Breaking Bharat: ডিভোর্স মানে কি জীবন শেষ? কেন বারবার আঙ্গুল ওঠে মেয়েদের দিকে? ডিভোর্সি মেয়েরা অভিশাপ নয় বরং সমাজের লক্ষী।
একটা মেয়ের জীবন শুধুই কি বিয়ের মধ্যেই আবদ্ধ? তার বাইরে গিয়ে কোনো ভাবনা চিন্তা কি হয় না? কোন মেয়ের জীবনে একসঙ্গে অনেকগুলো বছর সুখে শান্তিতে স্বামীর ঘরে বসবাস করার সুযোগ হয়। একসঙ্গে থাকতে থাকতে সম্পর্ক নিবিড় হয়।
কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সেটা ঘটে না। তাই বলে সব ছেড়ে সব সময় মেয়েদের কেন দোষ হয় বলুন তো? ডিভোর্স হয়ে যাওয়া মানে কি মেয়েটা অপয়া ? সে কি কখনোই সৌভাগ্যের দিশারী হয়ে আসতে পারে না কারোর জীবনে?
ডিভোর্স মানে জীবনের ইতি নয়:
একটা মেয়ে অনেকটা লড়াই করে নিজের জায়গা তৈরি করে। সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাকে নিজের যুদ্ধটা করে যেতেই হয়। এরপর জীবনে এমন একটা অধ্যায় শুরু হয় যখন অনেকটাই নিজের থেকে বেশি অন্যের ওপর নির্ভর করে। এই অধ্যায় মেয়েদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ এই সময়টা একাধিক দায়িত্ব তাকে সামলাতে হয়। হঠাৎ করেই মেয়ে থেকে বউ , বউ থেকে মা আর পাশাপাশি সংসারের অগাধ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করাটা খুব একটা সহজ কাজ হয় না। তবু লড়াইটা করে যেতেই হয়।
এরপর যদি কোন সময় কোন একটা অঘটন বা দুর্ঘটনার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায় , এখন গোটা দোষটা গিয়ে পড়ে মেয়েটার উপর। যেন ডিভোর্স হওয়ার পেছনে মেয়েটাই একমাত্র দায়ী। রকেট সায়েন্স পৃথিবী জুড়ে দাপট দেখাচ্ছে, নিউক্লিয়াস সায়েন্স প্রযুক্তির উপর মানুষ আস্থা রাখতে শুরু করেছে।
নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জীবনকে সহজ করেছে কিন্তু আজও কিছু ভ্রান্ত ধারণা আর অন্ধ কুসংস্কার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে অন্ধকারের জরাজীর্ণতায়। এই পৃথিবীতে কার সঙ্গে কার সম্পর্ক টিকবে আর কোন সম্পর্ক অচিরেই ভেঙে যাবে সেই হিসেবে বোধহয় মানুষ কখনোই করে উঠতে পারবে না।
মনে রাখতে হবে, মাথার ওপরে ঈশ্বর বলে কেউ একজন আছেন যিনি প্রত্যেকটা মুহূর্তে হিসেব-নিকেশ করে কাজ করে চলেছেন। অথচ তাকে তোয়াক্কা না করে আমরা যখনই কোন খারাপ ঘটনা ঘটে পরিবারের মধ্যে, অমনি বাড়ির বউ বা মেয়ের দিকেই আগে আঙ্গুল তুলি। একবারও ভেবে দেখি না এতে তার কতটা কষ্ট হয় এবং তার ওপর কী পরিমানে অন্যায় করা হয়।
আরো পড়ুন – তিহার জেল: সব রকমের অপরাধের শাস্তির জন্য একটাই জেলে জায়গা মেলে?
চিরকাল দুঃখে দগ্ধ হয়ে মরার থেকে সম্পর্ককে আইনিভাবে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সুস্থ ভাবে জীবন বাঁচা সকলের কাম্য। কিন্তু এই কাজটা যখনই একটা মেয়ে করতে যায় তখন সমাজে নানা কটু কথা শুনতে হয় তাকে। ভাবতে এমন যেন গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে একজনেরই দোষ কাজ করেছে সেটা হল মেয়েটার।
ডিভোর্স কি কখনো একার কারণে বা একার সম্মতিতে হয়? ইতিহাসে কখনো এই ঘটনা ঘটেছে নাকি তা আইনিভাবে সম্ভব? সবকটা উত্তর না হবে তবুও প্রশ্ন তোলার শেষ হবেনা। ডিভোর্সি মেয়েকে মা-বাবা বিয়ে দিতে চাইলে তো আরো বিপদ। সে এতটাই নাকি অপরাধ যে অন্য কারো সাথে সংসার করার কোন যোগ্যতাই তার আর বাকি নেই।
আরো পড়ুন – কোন খাবার সত্যিই ভালো আর কোনটা খারাপ! জেনে নিন
অথচ মনস্তাত্ত্বিকরা বলেন ডিভোর্সি মেয়ে বোঝে সংসার ছেড়ে আসার কষ্ট। তাই দ্বিতীয়বার সেই পথে পা বাড়ালে সে অত্যন্ত যত্ন সহকারে সেই সংসারটি লালন করতে আর সংসার ধর্ম পালন করতে চায়। তাই শুধু শুধু এই মেয়েটিকে দোষারোপ না করে নিজের চিন্তা ভাবনাকে দোষারোপ করতে শুরু করুন।
পয়মন্ত, লক্ষ্মীমন্ত এই ভাবনাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কারণ আসল বিষয়টা হল মানুষটি কেমন সেটা জানা। প্রতিটা মানুষ জীবনে দ্বিতীয় বারের জন্য একটা সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাহলে যে মেয়েটার একবার ডিভোর্স হয়েছে তার ক্ষেত্রে সব নিয়ম গুলো কেন অন্যরকম হবে?
আরো পড়ুন – রাইনোপ্লাস্টি কী? কীভাবে ভোঁতা নাক ঠিক করবেন জানা আছে?
কখনো ভেবে দেখেছেন? সময় এসেছে কুসংস্কারকে ছুড়ে ফেলুন আর যা কিছু শাশ্বত, সুন্দর, সরল তাকে আপন করে সহজ ভাবে বাঁচুন আর অন্যকেও বাঁচতে দিন।