Breaking Bharat: টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সিরিয়াল কি খারাপ প্রভাব ফেলছে সমাজে? যতদিন যাচ্ছে বিনোদনের একাধিক মাধ্যম আমাদের চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে। তবে টেলিভিশনের একটা আলাদা আকর্ষণ এখনো আছে।
যতই ওয়েবসিরিজ আর আর মোবাইলে এই প্রজন্ম আটকে থাকুক না কেন একশ্রেণীর দর্শক ঠিক এখনো টেলি পর্দাতেই আটকে আছেন। আর তাদের জন্য টিপিকাল বিনোদন জগৎ আজও হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এসবে সমাজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তো? সেই প্রশ্নই আজ বড্ড বেশি করে মাথাচাড়া দেয় (Television industry serials effects on society)।
উচ্ছন্নের পথে এই বিনোদন জগৎ?
আসলে টিপিকাল সিরিয়াল দেখার দর্শক কিন্তু ভারতীয় সমাজে বরাবরই ছিল। যারা দুষ্টের বিরুদ্ধে শিষ্টের জয় দেখতে পছন্দ করেন। এটা যেমন হিন্দি টেলিভিশন জগতে আছে তেমনই আছে বাংলাতে। একটা সময় মনে করা হতো রেডিওকে ধ্বংস করার পেছনে টেলিভিশনের হাত অনেকটা।
আকাশবাণীর জনপ্রিয়তা হারায় টেলিভিশনে রামায়ণ মহাভারত শুরু হওয়ার পর। তখন সকাল ন’টা বাজতে না বাজতেই রাস্তাঘাট জনমানব শূন্য হয়ে যেত। কিন্তু যত সময় গেছে সিরিয়াল তার ঘরানা আর চরিত্র বদলেছে। বেশি করে আধুনিক হতে গিয়ে কোথাও একটা উচ্ছন্নের পথে হাটেনি তো এই বিনোদন জগৎ? এখন এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
সিরিয়াল মানেই এক হিরো আর একাধিক হিরোইন:
এখনকার সিরিয়াল মানেই এক হিরো আর একাধিক হিরোইন। সত্যি কথা বলতে গেলে আধুনিক যুগের সিরিয়াল যেন পরকীয়া সম্পর্কে সিলমোহর দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর সেই কারণে বড় অভিনেতারা সিরিয়ালকে কোনদিনই সেভাবে সমর্থন করেননি।
বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,”খুব খারাপ একটি সিনেমাও একটি ধারাবাহিকের চেয়ে শতগুণে ভালো”। এই বক্তব্য থেকেই তার সিরিয়াল নিয়ে ধারণা সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যায়। প্রতিদিন নায়ক নায়িকার মাঝে ভিলেন ডেকে জোর করে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা।
চিত্রনাট্য দাবি না করলেও জোর করে সেই পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে একজন পুরুষের সঙ্গে একাধিক মহিলার সম্পর্ক তৈরি হয়। যেখানে স্বামী তার স্ত্রী এর সঙ্গে এবং অন্য মহিলার সঙ্গেও অন্তত একটা বিছানার দৃশ্য শেয়ার করবেনই। শুধুই কি তাই, এমন এমন কনসেপ্ট তৈরি করা হয় এই পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে যা থেকে সমাজের প্রচুর মানুষ প্রভাবিত হয়।
আরো পড়ুন – নিষিদ্ধ ছবি দেখতে পছন্দ করেন? কেন এটা নীল ছবি সেটা নিয়ে কোন ধারণা আছে কি?
আজকালকার দিনের ছোট বাচ্চারাও বাড়ির বড়দের সঙ্গে সিরিয়াল দেখে দেখে এমন সব জিনিস জেনে গেল যা আপনি আমি ছোটবেলায় কল্পনাও করতে পারতাম না। হিংসা ছড়ানো কূটনীতি পরনিন্দা পরচর্চা এই সব কিছু সিরিয়ালের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা ছাড়া কিছুটাই যেন TRP বাড়ানো যাচ্ছে না।
আরো পড়ুন – বিয়ের পর কি পড়াশোনা বন্ধ? প্রতিশ্রুতি রাখলো না শ্বশুর বাড়ি?
এসব সিরিয়ালের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। নেতাজির প্রেমকাহিনী দেখানো হয়, রানী রাসমণির বাড়ির কলহ বিবাদ নিয়েই এপিসোডের পর এপিসোড চলতেই থাকে এবং মানুষ সেটা উপভোগ করে। প্রত্যেক সিরিয়ালেই নায়িকা গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। এবং তার বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির লোকেদের খারাপ দেখানো, বা স্বামীর একাধিক বিয়ে যেটা আগেই বললাম, এইসব যেন বাধ্যতামূলক।
আরো পড়ুন – বিজ্ঞানী না সেলিব্রেটি কে বেশি প্রিয়? জনপ্রিয়তা পাওয়ার মূল শর্ত কোনটি?
গ্রাম বাংলার মেয়ের পরিচিতি পায়, নায়িকা একাই সব কিছু করে দিতে পারে গুন্ডা পেটানো, প্রশিক্ষণ ছাড়া আগুন নেভানো, এক রাতের মধ্যে প্রতিমা তৈরি করা, যখন তখন স্টেজ শো করে ফেলা – এইসব অতিপ্রাকৃতিক আর মহাজাগতিক কাজকর্ম নায়িকা একাই করে ফেলেন।
আরো পড়ুন – বড়দিনে ‘কেক’ খেতে ভালোবাসেন? কেক ছাড়া কেন ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন করা যায় না বলুন তো?
আর সেই দেখে ভুল ধারণা জন্ম নেয় দর্শকদের মনে। এখন এমন হিংসাত্মক কাজ কর্ম দেখানো হয় যা মানুষের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। পাই চরিত্র বদলালেও গল্প বদলায় না। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।