Breaking Bharat: সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক বোরোলিন তো নিশ্চয়ই ব্যবহার করেন, কিন্তু ইতিহাস জানেন কি? বাঙালি মানেই বোরোলিন, ঠিক এই ভাবেই একটা অ্যান্টিসেপটিক বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে জুড়ে গেছে সেই কোন অতীত থেকে।
শ্রাবন্তী মজুমদারের কণ্ঠে গাওয়া গানের এক কলি বোরোলিনকে যেন তার পরিচয় খুঁজে এনে দিয়েছিল। কেটে যাওয়া থেকে ফেটে যাওয়া শরীরের যে কোন সমস্যায় বোরোলিনের অবাধ ব্যবহার আর বিচরণ। কিন্তু এর ইতিহাস জানতে গেলে যে আপনাকে বৃটিশ পিরিয়ডে যেতে হবে সেটা জানেন কি?
সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক বোরোলিন:
যখন ইংরেজদের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত ভারতবাসী বিদেশী দ্রব্য বয়কটের ডাক দিয়েছে তখনই আবির্ভূত বোরোলিন। সাল ১৯২৯, জিডি ফার্মাসিউটিক্যালে গৌরমোহন দত্ত প্রথম তৈরি করেন ‘বোরোলিন‘। যাত্রা শুরু সেই থেকেই। সেই থেকেই দেশীয় ক্রিম বনাম বিদেশী পণ্যের লড়াই শুরু (BOROLINE Antiseptic Ayurvedic Cream)।
আর সেই প্রতিযোগিতায় বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছে বোরোলিন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে গৌরমোহন দত্ত বাঙালির একটি নিজস্ব পণ্য তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এমন কিছু সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন যাতে মিশে থাকবে বাঙালির স্পন্দন, বাঙালির আবেগও। আর তিনি সেই কাজে পুরোপুরি সফল সে কথা বলাইবাহুল্য।
ব্রিটিশরা যখন ভারতকে নিজের পায়ের তলায় রাখতে চাইছে দিকে দিকে বিপ্লবীরা গর্জে উঠছে প্রতিবাদ প্রতিরোধে। ইংরেজি আভিজাত্যের সঙ্গে দেশীয় আবেগের অসম লড়াই। ১৯২৯ সালে যে সুরভিত সুবাস বাঙালি জীবনের স্পর্শ পায়, বছরের পর বছর ধরে সেই ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা এতোটুকু কমেনি।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা অবস্থায় কী করে একটি দেশ জাতীয় অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের আইকন হয়ে উঠতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছিল এই দেশীয় ক্রিম বোরোলিন। গ্রামের দিকে অবশ্য এটি এখনও “হাতিওয়ালা ক্রিম” হিসাবে পরিচিত। কারণটা অবশ্যই বোরোলীনের লোগো।
আরো পড়ুন – খেলোয়াড় একজন করে শিশুকে নিয়ে কেন মাঠের দিকে রওনা দেন?
আসলে হাতি যেমন একদিকে শক্তির প্রতীক তেমনি স্থিরতা বা স্থায়িত্বকে প্রমান করে। বোরোলীন আসলে তো তেমনটাই। অনেকেই এই নাম কোথা থেকে এসেছে তা বুঝতে পারেন না। আসলে বরিচ পাউডার থেকে “বোরো” এবং ল্যাটিন শব্দ “অলিন” অর্থাৎ ওলেমের একটি রূপ যার অর্থ হল তেল।
আরো পড়ুন – সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? মা মনসার বাহনে যথেষ্ট শ্রদ্ধা রাখেন?
ভাবতে অবাক লাগে দীর্ঘ ৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালি মননে আর জীবনে এক অবিচল বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রেখেছে বোরোলিন। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট প্রায় দুশো বছরের পরাধীনত্ব কাটিয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করলে, বিনামূল্যে এক লক্ষ বোরোলীন বিতরন করা হয় সেইদিনই। ব্রিটিশ শাসনকালে দেশীয় দ্রব্য কে টিকিয়ে রাখা খুব একটা সহজ ছিল না।
আরো পড়ুন – ভারতের মাটিতে আইফোন তৈরি হবে? টাটা গোষ্ঠী এ রকমই এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানেন?
কিন্তু সেটা শুধুমাত্র বাঙালিদের দক্ষতায় সম্ভব হয়ে যায়। শোনা যায় জওহরলাল নেহরুও নাকি ব্যবহার করতেন বোরোলিন। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, এর চাহিদা দেশ ছড়িয়ে এখন বিদেশেও। প্রথম থেকেই মধ্যবিত্তের আবেগের নাম হয়ে উঠতে পেরেছিল এই ক্রিম। এত প্রলোভনের মাঝেও ত্বকের যেকোনো সমস্যায় সবার আগে ভরসা সেই বোরোলিন।
গৌরমোহন দত্ত অর্থাৎ যিনি ‘বোরোলিনের আবিষ্কারক‘ তার বাড়িকে বোরোলিন হাউস বলেই মনে করা হতো। কারণ ব্রিটিশ পিরিয়ডে সেই বাড়িতেই এই ক্রিম মজুদ থাকতো। আর আজকের পৃথিবীতেও ছোট থেকে বড় বাঙালি বাড়ির যেকোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ায় সেই বোরোলিন।