Breaking Bharat: কী করে একটা গোটা গ্রাম রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে যেতে পারে? রাতের অন্ধকারে আজও কি ঘটে আজব ঘটনা? ভুতুড়ে প্রভাবে ব্যাপারটা হয়ে যেতে পারে কি একটা গোটা গ্রাম?
পৃথিবী জুড়ে একাধিক অজানা ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তু যখনই আমরা সেই বিষয়গুলোর সম্পর্কে জানতে পারি একাধিক প্রশ্ন মনের মাঝে জায়গা করে নেয়। আজকে যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চলেছি আমরা সেটা কিছুটা হলেও ভুতুড়ে বা হয়তো আজব। তবে এটা নিশ্চয়ই মানবেন ভূত বিষয়টার প্রতি একটা কৌতূহল আমাদের সবার আছে।
হাসির কৌতূহল থেকেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে কী করে একটা গোটা গ্রাম রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে যেতে পারে? এমন ঘটনা ঘটে দুবাইয়ে। যে শহরটা ঝলমলে, প্রাণবন্ত, উন্নতির শীর্ষে বসে আছে সেখানেই এমন আজব কান্ড (Al Madam is a mysterious village)।
গ্রাম রাতের অন্ধকারে জাস্ট ভ্যানিশ?
একটা জলজ্যান্ত গ্রাম রাতের অন্ধকারে জাস্ট ভ্যানিশ এও কি সম্ভব? কিন্তু অসম্ভব সে কথাই বা বলবেন কী করে? কারণ দিনের আলোয় তো স্পষ্ট দেখা যায় সেই গ্রামকে। ল্যাম্বরগিনি, বুর্জ খলিফা নিয়ে ক্রমাগত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া একটা শহরে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে সেটা বোধহয় কেউ কল্পনাকেও আনতে পারেন না।
ঝলমলে গ্ল্যামারাস জীবনযাত্রার পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটা বড় অংশ জুড়ে কিন্তু মরুভূমির বিস্তার। আর এখানেই রয়েছে সব থেকে রহস্যময় গ্রাম। আমরা নই এই গ্রামটিকে রহস্যময় আখ্যা দিয়েছেন নৃতত্ত্ববিদরাই। রাতে ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া গ্রামের নাম জানতে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করছে?
রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে যাওয়া গ্রামের নাম:
উত্তর হল আল মাদাম। দুবাই থেকে এক ঘণ্টারও কম দূরত্বে এই গ্রাম। শারজার সীমান্তবর্তী আল মাদাম গ্রামটি বেশ অনেকদিন ধরেই পরিত্যক্ত হিসেবেই রয়েছে। যখনই ভুতুড়ে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায় তখনই বিজ্ঞানীরা রহস্য উদঘাটনের জন্য সেখানে গিয়ে গ্রামটি পর্যবেক্ষণ করেন।
বিজ্ঞানীরা সেই গ্রামে পৌঁছে জানতে পারেন যে বেশ কিছু বছর আগে সেখানে একটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সেই রোগ নাকি এতটাই ছোঁয়াচে যে পারদপক্ষে কেউ সেই গ্রামের আশেপাশে যাওয়ার সহজও করতো না। তখন থেকে কিছুটা ব্রাত্য এই গ্রাম। যেহেতু মরুভূমির মধ্যে গ্রাম তাই বালির ঝড়ে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র সবটাই ঢেকে যায় মাঝেমধ্যে।
তবে সেই গ্রামে কেউ থাকেন না। বিজ্ঞানীরা সেখানে গিয়ে দেখেছেন দরজা-জানলা খোলা জিনিসপত্র এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছে সেই গ্রামের বিভিন্ন ঘরে। থেকে আন্দাজ করা হয় যে তাড়াহুড়োর মধ্যেই গ্রাম ছাড়া হয়েছেন গ্রামবাসীরা।
এটা যে ভুতের গ্রাম হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । যদিও অতিপ্রাকৃতিক কারণেও এই গ্রামের মানুষ সবকিছু ছেড়ে চলে গেছেন এইরকম বিশ্বাস কোথাও কোথাও রাখা হয়। বিভূতি বিজ্ঞানীরা খোঁজখবর করতে গিয়ে এই গ্রামের যে ইতিহাস খুঁজে পেয়েছেন তা থেকে অনুমান করা হয় যে ১৯৭০-এর দশকের মধ্যভাগে গ্রামটিতে বসতি গড়ে ওঠে।
এবং মরুভূমির বালি ঝড়ের কারণেই গ্রামবাসীরা এই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। যদিও এই মতের উপর একাধিক প্রশ্ন আছে। এবং এই সিদ্ধান্ত পরিক্ষিত বা প্রমাণিত নয়। অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন মরুভূমিতে যেহেতু বালির ঝড় হয় তাই রাতের দিকে সেই বালির স্তুপে গ্রাম ঢাকা পড়ে যায় সেই কারণেই তার দৃশ্যমানতা থাকে না।
সকালেই কী করে সেই বালি সরে যায়?
এতে আবার একদম বিজ্ঞানী প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে সকালেই কী করে সেই বালি সরে যায়? কারণ সকালে স্পষ্ট ভাবেই দেখা যায় গ্রামটিকে। আর তাছাড়া প্রত্যেক দিন রাতে এবং প্রত্যেকদিন সকালে একই ঘটনা কী করে ঘটবে? আল মাদামে মূলত বেদুইনদের একটি উপজাতি আল-কুতবিদের বাস ছিল বলে জানা যায়। এর পাশাপাশি অন্যান্য উপজাতিরাও সেখানে বসবাস করেছেন বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুন – পিকনিক ছাড়া শীতকাল? কিন্তু বাঙালির চড়ুইভাতির চর্চা বিশ্বজুড়ে, এটা কেমন করে সম্ভব?
বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে এই গ্রাম। কোনও কোনও বিজ্ঞানী দৃষ্টিভ্রমের কারণে গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিলেও সাধারণ মানুষ তা মানতে নারাজ। যদিও নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে দুবাইয়ে যেমন অর্ধেক মরুভূমি, তেমনই রয়েছে সমুদ্র।
আরো পড়ুন – এই সৌধের ভেতরেই আছে কিছু রহস্যময় দরজা! বন্ধ দরজা পেরিয়ে অন্য বিশ্বের খোঁজে বিজ্ঞানীরা!
এবার ভৌগোলিক কারণের দিক থেকে বিচার করলে আমরা সবাই জানি যে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাস দ্রুত গরম হয়, আর উপরের দিকের বাতাস সমুদ্রের কারণে ঠান্ডা থাকে। তাই যখন আলোর প্রতিসরণ নীচের দিকে হয়, তখনই মনে হয় গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। অবশ্য আল মাদামের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ওই গ্রামে প্রতিরাতে অস্ত্র হাতে এক মহিলার আত্মা ঘুরে বেড়ায়।
আরো পড়ুন – যেখানে ‘মা’ ডাকের আলাদা টান আছে, সেখানে সম্বোধন কি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়?
আমার কোন কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাসকে সমর্থন করি না বা তাকে প্রশ্রয় দিই না। গ্রামটি যে রহস্যময় এবং সেই রহস্যের উদঘাটন আজও হয়নি তা অবশ্যই বলতে হয়।