Breaking Bharat: বাস্তবে কখনো ভূত দেখেছেন? আদৌ ভূতের (Ghost) অস্তিত্ব সম্পর্কে কতটা সন্দিহান আপনি? ভূতে বিশ্বাস করেন ? ভূত কিন্তু নিমেষে অন্য জগতে নিয়ে যেতে পারে আপনাকে!
গুপি বাঘার গল্পটা মনে পড়ে? আমলকি আর হরিতকি এই দুই গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে জঙ্গলে ভূতের রাজার দেখা পেয়েছিলেন এনারা। আর শুধু দেখা নয় এমনই সৌভাগ্য, যে পেয়েছিলেন ভূতের রাজার দেওয়া তিনটি জবর বর। কিন্তু সেটা তো সিনেমায়।
ভূতে বিশ্বাস করেন? (Ghost ):
যারা বলছেন হ্যাঁ, তারা ঠিক বলতে পারবেন কেমন দেখতে হয়? আসলে বিজ্ঞান বলছে ভূত বলে কিস্যু নেই। এখন সবটাই কি মনের ভুল?
ছোট থেকে একটা কথা শুনে আমরা বড় হই, সেটা হল বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। আসলে কিছু সময় শুধু কথার পরে কথা বলতে আর কথার তাল মেলাতে তর্কের খাতিরে যুক্তি খাড়া করে অনেকে। অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় তার কোনও ভিত্তি নেই। এই ভূত বিষয়টা অনেকটা সেরকম।
ছোটবেলা থেকে বাড়ির বড়রা এই মিথ তৈরি করে শিশু মনে একটা চরিত্র সৃষ্টি করেন যাতে বাচ্চাদের কোনও একটা বস্তু বা জিনিসে ভয় থাকে। আজ আমরা এ কথা খুব ভালো করেই জানি যে ভয় থেকে অনেক কার্যসিদ্ধি বা অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় (About the existence of ghosts)।
আসলে এটাই বোধহয় সত্যি যে এই গল্পকথা আর কল্পকাহিনীতে ভূতের দাপুটে অস্তিত্ব বর্তমান (Ghost in fiction)। অনেকে আবার ভগবানের সঙ্গে ভূতের তুলনা তিনি বলেন দুই সত্যি। কিন্তু চাক্ষুষ করা গেছে কিনা এ নিয়ে আস্তিক বা নাস্তিক মন ব্যাখ্যা দিতে পারেনা। অবিশ্বাসী ভাবনা থেকে অবশ্য অনেক কথাই বলা যায় কিন্তু বিজ্ঞান বলে এবং শোনে যুক্তিগ্রাহ্য কথা ও তথ্য।
জানেন অশরীরী ঠিকানা কোথায় ?
শাকচুন্নি, ব্রহ্মদৈত্য, মামদো, গেছো, পেতনি – কত নাম আর ভ্যারাইটিজ জানতে চান আপনি? তালিকা অনেক লম্বা। এখানে বলে রাখা ভালো এগুলো সবই বাংলায় ভূত। জানেন তো এদের অশরীরী ঠিকানা? কেয়ার অফ বেলগাছ, শেওরা গাছ, তেঁতুল গাছ। তাল গাছও ভূত থাকে।
আসলে আগে গ্রামগঞ্জে শৌচাগার বলতে সবাইকে মাঠেই যেতে হত। রাতের অন্ধকারে এই সুখক্রিয়া কর্মটি সারতে বেলগাছ বা তালগাছের তলায় বসলে বিপদ তো মাথায় চড়ে বসবেই। তাই না! এইজন্য গুরুজনদের মানা থাকে এইসব গাছের তলায় সুখক্রিয়া করো না।
শেওড়া গাছে ভূতের উত্পাত?
যাদি এই বারণ না শোনা হয় তার কারণে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মতো আরও একটি ভূত তৈরি করা হয়। ব্রহ্মদৈত্যর। শেওড়া গাছেও বেশ ভূতের উত্পাত রয়েছে। যত ভূতের গল্প দেখবেন শেওড়া গাছেই। এটা কেন? ওই যে শুরুতেই বলেছি বিজ্ঞান কিন্তু যুক্তিগ্রাহ্য তত্ত্বকে বিশ্লেষণ করে কৌতূহল আর অন্ধ বিশ্বাস দূর করে। মানসিক দুর্বলতা থেকে নানা চিন্তা মাথায় আসে।
আর কোনও কিছু হারানোর বা না পাওয়ার শূন্যতা থেকেই ভয়।সেই ভয় থেকেই ভীতি সেই ভীতি থেকেই ভূত। এবার বরং একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যাক। সাহিত্যে ভূত। বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা করতে গেলে ধর্মসঙ্কটে পড়তে হবে।
রবীন্দ্রনাথের কঙ্কাল, জীবন ও মৃত এইসব অলৌকিক ছোট গল্পে সত্যি কী কোনও ঘটনা রয়েছে? অবশ্যই আছে। বাস্তবের কোনও ঘটনা থেকেই তো গল্প হয়। আবার গল্পই কখন বাস্তবের রূপ নেয়। একে অপরের পরিপূরক।
ছোটবেলায় কবি যে ঘরে শুতেন সেখানে একটি কঙ্কাল ঝোলানো ছিল। তখন অত ভয়টয় পেতেন না। কিন্তু পরিণত বয়সে বাড়িতে অতিথি এলে ওই ঘরে শুতে হত তাঁকে। শোয়ার সময় তাঁর মনে হতে থাকে কে একজন বলছে ‘আমার কঙ্কালটা কোথায় গেল’, ‘আমার কঙ্কালটা কোথায় গেল’?
আসলে সাহিত্যিক যতটা বাস্তবে থাকেন ততোধিক চরাচর কল্পনা জগতে। সেখান থেকেই সাহিত্য সৃষ্টি। তিনি কী সত্যিই শুনেছিলেন সেই কথা জানা নেই, তবে ‘কঙ্কাল’ নামক ছোট গল্পটি সেই অনুপ্রেরণা থেকেই বলে জানা যায়। জীবন ও মৃত গল্পের ক্ষেত্রে সেইরকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে।
আসলে অন্ধকারে বা অবসরে ভূতের গল্প পড়তে সবার ভালো লাগে (Everyone likes to read ghost stories)। তাই বলাই যায় যুগ যুগ ধরে বেঁচে রয়েছেন তারা, বইয়ের প্রতি পাতায় পাতায়। সাহিত্যে এইসব ভূতের রসবোধ এতটাই আকর্ষণ করে আমাদের যে, কখনও কখনও হিরো হয়ে গেছেন। তাই তো ভূতের রাজার তিন বর আজও আমাদের কাছে অনন্য বিজ্ঞাপন।
লৌকিক জীবনযাত্রার বাইরে ভূত অলৌকিকতাকে প্রশ্রয় দেয়। ভূত দেখার ব্যাপারে কোনও অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ সবার না থাকলেও একটা জিনিস প্রত্যেক মানুষকে অন্য জগতে নিয়ে যায়। আত্মা, ছায়া, অশরীরি এই সবের অস্তিত্ব কিন্তু চিন্তায় ভাবনায় দুর্বলতায় বাস্তবে নয়।
আরো পড়ুন- Ishwar Chandra Vidyasagar : বিশ্বের দরবারে আজ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম কি আদৌ আছে?
জীবনের শেষ পর্যায়ে অনেকেই ভুতের দেখা পান বলে শোনা যায়। বিজ্ঞানের যুক্তিতে এই সময় ব্রেন অকেজো হতে থাকে। তাঁর সংবেদন ভাবনা কোথাও যেন স্থির হতে থাকে। তখন এই ভাবনা আসতেই পারে। তাতে কোনোভাবেই ভূতের অস্তিত্ব প্রকাশ পায় না। রে নিলাম সত্যি ভূত দেখেছেন।
আরো পড়ুন- Kalnagini : কালনাগিনীর ছোবল! লখিন্দরের মৃত্যুর কারণ যে সাপ,সে আসলে নিরীহ?
কখন দেখেছেন? অমাবস্যা রাতে! একদম নয়। দেখেবেন যাঁরা ভূত দেখার সাক্ষী থেকেছেন, এমন দূর্লভ ব্যক্তিরা অবশ্যই গল্পের ছলে বলেছেন, পূর্ণিমার রাত, চন্দ্রালোকিত রাত, মেঘে ঢাকা চাঁদ ইত্যাদি ইত্যাদি। ভূত তো ছায়া। আলো না থাকলে ছায়া কিসের! আর একটা কথা, ছায়া কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই ছায়া ভূত নিয়ে সত্যি বিচার করবেন না। এটাও বলে রাখা ভাল, দিনের বেলায় ভূত দেখা আর ডুমুরের ফুল দেখা দুটোই সমান।
আরো পড়ুন- A. P. J. Abdul Kalam : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম তার সম্বন্ধে কতটা জানেন?
আসলে সবটাই মানা বা না মানার বিষয়। সত্যি ভাবলে সত্যি নাহলে সবটাই মিছে। তবে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মুষ্টিমেও কিছু মানুষ অপব্যবহার করছে অজ্ঞতার। তাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।