Breaking Bharat: A. P. J. Abdul Kalam : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম তার সম্বন্ধে কতটা জানেন? ভারতের মিশাইল ম্যানকে চেনেন তো? প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ঠিক কতটা গুণের অধিকারী, জানলে অবাক হবেন আপনিও !
তাঁর নাম জানেন সকলেই, কিন্তু সঠিক পরিচয় কজনেই বা বলতে পারবেন? বিজ্ঞান কে ঠিক কতটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা বিজ্ঞানীরা না থাকলে আমরা জানতে পারতাম বলে মনে হয় না। আর আজ যার কথা তিনি শুধু মাত্র সাধারণ বিজ্ঞানী নন, ভারতীয় গনতন্ত্রের রক্ষক বটে (apj abdul kalam biography)।
এ পি জে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী (A. P. J. Abdul Kalam):
নাম এ.পি.জে. আবদুল কালাম। তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ – ২০০৭)। ২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর এ.পি.জে. আবদুল কালাম (apj abdul kalam) শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পান তিনি।
কালামের জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ঊর্ধ্বে তাঁর কর্ম জীবনের কাহিনী শুনে জেনে ঋদ্ধ হতে হয় । বিজ্ঞানী ঘটনা চক্রে হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি! ভাবলেও অবাক লাগে। পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ নন, তা সত্ত্বেও কী দারুণ দৃপ্ততার সঙ্গে সামলে ছিলেন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বভার।
এ পি জে আব্দুল কালাম দেশ তথা বিশ্বের আদর্শ:
কালামের জন্ম বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে। এ.পি.জে. আবদুল কালাম পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ’স কলেজ থেকে এবং এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করেছিলেন।
এরপর প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এ.পি.জে. আবদুল কালাম দেশের প্রতিরক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। কথায় আছে পারিবারিক শিক্ষা প্রকৃত অর্থে একজনকে মানুষ তৈরি করতে পারে।
এটা বোধহয় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে ভীষণভাবে যথোপযুক্ত। পিতা জয়নুল আবেদিন ছিলেন পেশায় মৎসজীবি । খুব বেশী শিক্ষিত মানুষ ছিলেন না তিনি । তবে মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন খুবই বড়োমাপের । ছোটবেলা থেকে পুত্র আবদুলের মনে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন (apj abdul kalam childhood)।
বারবার তিনি গল্পছলে আবদুলকে বলতেন পরবর্তী কালে তুমি যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারে । সেই কথাকে মান্যতা দিয়েছিলেন কালাম আর তাই এমন একজন মানুষ হতে পেরেছিলেন যিনি সারা দেশ তথা বিশ্বের আদর্শ। বেড়ে ওঠার মধ্যে কোন সম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল ছিল না।
তাঁর মায়ের কথা জানলে সেটাই স্পষ্ট হয়। মায়ের পরিবারের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ প্রদত্ত বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন । তাঁর মা কিন্তু তার এই ভাগ্য বিপর্যয়কে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন । তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তানকে কীভাবে মানুষের মত মানুষ করে বড়ো করা যেতে পারে , তাই ছিল তাঁর ইহজীবনের স্বপ্ন । ছোটবেলার খেলার সাথীদের কথাও মনে পড়ে যায় আবদুলের ।
মেলামেশা করতেন রামনাথ শাস্ত্রী , অরবিন্দন আর শিব প্রকাশনের সঙ্গে , তাঁরা সকলেই ছিলেন সনাতনপন্থী হিন্দু পরিবারের সন্তান । আর আবদুল গোড়া মুসলমান । কিন্তু শৈশবে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভেদ রেখা ছিল না । একটু বড়ো হয়ে আবদুল বাবার কাছে জানতে চেয়েছিলেন বাবা , প্রার্থনার কি কোনো আলাদা অর্থ আছে ? সেদিনের সেই প্রশ্নের আড়ালে যেন এক দারুন সত্যি আর সম্ভাবনাময় প্রকাশ লুকিয়ে ছিল।
ভারতের মিশাইল ম্যান এ পি জে আব্দুল কালাম (apj abdul kalam):
একজন ভালো মানুষ হতে গেলে কোন কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার এখন ছোটবেলায় কালামের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছিল। জীবনে সফল হতে গেলে তিনটি গুণের অধিকারী হতে হবে ইচ্ছা , বিশ্বাস এবং আশাবাদ । ইচ্ছা হল স্বপ্নের প্রথম প্রহর । যদি মনের মধ্যে ইচ্ছার বীজ তপ্ত না হয় তাহলে আমরা সফলতার গাছ কখনো দেখতে পাব না । দ্বিতীয় প্রহর হল বিশ্বাস ।
নিজের কর্তব্যবোধের ওপর অবিচল আস্থা থাকতে হবে । ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা রাখতে হবে।১৯৬০ – এ বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে ( ডি আর ডি ও ) । কেরিয়ার শুরু হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছোট মাপের একটি হেলিকপ্টারের নকশা করার মধ্য দিয়ে । কিন্তু দ্রুতই উত্থান ঘটে তার ।
আরো পড়ুন- Darjeeling : পাহাড়ের রানি মানেই একটাই নাম দার্জিলিং ! কেমন আছে শৈল শহর?
ভারতের মহাকাশ গবেষণার সংস্থা ইসরো – র সঙ্গে যুক্ত হন তিনি । দেশীয় প্রযুক্তিতে উন্নত সামরিক মিসাইল তৈরির প্রকল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন । মহাকাশযান ও স্যাটেলাইট বহনকারী পি এস এল ভি এবং এস এল ভি থ্রি রকেট তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ভারতের ‘ মিসাইল ম্যান ‘ বলা হয় তাঁকে ।
আরো পড়ুন- Kalnagini : কালনাগিনীর ছোবল! লখিন্দরের মৃত্যুর কারণ যে সাপ,সে আসলে নিরীহ?
পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে একই সারিতে ভারতকে তুলে আনার জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য । ১৯৯৮ সালে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত ‘ পোখরান – টু ’ প্রকল্পের চিফ প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ছিলেন তিনি । ভারতের মিসাইল ম্যান বিশ্বাস করতেন বিশ্বাসের জোরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী— “ উইঙ্গস অফ ফায়ার ” ।
আরো পড়ুন- Love Relation: প্রেমে পড়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছেন? এবার!
এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় বিধৃত আছে মানব কল্যাণে উৎসর্গীকৃত প্রাণ এই মহান বিজ্ঞানীর অন্তরের ইচ্ছা ।২৭ শে জুলাই ২০১৫ ভারতের পরমানু গবেষনার পথিকৃৎ তথা দেশের ‘ মিসাইল ম্যান ‘ , ভারতের একাদশতম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে ( আবুল পকির জয়েনুল আবদিন ) এ.পি.জে. আবদুল কালামের ( ৮৪ ) জীবনাবসান হয় ।
তিনি কোন পুরস্কার পেয়েছিলেন কোনটা পাননি (a. p. j. abdul kalam awards) এই তালিকা করতে গেলে প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত হবে কারণ তিনি সম্মানের যে জায়গায় নিজেকে কর্মগুণে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা চির স্মরণীয় আর প্রনম্য।