Breaking Bharat: জীবন আসে জীবন যায়, এভাবেই কালচক্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম (Breeding) এগিয়ে যেতে থাকে। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নারী এবং পুরুষের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণ। তা সে সব থেকে উন্নত জীব মানুষই হোক কিংবা যে কোন সরীসৃপ বা চতুষ্পদী। তবে আজকাল পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে যা শুনলে আপনিও চমকে যেতে পারেন। সেরকমই এক ঘটনার কথা বলব যা প্রজননের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানে বলতে পারেন এমন এক তথ্য আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যা জানার পর আপনি কিছুটা অবাক হবেন।
প্রাণের স্পন্দন পৃথিবীতে আসে কী ভাবে? খুব স্বাভাবিক ভাবেই আপনার উত্তর জানা আছে। কিন্তু যদি আপনাকে জানাই পুরুষ ছাড়াই বংশ বিস্তার করছে নারী! অবাক হচ্ছেন ?এটা গল্প নয় সত্যি। আকস্মিক ঘটনা নয়, প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। অবিশ্বাস্য রকমের এই ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে আপনার প্রিয় গলদা চিংড়ি (Lobster)। মৎসবিদরা বলছেন আজ থেকে প্রায় ১০ কোটি বছর আগে স্ত্রী গলদা চিংড়ি পুরুষ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা একে বলেন ফেয়ারি চিংড়ি (Fairy shrimp)।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কুনওয়াররা জীবাশ্ম বেডে ক্রিটাসিয়াস-পিরিয়ড থেকে মিঠা জলের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষকরা বিলুপ্ত মিঠা জলের চিংড়ির একটি অনন্য প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে “কুনওয়ারেল্লা পেটেটোরাম” । এই প্রজাতির স্ত্রী সম্ভবত যৌন সম্পর্ক ছাড়াই জন্মেছিল (Females reproduce without males)। যৌন সম্পর্ক ছাড়া কী করে জন্ম নিল এই কথাই ভাবছেন তো?
তাহলে আপনাকে জানাই বিজ্ঞানে পার্থেনোজেনেসিস বা অযৌন প্রজনন বলে একটি বিশেষ প্রজনন এর উল্লেখ আছে। এই প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ একটি নিষিক্ত ডিম থেকে বিকশিত হয়। এটি উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। বলতে পারেন প্রায়ই বিরল ঘটনা। কিছু প্রজাতি যেমন ভিপটেল টিকটিকি (lizard) পার্থেনোজেনেসিস থেকে উদ্ভূত হয়।
এখন জানাই বিজ্ঞানীরা কী বলছেন? ফ্রেডোনিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক এর জীবাশ্মবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক, সহ-গবেষক থমাস হেনা বলেছেন যে ফেয়ারি চিংড়ির জীবাশ্ম রেকর্ডে পার্থেনোজেনেসিস দেখা যায় না। তবে আধুনিক ব্রাইন চিংড়িতে দেখা গেছে। মিঠা জলের চিংড়িতে এই প্রথম এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এদের দেখতে কেমন হয় বলুন তো? আসলে কুনওয়ারা ফসিল বেডে ৪০টি ভিন্ন জীবাশ্মে এই নতুন প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়েছে। এই চিংড়ির জীবাশ্মগুলি চেনা-পরিচিত চিংড়ি মাছের মতো দেখতে নয়। বরং জানলে অবাক হবেন, আধুনিক সামুদ্রিক বানর বা আর্টেমিয়া স্যালিনা-এর সঙ্গে বেশি মিল আছে এদের। যা একটি ভিন্ন ধরণের ব্রাইন চিংড়ি (shrimp)।এই জীবাশ্মগুলি গভীর, যা থেকে বোঝা যায় যে তাদের একটি দীর্ঘ শরীর এবং শরীরে কয়েক সেট পা থাকতে পারে।
আরো পড়ুন- Swinging arms while walking : মানুষ হাঁটার সময় দুই হাত সামনে পিছনে নাড়ায় কেন?
এ কারণে জীবাশ্মটি দেখতে ছোট ফার্নের মতো। গবেষকরা বলছেন যে বেশিরভাগ অমেরুদণ্ডী প্রজাতিকে পুরুষ মরফোলজি দিয়ে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। কারণ এই প্রজাতির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা তাদের অন্যান্য প্রজাতি থেকে আলাদা করে থাকে। এই যেমন ধরুন যে পুরুষদের বড় অ্যান্টেনা থাকে, তারা সেটি ব্যবহার করে যৌনভাবে প্রজনন করে।
আরো পড়ুন- Dog : প্রাণী হিসেবে কুকুরের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কেন কুকুর মানুষের এতো প্রিয় হয়ে উঠল?
এর সঙ্গে অবশ্য যৌনাঙ্গও রয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা করা ৪০টি জীবাশ্ম নমুনার কোনটিতেই এই বৈশিষ্ট্যটি ছিল না।ডিমের পাউচগুলি গবেষকদের কাছে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। যার মানে এই চিংড়িটি শুধুমাত্র একটি মহিলা গ্রুপ থেকে ছিল।
আরো পড়ুন- Love : প্রেম মানে কি শুধুই যন্ত্রণা? বুক ফেটে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া কান্নার নামই কি প্রেম?
যারা অযৌনভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। অযৌনদের বংশবৃদ্ধির একটি কারণ হল যে প্রজাতিগুলি তা করে তারা সবসময় তাদের জিন অনুসারে এগিয়ে যায়, তা সেগুলো ভাল হোক বা খারাপ। তাহলে কি এবার তাতে চিংড়ি পড়লে, এই প্রতিবেদনের কথা মনে পড়বে?