Breaking Bharat: এক কমপ্লেক্সে থেকেও পাশের ফ্ল্যাটের মানুষকে চেনেন কি? গ্রাম আর শহরের মধ্যে এই তফাৎটা কেন বলুন তো? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার একটা লাইন ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়ে বড় হয়েছি।
” আপনারই লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ ধরণী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”
কিন্তু আজকাল আমরা অনেক বেশি করে নিজেদের নিয়ে মত্ত। তাই অন্যের দিকে তাকানোর বা অন্যদের কথা ভাবনা চিন্তা করার মত সময় খুঁজেই পাই না। তবে আশ্চর্যভাবে এই প্রবণতাটা গ্রামের থেকে শহরে বেশি দেখা যায়। গ্রামের মানুষ এখনো প্রাণ খোলা স্বতঃস্ফূর্ত।
ব্যতিক্রম যে একেবারে নেই সেটা অবশ্য বলা যায় না। কিন্তু আমরা ব্যতিক্রম নিয়ে এই প্রতিবেদন করছি না আমরা বলছি সাধারণ মানসিকতার কথা। চলুন এই বিষয়ে একটু বিস্তারিত খোঁজ খবর করা যাক।
প্রত্যেকটা মানুষ সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিজের উন্নতির দিকে লক্ষ্য দিয়েছে। একটা জাতি এমনি এমনি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না যদি না সেই জাতির সব মানুষ অগ্রসর হয়। আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে বসবাস করছি যখন আমাদের হাতে সময় বড্ড কম।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ততার মধ্যেই সকাল থেকে রাত হয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা টের পাচ্ছিনা । শহরের মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাতে বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলেও একহাতে মোবাইল অন্য হাতে তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়া।
নিজের পরিবারের সঙ্গে সেভাবে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় কাটানো এটা আজকাল আর প্রায় দেখাই যায় না। অথচ সারাদিন ধরে বাড়িতে যে মানুষগুলো একা বসে থাকেন প্রিয় মানুষ বাড়ি ফিরবেন এই আশায় কখনো কারোর স্বামী কারোর বা সন্তান তাদের মনের অবস্থাটা ভাবার মতো সুযোগ আর সময় দুটোই আমাদের কাছে নেই।
তাহলে আর কী করে ভাবছেন প্রতিবেশীর কথা ভাববো?
আসুন কারণটা হলো মানসিকতা যদি চেষ্টা করা যায় তাহলে প্রিয় মানুষ বা গুরুজনের সঙ্গে ১০ মিনিট সময়ও হেসে খেলে কাটিয়ে তাকে অনেকটা আনন্দ দেওয়া যায়। তার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
শহরের মানুষের কাছে অনেক বেশি করে অপশন রয়েছে যেটা গ্রামের মানুষের কাছে এখনো তুলনামূলকভাবে কম তাই তাদের কাছে কিছুটা সময় ভাগ্যক্রমে এখনো হাতে রয়ে গেছে। প্রত্যেক মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার ইঁদুর দৌড়ের মাঝে তারা সত্যি বোধহয় ওই হাতে পাওয়া সময়টা নিয়ে ভালো আছেন যেটা শহরের মানুষ নেই।
আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ এক প্রকার বন্ধু তবে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে ওপর চালাকির একটা প্রবণতা হয়েছে। Whatsapp টা ফেসবুকে হাই হ্যালো কিংবা কে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে বা অসুস্থ হয়ে পড়েছে সেই আপডেট দেখে তারপর যোগাযোগ করার চেষ্টা, যদি প্রয়োজন মনে হয়।
আরো পড়ুন – অন্যান্য মহাদেশের থেকে এশিয়াতে কুসংস্কার এত বেশি কেন?
অন্ততপক্ষে দূরের মানুষকে যাদের শহরের মানুষ নিজেরাই অনেকটা দূরত্ব বাড়িয়ে ঠেলে দিয়েছে অন্য এক জগতে তাদের কথা মনে করাতে সোশ্যাল মিডিয়া, এই ভূমিকাটা পালন করে বটে।
গ্রাম আর শহর এদের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় পড়া হত দুটি বিষয় গ্রাম আর শহর এদের মধ্যে মূল পার্থক্য কী? উত্তরটা হল মানসিকতার পার্থক্য ।এখনো পর্যন্ত গ্রামের কিছু মানুষ সরল সহজ ভাবে বাঁচতে জানেন আর শহর সেটা প্রায় ভুলতে বসেছে।
আরো পড়ুন – সঞ্চয়ী আর কৃপণের মধ্যে ফারাক কোথায়? জানেন কি?
যেখানে নিজের পরিবারের খোঁজ খবরই নেয়া যায় না সেখানে দরজা খুলে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষের খোঁজ নেওয়া বা নিদের পক্ষে তার সঙ্গে আলাপচারিতা এটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের আশা করা হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। অথচ ভাবুন খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা যেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেটা হচ্ছে না এক অস্বাভাবিক কারণে ।আর সেটা কী তা হল ব্যস্ততা।
আরো পড়ুন – ঘুষ খাওয়া অপরাধ নয়, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ হতে পারে? ঠিক বললাম তো?
ছোট্ট একটা শব্দ টাইম নেই দাদা। সবার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মানুষ ভুলতে বসেছে সব সামাজিকতা, লৌকিকতা। পৃথিবীটা আগে ছিল বোকা বাক্সতে বন্দি এবার মুঠোফোনে। এরপর কোথায় শেষ? কেউ জানেনা। শুধু জানি দূরত্ব বাড়ে যোগাযোগ নিভে যায়।