Breaking Bharat: চাণক্য নীতির কথা শুনেছেন নিশ্চয়? কিন্তু মানুষটাকে কতটা চেনেন? কেন তাকেই ‘ গুরু’ ধরা হয়? ইতিহাসের পাতায় থাকা একাধিক ঘটনা আমাদের অজানা থেকে যায় অনেক বছর ধরে।
কখনো আবার সাড়া জীবনেও জানার অনেকটা বাকি থেকে যায়। আজ সেই দিকেই নজর রাখব আমরা। এই বিষয়ে তিনটে নাম জানতে হবে আপনাদের ।
চাণক্য, নন্দবংশের রাজা ধনানন্দ এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। ছোটবেলায় এক কুৎসিত দেখতে ব্রাহ্মণকে অপমান করার খেসারত যে একজন রাজাকে কীভাবে দিতে হতে পারে সেই সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো ধারণা হবে এই প্রতিবেদন পড়লে।
রাজার কাছে অপমানিত ব্রাহ্মণ লোকালয় থেকে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে ব্রাহ্মণ এক আশ্চর্য বালকের সন্ধান পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন সেই বালককে বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করার পর সেই বালক যখন তরুণ হল, তখন অহংকারী রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নির্দেশ দিলেন সেই ব্রাহ্মণ অর্থাৎ চাণক্য। বুঝতে নিশ্চয়ই অসুবিধা নেই যে সেই আশ্চর্য বালক ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
রাজা ধনানন্দর চাণক্যকে অপমান এবং পরবর্তীতে চাণক্যের চন্দ্রগুপ্তকে খুঁজে পাওয়া এই সব যেন পূর্ব নির্ধারিত ছিল।যদিও ধনানন্দের পরাজয় নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত আছে। জানা যায় রাজা শেষ জীবনে জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এই নিয়ে জৈনদের বিভিন্ন গল্পকথা এবং নথি অনুযায়ী, চাণক্য নাকি একবার ধনানন্দর কাছে দান- গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই সময় সভায় কাউকে না দেখতে পেয়ে তিনি রাজ সিংহাসনেই বসে পড়েন। এরপর তাকে রাজসভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময়ে তিনি একটি ভবিষ্যৎবাণী করেন যেখানে বলা হয়েছিল যে এক নতুন রাজার আক্রমণের ফলে এই বংশের পতন ঘটবে। আর সেটাই ছিল চন্দ্রগুপ্ত।
তাকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন চাণক্য। তিনি যে নীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন চন্দ্রগুপ্তকে তাই পরবর্তীতে নিজের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। সেক্ষেত্রে জীবনে চরম সিদ্ধান্ত আর স্বার্থ ত্যাগেও পিছিয়ে যান নি তিনি। চন্দ্রগুপ্তকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান করে রাজধানী আক্রমণ করার নির্দেশ দিলেও, প্রথমেই ব্যর্থ হন চন্দ্রগুপ্ত।
আরো পড়ুন – বলিউডি গ্রেট ভিলেন গব্বর নিজের স্ত্রীয়ের জন্য কী করেছিলেন ভাবতেও পারবেন না!
তখন গ্রামের এক মহিলার থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন চাণক্য। পায়েস গরম থাকলে যেমন চার ধার থেকে খাওয়া শুরু করা উচিত, ঠিক এই ভাবনাকেই কাজে লাগিয়ে চন্দ্রগুপ্তের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই মনে করেন চন্দ্রগুপ্ত আর চাণক্যের এই গল্পের সমাপ্তি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যর সিংহাসন আরোহণের সঙ্গেই শেষ হয়।
আরো পড়ুন – চিংড়ি মাছ কি আপনার প্রিয়? কিন্তু এই মাছেই যে লুকিয়ে যে মারাত্মক বিপদ! জানেন কি?
কিন্তু এটা সম্পূর্ণ সঠিক তত্ত্ব নয়। কারণ সিংহাসন আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সব সমস্যার সমাধান হয়েছিল সেটা মোটেই নয়। কারণ রাজা হওয়ার আগে এবং পরে বহুবার কেবলমাত্র চাণক্যের বুদ্ধিবলেই চন্দ্রগুপ্ত রক্ষা পেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন – ‘টি সিরিজ’ কোম্পানির গান-বাজনা শোনেন, কিন্তু ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় আছে কি?
চাণক্য-র অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন শিষ্য ইন্দুশর্মা, চাণক্যের নির্দেশে তিনি গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে ছিলেন। মুদ্রারাক্ষস থেকে জানা যায় জীবসিদ্ধি জৈন ভিক্ষুক এবং জ্যোতিষীর পরিচয়ে চন্দ্রগুপ্ত শত্রুপক্ষের দলে যোগ দিয়েছিলেন। এবং সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা চাণক্যর কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল মূল কাজ।
আরো পড়ুন – ‘কন্যাদান’ কত বড় অন্যায় সে কথা জানেন? সমাজের কিছু নিয়মের পরিবর্তন আনতে এত সমস্যা কোথায়?
কোনও এক নীতির উপর নয় প্রয়োজন আর পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়ে নিজের পরিকল্পনা করে প্রতিমুহূর্তে ছক ভেঙেছেন আর গড়েছেন চন্দ্রগুপ্ত। আর আসল শিক্ষার পরিচয় করিয়েছেন ইতিহাসের সঙ্গে।