Breaking Bharat: ‘কন্যাদান’ কত বড় অন্যায় সে কথা জানেন? সমাজের কিছু নিয়মের পরিবর্তন আনতে এত সমস্যা কোথায়?
বিয়ে মানে শুধু দুটো মানুষ নয় দুটো পরিবারের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়া। সেই সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক সংস্কৃতি অনেক আচার উপচার। বিয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ সিঁদুর দান মালা বদল খই পোড়ানো এবং কোথাও গিয়ে কন্যা দান।
সব কিছু একটা ব্যাখ্যা আছে কিন্তু শুধুমাত্র সবশেষে যে বিষয়টার কথা বললাম সেই উপচারের কোনও যুক্তি নেই। আর থাকবেই বা কি করে কারণ অন্যায়কে কখনোই কোন যুক্তি দিয়ে আড়াল করা যায় না। তাই কন্যা দান আজই বন্ধ করা দরকার।
‘কন্যাদান ব্যবস্থা’ কি নারীকে অপমান করে?
ছোটবেলা থেকে আমাদের বোঝানো হয় নারী পুরুষ সকলেই সমান সমান। যদি তাই হয় তাহলে এত দ্বিচারিতা কেন? প্রশ্ন উঠছে হিন্দু ধর্মের রীতি রেওয়াজ কে নিজেদের মতো করে নামান্তরিত করে তার একটা অন্য অর্থ প্রকাশ করা নিয়ে।
একটু চেষ্টা করলেই বোঝা যাবে এমন রীতির কথা বলা হচ্ছে যার কোন যৌক্তিকতাই নেই। ছেলে না মেয়ে যাই হোক না কেন দুজনই তো সন্তান। আর সন্তানকে কি অন্যের কাছে দান করে দেওয়া সম্ভব হয়? একজন মানুষ আর একজন মানুষের পরিবারে যাবেন, পরিবার সমৃদ্ধ হবে এখানে দান করার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে?
ছোটবেলা থেকে সমাজে বোঝানো হয় কন্যাদায়স্থ পিতা অর্থাৎ মেয়ে ঘরে জন্ম নিলেই তাকে যেন পাত্রস্থ করার চিন্তা মাথায় জাঁকিয়ে বসে। এই ভাবনা বা মানসিকতার পরিবর্তনকে আদৌ সম্ভব? যদি সমাজ না এগিয়ে আসে, যদি চিন্তা ভাবনা না বদলায় ,তাহলে আজব প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই আটকে থাকতে হবে আমাদের।
বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুজন মানুষ সমাজকে এক নতুন গতিপথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা যেমন দেখান, পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্ম পৃথিবীতে আসবে এই আশার আলো সঞ্চারিত হয় সবার মধ্যে। কিন্তু এসবের মধ্যে ‘দান‘ শব্দটা কেমন একটা খেলো মনে হয় না?
আরো পড়ুন – জিন্সের সঙ্গে সোনার সম্পর্ক! জিন্স পরতে পছন্দ করেন? ডেনিম জিন্স কেন এত পছন্দের?
প্রাচীনকাল থেকেই বিয়েতে যৌতুক দেওয়ার রীতি প্রচলিত। পণ হিসাবে নানা পণ্য নেয়া হয়। বিয়েতে গাড়ি বাড়ি নগদ গয়না এই সব কিছু নেওয়া হয়। এটাই যেন একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাত্রপক্ষ এবং তার আত্মীয়রা সকলে মিলে কত টাকা বিয়েতে যৌতুক নিতে হবে এই হিসেব করতে ব্যস্ত থাকেন।
সঠিক টাকা বা যৌতুক না দিতে পারলে কোন কোন ক্ষেত্রে বিয়ের পর মেয়েকে শারীরিক মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়। সেক্ষেত্রে আত্মহনন ছাড়া অন্য কোন পথ থাকে না অনেকের কাছেই। শাস্ত্রে কন্যা সম্প্রদায়ের একটা নিয়ম আছে বলে প্রচলিত ধারণা। বিয়েতে কন্যা সম্প্রদানের সময়ে মন্ত্র পাঠ করেন পুরোহিত মশাই।
আরো পড়ুন – পারিবারিক সমস্যায় জীবন জেরবার? আপনার হাতের কাছেই আছে সমাধান, একটু খুঁজে দেখবেন নাকি?
যে মন্ত্রে বলা হয় অন্য গোত্রে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে বিয়ের কনেকে। সাধারণত পাত্রীর বাবা এই সম্প্রদান করে থাকেন অর্থাৎ নিজের হাতে মেয়েকে অন্য গোত্রে তিনি দান করেন। সেক্ষেত্রে যদি বর এবং কনের একই গোত্র হয় তাহলে অন্য গোত্রের কেউ মামা বা অন্য কোনও আত্মীয় সম্প্রদান করতে পারেন।
এটা হয় যদি একই হয়ে যায় সেক্ষেত্রে অন্য গোত্রে হস্তান্তরের একটা ব্যাপার থাকে। কিন্তু ভাবুন তো মেয়েটা কি পণ্য? যে তাকে এভাবে অন্যকে দান করতে হবে! মানুষ হিসেবে মানুষ কে চিনতে আর বুঝতে শিখুন।
আরো পড়ুন – মধ্যবিত্তদের উচ্চশিক্ষা কি শুধুই স্বপ্ন নাকি আদৌ বাস্তবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
কোনও জন্তু জানোয়ারের সঙ্গে মানুষের বা আসবাবের সঙ্গে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে গুলিয়ে ফেলছেন না তো। অন্য বাড়ির লোকেরা আপনার বাড়ির মেয়ের সম্মান রক্ষা করবে কেন যদি আপনি নিজেই তাকে এতটা ছোট করে দেন।
এখনই বন্ধ করুন কন্যা দান রীতি। নিজের ঘর থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শুরু করুন, তবেই বদলাবে সমাজ।