের শেষ দিন অবধি রাঢ় বাংলার গ্রামে গ্রামে এই টুসু পূজিত হন। গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের মেয়েরা বা দু-চারটি ছোট ছোট পরিবারের মেয়েরা একসাথে প্রতি সন্ধ্যায় টুসু আরাধনায় মগ্ন থাকে (celebration of tusu festival)।
এবার জানা যাক টুসু কী? আর কোথায় হয়?
টুসু আসলে এক লৌকিক দেবী যাকে কুমারী হিসেবে কল্পনা করা হয়। প্রধানত কুমারী মেয়েরা টুসুপুজোর আয়োজন (Organized by Tusu pujo)করে থাকেন। আর মনস্কামনা পূরণের জন্য ব্রতী হন তাঁরা। রাজ্যের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা এবং বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগণা, ধানবাদ, রাঁচি, ও হাজারিবাগ জেলার কৃষিভিত্তিক উৎসব এটি। এই পুজোতে অনেক জায়গায় মূর্তি পুজো হয় অনেক জায়গায় মূর্তি বিহীন।ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়ায় অধিকাংশ স্থানে টুসু মূর্তির প্রচলন নেই, কিন্তু পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এবং বাঁকুড়ার খাতড়ার পোরকুলে টুসু মূর্তির চল আছে।
টুসু শব্দের মানে কী?
এই নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটা হল ধানের তুষ অর্থাৎ কিনা শীতের সময় যা জ্বালিয়ে গ্রামেগঞ্জে লোকেরা আঁচ পোহায়, সেই তুষ থেকেই টুসু নামটির উৎপত্তি। টুসু দ্রাবিড় অস্ট্রিক ভাষাবর্গের কোল, মুন্ডা, ওরাওঁ, সাঁওতাল, ভূমিজ, ভুঁইয়া, কুর্মি, মাহাতো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবী বলে প্রচলিত। তুষ দিয়েই পূজার ডালি সাজানো হয়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের রাজশাহীতে রাজোয়ারদের মধ্যেও টুসু পরবের চল আছে।
টুসু গান কী?
এ দিন মাঠ থেকে নতুন ধানের একটা গোছা মাথায় করে আনেন পাড়ার মেয়েরা। কুমোরদের বিশেষ কায়দায় তৈরি পোড়া মাটির খোলায় ধানের তুষ দিয়ে তার উপর গাঁদাফুল সাজিয়ে তৈরি করা হয় টুসুখোলা। সন্ধ্যা হলে অবিবাহিত মেয়েদের দল তুষের উপরে রাখে আলো-চাল, দূর্বাঘাস, সর্ষে, বাসক, আকন্দের মতো ফুল।
আরো পড়ুন- গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষার মরসুম, ছাদ থেকে চুঁইয়ে জল পড়ছে? কী মুশকিল! এবার উপায়?
তার পরে পাত্রটিকে হলুদ টিপ পরিয়ে পিঁড়ির উপরে বসিয়ে বাড়ির উঠোনে রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে তার চারদিকে বসে শুরু হয় গানের ঐক্যতান। এ সময়ে এক দলের সঙ্গে অন্য দলের মধ্যে গানের লড়াই চলে।টুসু গান আসলে গায়িকার কল্পনা, দুঃখ, আনন্দ ও সামাজিক অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করে সুরে ছন্দে লেখায়।
আরো পড়ুন- আচমকাই কখনও কানে মাছি বা পোকা ঢুকেছে ? যদি এমন হয় কী করবেন?
আরো পড়ুন- জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলো কেন দুঃখ দেয়? এমনটা হলে কি করা উচিত ?
‘আমার টুসু নেয়ে এল , কী বা পরতে দিব গো?
ঘরে আছে বেনারসী, সেটি বার করে দিব গো।
ওদের টুসু নেয়ে এল, ওরা কী বা পরতে দিবে গো?
ওদের ঘরে আছে ছিঁড়া ত্যানা, ওরা তাই বার করে দিবে গো’।