Breaking Bharat : Africa : গোটা বিশ্বে মাতৃভাষা দিবস পালনের পেছনে রয়েছে বাংলা ভাষা নিয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। এদিক থেকে নিঃসন্দেহে গর্বের যে, ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেক্ষেত্রে গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছি বাংলা ভাষাই (I have shown the way to the whole world in Bengali language)।
তবে ভারত বা বাংলাদেশের বাইরে, তাও আবার ভিন মহাদেশের কোনও রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা বাংলা হতে পারে, তা হয়তো অনেকে ঘূণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেন না। অথচ, আজ নয়, আরও দু’দশক আগে আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা ভাষা (Bengali has been recognized as the official language in Sierra Leone, Africa)। কেন জানেন?
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বাংলাদেশ ও সিয়েরা লিওনের ভিন্নতা থাকলেও জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সুবাদে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি হলে ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে সরকারিভাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু কেন? কারণ খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে আফ্রিকার গৃহযুদ্ধের সময়কালে।
পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী সিয়েরা লিওন দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। ব্রিটিশদের অত্যাচারে সেই দেশের জনগণের জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। যদিও ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল সিয়েরা লিওন ব্রিটিশ শাসন থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি লাভ করে এবং স্বাধীন দেশগুলোর তালিকাভুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্যার মিল্টন মারগাই। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল।
কিন্তু আচমকাই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে নতুন করে জটিল সমস্যার মুখে পড়ে সিয়েরা লিওন। ক্রমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিয়েরা লিওনে। ইতিহাস সাক্ষী, এটি আফ্রিকার সবচেয়ে রক্তাক্ত ও ভয়াবহ গৃহযুদ্ধগুলোর অন্যতম। প্রায় ১১ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় ৫ লক্ষ নাগরিক নিজেদের বাসস্থান হারায়।
তবে ১১ বছর পর যুদ্ধ থামার নেপথ্যে রয়েছে আর এক ইতিহাস। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো একত্রিত হয়েও কোনও সুরাহা করতে না পারায় ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশ জাতিসংঘের এই শান্তি মিশনে যোগদান করেন। জাতিসংঘের প্রেরিত প্রথম দলে ৭৭৫ জন বাংলাদেশি সেনা ছিলেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি বাংলাদেশের সর্বমোট ১২ হাজার সেনা শান্তি কমিশনের সদস্য হয়ে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধপরবর্তী দেশের জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন- Tube well Water : নলকূপের জল খান? আর্সেনিক মুক্ত জল খেতে কত গভীর নলকূপ প্রয়োজন?
আফ্রিকার এই দেশের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার নেপথ্যে ছিল সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা। ধীরে ধীরে স্থানীয় লোকজনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথেও পরিচিত হতে শুরু করে বাংলাদেশের সেনারা। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও বাংলা ভাষার আদানপ্রদান শুরু হয় সেই সময়। ক্রমেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে সিয়েরা লিওনের (Gradually, Sierra Leone developed close ties with the Bangladesh Army and the Bengali language)।
আরো পড়ুন- Types of bird nests : কোন পাখির বাসা সবচেয়ে সেরা? বাবুই, চড়ুই, টিয়া, না বুলবুল পাখির?
সিয়েরা লিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দায়িত্ব সামলানো প্রায় ৩১টি দেশের সেনাদলের মধ্যে সিয়েরা লিওনের নাগরিকদের মন জয় করার দিক থেকেও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ সেনাদল। শান্তি কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০২ সালের ১৮ জানুয়ারি, অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর ৯ মাস পর সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
আরো পড়ুন- Tongue : শরীর অসুস্থ? ডাক্তার কী বললেন? জিভ দেখতে চেয়েছেন নিশ্চয়ই, কেন বলুন তো?
কিন্তু ততদিনে ভাষার আদান-প্রদান তথা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রসার ঘটে ওই দেশের বহু অঞ্চলে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেদিনের বন্ধুসুলভ আচরণ ও সম্প্রীতির জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ভোলেনি সিয়েরা লিওন (Sierra Leone did not forget to thank the Bangladesh Army for its friendly demeanor and harmony that day.)। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমদ তেজান কাব্বার তৎপরতায় বাংলা ভাষা অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।