Breaking Bharat: চন্দ্রশেখর ঘোষের ‘বন্ধন ব্যাঙ্ক’ (Bandhan Bank) তৈরির পেছনের কঠিন লড়াই জানেন? চূড়ান্ত হতাশায় জীবন শেষ করে দেওয়া থেকে জীবনে সেরা সেরা হওয়া- অনুপ্রেরণার নাম চন্দ্রশেখর ঘোষ (Chandrasekhar Ghosh)
ছাপোষা মধ্যবিত্ত এক বাঙালি যে আর ৪-৫ জনের মতো কিছু করে দেখাতে চেয়েছিল। বাংলা আর বাঙালি যে আজ ভাবে গোটা বিশ্বের মানুষ সেটা কাল ভাবে এ কথা সর্বৈব সত্য। সে কারণেই দিকে দিকে বাঙালির জয়জয়কার।
বিখ্যাত বাঙালি চন্দ্রশেখর ঘোষের বন্ধন ব্যাঙ্ক:
বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ব্যাংকে টাকা জমিয়ে যখন নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার কথা ভাবেন, তখন এক বাঙালি তৈরি করে ফেলল একটা গোটা ব্যাংক। শিরোনামেই তার নামের উল্লেখ আছে এবার তার সঙ্গে পরিচয় করে জীবনকে সমৃদ্ধ করার পালা শুরু।
গল্পের মত বললেও সত্যি ঘটনা এটাই যে মানুষের অসাধ্য কিছুই নাই। সাড়ে চারহাজার কোটি টাকার বিনিময়ে আইডিএফসি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়ে এসে তা ফের প্রমাণ করে দেখালো বিখ্যাত বাঙালি চন্দ্রশেখর ঘোষের বন্ধন ব্যাঙ্ক।
কীভাবে তৈরি হল বন্ধন ব্যাঙ্ক? (Bandhan Bank):
জীবন শেষ করতে চেয়েছিলেন একটা সময়, আজকেই সাফল্যের চূড়ায় পৌছে গেছেন তিনি। আগরতলার এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্ম হয়েছিল ছেলেটার। বাবার ছিল মিষ্টির ব্যবসা , সেই মিষ্টির দোকানের সকাল থেকে কাজ করার পর গুটিগুটি পায়ে স্কুলে যেত ছোট্ট চন্দ্রশেখর। সংসার কোনদিনই অতি সচ্ছল ছিল না। কিন্তু গরিবের মেধা বোধহয় একটু বেশিই হয়।
তাই মেধাবী বুদ্ধিমান চন্দ্রশেখর ঘোষের স্বপ্ন ছিল অনেকটা বড় হওয়ার।১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর সেই দেশেরই এক আন্তর্জাতিক এনজিও-র কর্মী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সেই বছরই মারা যান চন্দ্রশেখরের বাবা।
এরপর খুব স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়ে চন্দ্রশেখরের কাঁধে। প্রতিদিন মানুষের খাবারের অসহায়তা তার চোখ এড়াতো না। শুধুমাত্র ভিক্ষা দিয়ে বা সাহায্য করে যে মানুষের অবস্থার উন্নতি হবে না সেটা স্পষ্ট বুঝেছিলেন। তাই এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যাতে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়।
ব্যাঙ্ক থেকে দু’লক্ষ টাকা ধার করে ‘বন্ধন’ নামে একটি এনজিও চালু করেন প্রাথমিকভাবে। মাত্র দু’জন কর্মী এবং স্ত্রী নীলিমাকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধন-এর সেই পথ চলার শুরু। ব্যাংক মানে মানুষের নিশ্চিন্ত থাকার এক সংস্থা বটে যা প্রয়োজনে কাজে আসবে। এমন এক জায়গা যেখানে বিনিয়োগ করে সুরক্ষা নিয়ে আর ভাবতে হবে না প্রয়োজনে সাহায্যও পাওয়া যাবে।
বন্ধন ব্যাংক এর স্বল্প হারে সুদ নিয়ে ঋণ দেওয়া:
চন্দ্রশেখর ঘোষ বুঝতে পেরেছিলেন মূলধারার ব্যাঙ্কগুলি গ্রাম বাংলার মানুষদের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ । আসলে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। অসাধু মানুষেরা কীভাবে গরিবদের প্রথমে ঋণ দিয়ে পরে সুদ বাড়িয়ে তাদের উপর অত্যাচার করে,
সেই সবটা চোখের সামনে দেখে বুঝেছিলেন মানুষকে ভালো রাখতে গেলে তার পাশে দাঁড়াতে গেলে আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সকলেই জানেন বন্ধন ব্যাংক এর স্বল্প হারে সুদ নিয়ে ঋণ দেবার কথা। অনেকেই আজকাল নিজেদের ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করার জন্য পুঁজি হিসেবে বন্ধন ব্যাংকের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
তাদের বিশ্বাস আর ভরসার জায়গা তৈরি করেছেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ সহজ ছিল না। এই ব্যাংকের শুরুর দিকে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো গরিব মানুষের বিশ্বাস আর ভরসা জিতে নেওয়া । এই লক্ষ্য নিয়ে স্বয়ং চন্দ্রশেখর ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী লোকের বাড়ির দরজায় দরজায় ঘুরে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করতেন।
আরো পড়ুন – Momo Recipe : মোমোর স্বর্গীয় স্বাদ, আহা! কেন মোমোকে নেপালি খাবার বলা হয়? জানেন?
এর জন্য নানা বাধাও এসেছে জীবনে, পেয়েছেন হুমকি এমনকি তাদের নামে মিথ্যে অভিযোগও করা হয়েছে। তবুও থেমে থাকেননি তারা এগিয়ে গেছেন ভালো আগামী গড়ার লক্ষ্যে। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে ২০০৭ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি প্রতিষ্ঠান যারা ক্ষুদ্র ঋণ দেয় তাদের মধ্যে বন্ধন ব্যাংক দেশে প্রথম বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
আরো পড়ুন – Zomato : এক ক্লিকে বাড়িতে এসে গেল খাবার? জোম্যাটোর জয়জয়কার হল কী ভাবে?
২০১৪ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পর সোজা এনজিও থেকে ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত হয় বন্ধন। অফিসিয়াল আজ থেকে আট বছর আগে ২০১৪ সালে ব্যাঙ্ক হিসেবে পথ চলা শুরু বন্ধনের। ভাবলে অবাক হবেন এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের ২৭টি রাজ্যে ৬১৫টি শাখা এবং ২০৫টি এটিএম পরিষেবা চালু করে ফেলে বন্ধন ব্যাংক। আজ প্রায় ১.৯ কোটি গ্রাহকদের পরিষেবা দিচ্ছে এই ব্যাঙ্ক।
আরো পড়ুন – Gold : সোনার আংটি আবার বাঁকা? তাহলে কি সোনায় বিনিয়োগ করা ভুল?
হেরে যাওয়া নয়, হার না মানসিকতার জয় সর্বত্র তা প্রমাণ করে দিয়েছে এই ব্যাংক। তাই চন্দ্রশেখর ঘোষ একজন বাঙালি হিসেবে যা করে দেখিয়েছেন বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছেও তা বিস্ময়ের বিষয়।