Braeking Bharat: বিস্ময়ের আরেক নাম সহস্র শিবলিঙ্গ (Shiva Lingas)! মহাভারত আর রামায়ণের যোগসূত্র এখানেই, ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যময় সুবিশাল এক দেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতির চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় ভারতের প্রতিটি প্রান্তের কোনো না কোনো স্থানে।
আদিম সভ্যতা গুলোর নিদর্শন এই সুবিশাল ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। মূলত ধর্মীয় আবেগে পরিপূর্ণ এই ভারত ভূমি। দেশজুড়ে নানা রাজ্যের নানা জেলায় একাধিক মন্দির মসজিদ গির্জা লক্ষ্য করা যায়। সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ পীঠস্থান রূপে ভাবা হয় বা ধরা হয় এই দেশকে।
বিস্ময়ের আরেক নাম সহস্র শিবলিঙ্গ!
নানা ভাষা নানা মত নানা পোশাক আশাক তবু,একটাই অখন্ডতা দেশকে বেঁধে রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে। এই দেশের মানুষ প্রধানত ধার্মিক। ধর্মকে আশ্রয় করে মানুষের জীবনের প্রতিটি সন্ধিক্ষণ নির্ধারিত হয়। কালী, দুর্গা, শ্রী কৃষ্ণ, গনেশ এই সব দেবী এবং দেবতাদের পাশাপাশি ভারতবর্ষের সর্বত্র বিরাজ করেন স্বয়ং কৈলাসপতি।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের শিব লিঙ্গ দেখা যায়। ভক্তি ভরে শিবের মাথায় জল ঢালেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই। আজকে আমরা বলবো সহস্র শিবলিঙ্গের কথা (Sahasra Shiva Lingas)।
কর্নাটকে পাথরের উপর খোদাই রয়েছে হাজারো শিবলিঙ্গ:
এই প্রতিবেদনের শুরুতেই আপনাকে কর্নাটকে নিয়ে যেতে হবে। এখানকার মানুষজনের মধ্যে একটা আলাদা কর্মব্যস্ততা এবং উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। মূলত প্রযুক্তিগত দিক থেকেও এই রাজ্য বেশ উন্নত হয়ে উঠেছে। তবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
কর্ণাটকের এক বিশেষ স্থানে পাথরের উপর খোদাই করা আছে ১০০০ শিবলিঙ্গ (There are 1000 Shiv Lingas carved on the stone) যার সঙ্গে রামায়ণ এবং মহাভারতের যুগ সূত্র মেলে, জানেন কি? দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহা শিবরাত্রিতে এবং বৈশাখ ও শ্রাবণ মাসে ভক্তদের বিশ্বাস এক ভক্তির ঢলে নামে এই স্থানে।
শাল্মলা নদীর তীরে পাথরে খোদাই করা রয়েছে সহস্র শিবলিঙ্গ:
কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় জেলার শিরসি তালুকে শিরসি শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে শাল্মলা নদীর তীরে পাথরে খোদাই করা রয়েছে সহস্র শিবলিঙ্গ ৷ যদি এক কথায় নাম জানতে চান তাহলে বলতে হয় উপ্পিনঙ্গাড়িতে রয়েছে এক হাজার শিবলিঙ্গ।
প্রতিবছর ভক্তরা শিবের কৃপা পাওয়ার আশায় ছুটে যান এই স্থানে। বিভিন্ন জায়গায় দ্বাদশ অর্থাৎ বারটি শিবলিঙ্গ শিব মন্দিরের কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় আবার ১০০টি শিবলিঙ্গের প্রসঙ্গ আসে কিন্তু এখানে এক হাজার শিবলিঙ্গ রয়েছে।
সহস্র শিবলিঙ্গ পাথরের উপর খোদাই:
কিন্তু কি করি এই স্থাপত্য কীর্তি গড়ে উঠল এখানে এর পেছনেও রয়েছে এক কিংবদন্তি কাহিনী। সেই গল্প কাহিনী যুগ যুগ ধরে বিশ্বাসের আঁকা নিয়ে রয়ে গেছে ভারতের ধর্মীয় পরিমণ্ডলের অন্তরে। আমরা এর সত্যতা বিচার করার চেষ্টাও করিনি।
কারণ ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে মানুষের আবেগ, যাকে আমরা কোনভাবেই আঘাত করতে চাই না। প্রয়োজনে প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান পরবর্তীতে করা যেতে পারে। এখন বলি সেই কিংবদন্তির কথা যা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত।
এই যে সহস্র শিবলিঙ্গ পাথরের উপর খোদাই করা আছে (A thousand Shiv Lingas carved on stone), সেই স্থানটি মূলত নেত্রবতী এবং কুমারধারা নদী দুটির তীরে অবস্থিত । জানা যায় কুরুক্ষেত্রের ভয়ংকর যুদ্ধের পর পান্ডবদের রাজসূয় যজ্ঞের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং নারায়ন। এর জন্য প্রয়োজন ছিল পুষ্প মৃগ।
মহাশক্তিশালী ভীম এর উপর দায়িত্ব পরে এই পুষ্প মৃগ খুঁজে আনার। মহেন্দ্রগিরি নামক অঞ্চলে এর সন্ধান পাওয়া যেতে পারে এই কথা শুনে ভীম রওনা দেন। নিজের যাত্রাপথে তিনি হনুমানকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখতে পান। পবন পুত্র হনুমান এমনভাবে রাস্তা আটকে বসেছিলেন যে ভীমের পক্ষে সেই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
তাই তিনি হনুমানকে অনুরোধ করেন সরে যাওয়ার জন্য কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হনুমান উল্টে ভীমকেই বলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। ভীষণ রেগে যান ভীম ।হনুমানকে আছার মারার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। তখন হনুমান তার আসল পরিচয় দিলে ভীম বুঝতে পান অনুমান তার বড় ভাই।
আসলে দুজনেই তো পবন পুত্র। এরপর হনুমানের আশীর্বাদ দিয়ে ভীম পুষ্প মৃগের সন্ধানে এগিয়ে যান। যাত্রাপথের বিপদের কথা মাথায় রেখে এবং কম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে হনুমান ভীমকে একটি উপহার দেন। ছোটো ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য নিজের লেজের চুল নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন হনুমান৷
আরো পড়ুন – Lion : হিংস্র প্রাণী ‘পশুরাজ সিংহ’কে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে? কি?
মহেন্দ্র গিরিতে পৌঁছে পুষ্প মৃগ আনতে চাইলে সেই মৃগ ভীমকে একটি বিশেষ শর্ত দেন। কচিতে আছে পুষ্প মৃত নাকি বলেছিলেন তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ভীমকে তার পুরনো গন্তব্যে ফিরে যেতে হবে যদি গতিপথে ভীম পিছিয়ে পড়ে তাহলে পুষ্প মৃগ আর যাবে না। হনুমানের লেজের চুল এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
আরো পড়ুন – IIT : আইআইটি মানেই সেরার সেরা তালিকা, মেধাবীদের লিস্ট দেখলে চোখ কপালে উঠবে আপনারও
জনশ্রুতি আছে যে পুষ্প মৃগের আরাধ্য দেবতা হলেন ভগবান শিব।এদিকে হনুমানের লেজের চুলের সাহায্যে ভীম যতদ্রুত সম্ভব নিজের গতি বাড়িয়ে এগোতে থাকেন। নিজে যাতে পিছিয়ে না করেন সেই কারণে ভীম হনুমানের লেজের একটি করে কেশ মাটিতে খেলতে থাকেন এতে তার গতি বৃদ্ধি পায়।
একটা সময় আসে যখন তিনি এত কিছু করেও পুষ্প মৃগের কাছে পিছিয়ে পড়েন। তখনই ঘটে অদ্ভুত কান্ড! একেই বোধহয় বলে দেবতার অপার মহিমা। দেখা যায় যে সব স্থানে হনুমানের কেশগুলি ঝরে পড়ছিল সেখানেই একটি করে শিবলিঙ্গ উত্থিত হতে থাকে।
আরো পড়ুন – Pannalal Bhattacharya : মায়ের সঙ্গীত সাধক পান্নালাল ভট্টাচার্য কেন পালালেন জীবন থেকে?
পুষ্প মৃগ তো আর আরাধ্য দেবতার পূজোর না করে এগোতে পারেন না। এই কথা বুঝতে পারা মাত্রই উপ্পিনঙ্গাড়ির কাছে এসে ভীম সেখানে পবন পুত্র হনুমানের এক সহস্র চুল ঝরিয়ে দেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে সহস্র শিবলিঙ্গ উত্থিত হয়ে যায়। তখন পুষ্পমৃগ প্রতিটি লিঙ্গ পুজো করতে শুরু করেন। এটি বাজিমাত করেন দ্বিতীয় পান্ডব। ভীম নিরাপদে যজ্ঞ মণ্ডপে উপস্থিত হন৷
আরো পড়ুন – APJ Abdul Kalam :কেমন ছিল ‘ভারতের মিসাইল ম্যান এপিজে আবদুল কালামে’র জীবনের শেষ মুহূর্ত?
এরপর থেকেই সেই স্থানে ভক্তদের বিশ্বাসের ঢল নামে । ভগবান এভাবেই বিপদে পড়লে ভক্তকে নানা রূপে সাহায্য করেন । সেই ভক্তিতেই সহস্র শিব লিঙ্গে ভক্তদের আনাগোনা।