Breaking Bharat: অহংকার পতনের মূল! কখনোই নিজেকে নিয়ে অহংকার করবেন না, তাহলেই সব শেষ! শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেও প্রমাণিত, জানেন কি?
পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। চিরকাল এই পৃথিবী সবলেরা শাসন করে এসেছে। মানুষ নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে তাই শ্রেষ্ঠত্বের তকমা পেয়েছে। অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে বুদ্ধির লড়াইয়ে মানুষ সবার আগে এগিয়ে এসেছে।
এভাবেই অন্যকে পরাজিত করে আর নিজেকে জয়ী করতে করতে এক অদ্ভুত অহং বোধ নিয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বের বুকে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। সাহিত্যে, কাব্যে, লোকাচারে, শাস্ত্রে – অহংকারকে পতনের মূল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যুগে যুগে তা প্রমাণিতও হয়েছে।
জীবনে ভালো মানুষ হওয়াটা খুব দরকার। প্রকৃত অর্থে ভালো হতে গেলে কখনোই নিজেকে নিয়ে অহংকার করার অবকাশ পাবেন না। এই গুণ দিয়ে মানুষ চেনা যায় বটে। যারা প্রকৃত অর্থে গুণী তারা মাথা নিচু করে থাকেন। আর যাদের কিছুই করার নেই তাদেরই ফাঁকা বুলি আকাশ বাতাস চমকায়।
কথায় বলে না ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। দেখবেন যে গাছের ফল নেই সেই গাছ তরতরিয়ে বেড়ে চলেছে। কিন্তু যার মধ্যে ফল আছে সে ফলের ভারে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনটাও একেবারে এরকমই। আসলে বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু প্রবাদ আমাদের বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
ওই যে প্রচলিত একটা বাগধারা আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী, যাদের মধ্যে জ্ঞানের পরিধি কম তারাই সবথেকে বেশি অহংকারী। একবার অহংকারের বীজ শিকড় থেকে বড় গাছ হয়ে উঠলে পতন অবসম্ভাবী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বুঝবেন কী করে? আসলে অহংকার একটা মানসিক রোগ (In fact, pride is a mental disease)।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে সবজান্তা বা সেরার সেরা মনে করে। আর কেউ যদি সেরা হয় তাহলে তার মধ্যে একটা দম্ভ তো আসেই। আমি সব জানি এই অনুভূতি মাথার মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিতৃপ্তির জন্ম দেয়। তখন মনে হয় আমার জানার যদি কিছু না বাকি থাকে তাহলে তো আমি এক নম্বরে আছি।
আমাকে হারাবার কেউ নেই। অতএব যা খুশি করতে পারি বলতে পারি। সাইকোলজিক্যাল থিওরিতে এই ভাবনার অধিকারী মানুষকেই অহংকারী বলা হয়। এই সময় মানুষ দিব্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। কাকে কী বলছে , কীই বা করছে কিছুই বুঝতে পারেনা। যেহেতু বিষয়টার জন্ম সম্পূর্ণভাবে মাথা থেকে অর্থাৎ মন থেকে তাই মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো একটু দেখে নেওয়া যাক।
মানুষের ব্যবহার মানুষের পরিচয়। কিন্তু এই ব্যবহার যদি বদলে যায় তাহলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটা পরিবর্তন চোখে পড়ে। অহংকার বোধ যাদের মধ্যে বেশি তাদের এই পরিবর্তন খুব তাড়াতাড়ি হয়। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মন নিয়ে গবেষণা করার পর, মনোবিজ্ঞানীদের তিন ধরণের অহংকারের সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমত, ব্যক্তিগত অহংকার অর্থাৎ নিজের ঢাক নিজে পেটানো।
নিজেকে সৃষ্ট প্রমাণ করার জন্য অনেক বেশি বেশি করে বা মিথ্যে কথা বলে নিজের প্রশংসা করা, সবার সামনে। সোজা কথায় বাস্তবের তুলনায় একটু বেশিই নিজের ক্ষমতা, বৈশিষ্ট্য বা কৃতিত্বের প্রতি এক ধরণের অতিরঞ্জিত মনোভাব পোষণ করেন এই ধরনের অহংকারী ব্যক্তিরা।
আরো পড়ুন- A. R. Rahman : দিলীপ কুমারকে চেনেন? অস্কারজয়ী সুরকার নিজের নাম বদলে সুপারষ্টার! কীভাবে?
এবার বলি প্রতিযোগিতামূলক অহংকারের কথা। একবার এই মনোভাব নিজের ভেতরে বাসা বাঁধলে সব সময় অন্যকে ছোট করে দেখতে ইচ্ছে হয়। অর্থাৎ পৃথিবীতে যাই ঘটুক না কেন মনে হয় সেই ঘটনা আমি আরো ভালো করে ঘটাতে পারতাম, কারণ আমি সেরা। এর পাশাপাশি অবশ্য সব থেকে বেশি ক্ষতিকারক বিরোধী অহংকারও রয়েছে।
আরো পড়ুন- Stomach pain : পেটে যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে? গ্যাসের ব্যথা ভেবে বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না!
এতে মানুষ নিজেকে যত না উপরে তুলতে আগ্রহী হয় তার থেকে বেশি ব্যস্ত থাকে অন্যকে নিচু প্রমাণ করতে। এটা সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একজন অহংকারী মানুষ সবসময় নিজেকে কেন্দ্র করে বাঁচতে ভালোবাসেন । এটা আসলে একটা নেশার মতো।
নিজেকে ভালো বলতে বলতে বা ভাবতে ভাবতে কখন যে সীমাটা ছাড়িয়ে যায় সেটা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই একটা কথা শুনে বড় হয়েছি আমরা প্রত্যেকেই, “আপনারই বড় বলে বড় সে নয়/লোকে যারে বড় বলে বড় সে হয়”।
আরো পড়ুন- Dried fish : শুঁটকি মাছ আসলে কি? কোন মাছকে আপনি শুঁটকি মাছ বলবেন?
অর্থাৎ যার মধ্যে গুণ আছে বা যে সেরা তার প্রশংসা তো অন্যরা করবে, নিজেকে কেন করতে হবে? আসলে কি বলুন তো অহংকারী মানুষেরা (Arrogant people) সব সময় নিজেকে গুরুত্ব দিতে চান। সে কারণে অন্যের থেকেও গুরুত্ব পেতে অভ্যস্ত তারা। দিনের পর দিন এই ঘটনা চলতে থাকলে ব্যাপারটা মাথার উপরে উঠে যায়।
আরো পড়ুন- hilsa : মাছের রাজা ইলিশের পুষ্টিগুণ নিয়ে আপনাকে দেব কিছু চমকপ্রদ তথ্য
অ্যাটেনশন পেতে সবাই চায় কিন্তু জোর করে বা মিথ্যে বলে কিংবা অন্যকে ছোট করে নিজের দিকে ফোকাস ঘোরানো আসলে মুর্খামি। তাই প্রতিবেদনের শেষে বলাই যায় সব অহংকারী মানুষই আসলে মূর্খের স্বর্গে বাস করেন। কারণ প্রকৃত জ্ঞানী এবং গুণীদের কোন দম্ভ থাকেনা।