Breaking Bharat: শিকাগো স্মৃতির ঐতিহ্য! কিন্তু সেই শহরের হঠাৎ ‘কসাইখানা’ নাম হল কেন? কথায় কথায় আমাদের সবার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে পাশ্চাত্যের উদাহরণ তুলে কোন কিছুকে বোঝানো। এই ক্ষেত্রে সবার আগে আমরা আমেরিকার নামটা নিয়ে থাকি। কিছু হলেই সেই দেশের বিভিন্ন শহরের কথা উল্লেখ করা হয়।
আমরাও আজকে সেই দেশের প্রসিদ্ধ এক শহরের কথাই বলব কিন্তু সেটা কী কারণে বিখ্যাত তা জানলে চমকে উঠবেন আপনি। ‘পৃথিবীর বিখ্যাত কসাইখানা‘ নিয়ে কথা বলব। চলুন তাহলে শিকাগো নিয়ে কথা বলা যাক (Chicago Memorial Heritage)।
শিকাগো শহর বললেই আমাদের সবার কাছে স্বামী বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ আগে উঠে আসে। পরিসংখ্যান বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর হল এটি। তবে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এই শহরের একটা আলাদা পরিচিতি আছে, এটি হল পৃথিবীর কসাইখানা।
আমরা কিন্তু কোনভাবেই কোন হত্যাকে সমর্থন করি না সেটা প্রতিবেদনের শুরুতেই বলে দেয়া ভালো। ফিরে এলাম মূল প্রসঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে একটি ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখতে হবে। ‘গ্রেট শিকাগো ফায়ার‘ কথাটির সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত।
প্রায় ১৪৭ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো তেই এমন এক এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল, যার কথা ভাবলে আজকেও শিউরে ওঠেন মানুষজন। বলতে পারেন ১৯ শতকে মার্কিন মুলুকে যেসব বিপর্যয়ের কথা শোনা যায়, গ্রেট শিকাগো ফায়ার তাদের মধ্যেই অন্যতম। ১৮৭১ সালের সেই বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে গোটা ‘শিকাগো শহর‘ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এবং এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সামলাতে গিয়ে ভেঙে পড়েছিল তৎকালীন সময়ের সব আধুনিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। আশ্চর্যের বিষয় হল এই আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিকাগো তথা বিশ্বজুড়ে একাধিক কিংবদন্তী রয়েছে। অনেকের মতে শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার ক্যাথরিন ও’ ল্যারির গোয়াল ঘর থেকেই এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে, যখন গরুর দুধ সংগ্রহ করতে গিয়ে একটি জ্বলন্ত প্রদীপ উল্টে যায়।
যদিও অনেকেই বলেছেন যে জুয়ার আড্ডা থেকেই ছড়ায় আগুন। কেউ কেউ তো আবার এর মধ্যেই মহাজাগতিক যোগ খুঁজে পেয়েছিলেন। জনশ্রুতি ছিল আকাশ থেকে উড়ে আসা জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। যদিও বিশেষজ্ঞরা সেই সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়েছেন।
আরো পড়ুন – নতুন জায়গায় রাত্রিবাস? সাবধান! হোটেলের ঘরে-ট্রায়াল রুমে গোপন ক্যামেরা নেই তো?
তারা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে পড়ার সাথে সাথে জলীয় বাষ্প আর মাটির সংস্পর্শে তার তাপমাত্রা কমতে থাকে। তাই উল্কাপিন্ডের কারণে এত বড় অগ্নিকান্ড ঘটা কার্যত সম্ভব নয়। আজ পর্যন্ত অবশ্য অগ্নিকাণ্ডের আসল কারণ উদ্ধার হয় নি।
আরো পড়ুন – ‘স্টেগনোগ্রাফি’ বলতে আপনি কী বোঝেন? প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে জড়িত এই বিদ্যা কোন কাজে লাগবে আপনার?
কিন্তু বীভৎসতা এতটাই তীব্র ছিল যে ভয়াবহ সেই অগ্নিকান্ডে শহরের কম-বেশি ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই মরসুমে জুলাইয়ের শুরু থেকে অক্টোবরে আগুন লাগার সময় পর্যন্ত এই অঞ্চলে খুব কম বৃষ্টিপাত হয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিপাতের অভাবে চারপাশের পরিবেশ শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে উঠেছিল। আর এই আবহাওয়ার আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার উপযোগী ছিল।
আরো পড়ুন – ব্ল্যাক মাম্বা! এক ছোবলেই ছবি? কোন সাপের মাত্র দু’ফোঁটা বিষে এক মুহূর্তে সব শেষ?
সেই সময় চারিদিকে গাছপালা বেশি ছিল কিন্তু এই আগুন লাগার ঘটনায় সবটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঠিক কতটা পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল সেটা হয়তো হিসাব করে বলা যাবে না। শিকাগোর স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে জানিয়েছিল।
আরো পড়ুন – আবর্জনা! পৃথিবী বিপন্ন জানেন কেন? এবার আপনার কাঁধেই বড় দায়িত্ব !
৩০০ জন জীবন্ত মারা যান অগ্নিদগ্ধ হয়ে যায় মধ্যে ১২০টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কত দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়েছিল, কত বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছিল তার হিসেব নেই। অতীতের স্মৃতি ভুলে শিকাগো এখন অনেকটা এগিয়ে গেছে। কিন্তু পুরনো ঘটনার রেষ যেন নামের মধ্যে রয়েই গেছে।