Breaking Bharat: পিকনিক ছাড়া শীতকাল ভাবতে পারেন কি? কিন্তু বাঙালির চড়ুইভাতির চর্চা বিশ্বজুড়ে, এটা কেমন করে সম্ভব?
দাঁড়ালে যেখানেই থাকুক আর যাই করুক তার কৃষ্টি সংস্কৃতির খ্যাতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে আছে বাঙালির কিছু নিজস্বতা আর পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে একটা মিশ্র কালচার তৈরি করা। কিন্তু কিছু জিনিস আদি অকৃত্রিম তার মধ্যে একটা হল এই চড়ুইভাতির বৈশিষ্ট্য (Winter without picnic is incomplete)।
শীত পড়তে না পড়তেই প্রতিটি বাঙালি বাড়ি যে পিকনিকের প্ল্যানিং করতে শুরু করে সেই পিকনিকের জন্ম আসলে বিদেশে সেটা জানেন? তাহলে শীতের কাঁচা মিঠে রোদ গায়ে মেখে চলুন চড়ুইভাতির ইতিহাসে চোখ দেওয়া যাক।
বাঙালির চড়ুইভাতির চর্চা বিশ্বজুড়ে:
বাঙালির কাছে পিকনিক অর্থাৎ চড়ুইভাতি মানে বাংলা সিনেমার অরন্যের দিনরাত্রির দৃশ্য। সঙ্গে অবশ্য ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে প্রত্যেকটা রবিবার চিড়িয়াখানা আর বিনোদন পার্কে উপচে পড়া ভিড়। এর পাশাপাশি আবার শীতের ঠান্ডায় গনগনে আগুনের শিখার মাঝে প্রকৃতির কোলে সকলে মিলে হুল্লোড়, এটাই আসল চড়ুইভাতি। এর আরেকটা নাম হল বনভোজন।
আগেকার দিনে অরণ্য বা গভীর মনেই এই ধরনের ভোজনের আয়োজন করা হতো বলেই এই নাম রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় অনেকটা পাল্টে গেছে। বিবর্তনের নিয়ম মেনে পিকনিকের ভেনু এবং মেনু বদলেছে শুধু বদলাইনি আনন্দ করার ইচ্ছেটা। কিন্তু এই পিকনিকের জন্ম আসলে যে ফরাসিদের দেশে সেটা কি জানেন আপনি?
আসলে পিকনিক হল একটা ফ্রেঞ্চ শব্দ যার অর্থ প্রকৃতির কোলেই হইহুল্লোড় খাওয়া দাওয়া আনন্দ করা । তবে জায়গা অঞ্চল এবং সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে এই পিকনিকের নাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বদলেছে। বাঙালির কাছে এগুলো আবেগের বনভোজন যার সঙ্গে প্রথম পরিচিতি ঘটান স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৯১১ সালে ব্রিটিশ শাসিত বাংলার বুকে তিনি তার লেখা অচলায়তন নাটকে বনভোজন শব্দের প্রথম উল্লেখ করেন। যারা চোখের বালি উপন্যাস পড়েছেন তাদের মনে আশা লতা আর বিনোদিনীর চড়ুইভাতী দৃশ্য আশা করি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। সাহিত্যের সঙ্গে ‘বনভোজন’ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সেটা বোধহয় পরবর্তীকালে টেনিদার প্ল্যানিং দেখলেই বোঝা যায়।
তবে সিনেমার বনভোজন সত্যজিতের ছবির কথাই মনে করায়। বাঙালি মেমোরি গেম এর সঙ্গে অনেকটা বেশি পরিচিত হতে পেরেছিল অরণ্যের দিনরাত্রি দেখে। পিকনিকে গেলে এই খেলা যেন বাধ্যতামূলক। এই পিকনিকের আঁতুঘর বলা হয় ফ্রান্সকে। আসলে সময়টা ফরাসি বিপ্লবের পরে।
মহাভারতেও পিকনিকের উল্লেখ রয়েছে?
আরো পড়ুন – একবার নয় বছরে দুবার হোলি উৎসব? দেশের মধ্যেই ঘটে এমন ঘটনা জানেন কি?
এই সময় সেই দেশের মানুষ আবার আগের অবস্থায় ফিরছিলেন ফলে চারপাশ স্বাভাবিক হচ্ছিল একে অন্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সময় কাটানোর মতো দারুন মুডে ছিলেন ফরাসিরা। মনে করা হয় খোলা আকাশের নিচে পিকনিক করার আইডিয়াটা বিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয়তা পায়ে ইংল্যান্ডে। তবে ব্রিটিশদের পিকনিকে নাট্য বিনোদনের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার এলাহী আয়োজন যে থাকত তা বলাই বাহুল্য।
এবার আসি ভারতবর্ষের প্রসঙ্গে কারণ ধ্রুপদী ভারতীয় শিল্প এবং সাহিত্যিক পিকনিকের কথা বা বাগান বাড়িতে উৎসব উল্লাসের কথার উল্লেখ রয়েছে। আগেকার দিনে সপার্ষদ রাজা-মহারাজারা মৃগয়া করতে বেরোতেন। আপনি কি জানেন মহাভারতেও পিকনিকের উল্লেখ রয়েছে?
আরো পড়ুন – এই সৌধের ভেতরেই আছে কিছু রহস্যময় দরজা! বন্ধ দরজা পেরিয়ে অন্য বিশ্বের খোঁজে বিজ্ঞানীরা!
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন, বলরামের সেই বনভোজনে নিদারুণ সুখ ভোগ করেছিলেন তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতেও এই চড়ুইভাতি বা পিকনিকের উল্লেখ রয়েছে। তখন হয়তো নাম অন্য ছিল। ভারতের শাসনকালে মুঘল সম্রাট থেকে শুরু করে পার্সিরা প্রত্যেকেই এই চড়ুইভাতির আনন্দে মেতেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনভোজন, চড়ুইভাতি পিকনিকে বদলেছে।
আরো পড়ুন – পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিপীঠ কোথায় জানা আছে? এই মন্দিরে দেবীর ছিন্ন মস্তক পুজো করা হয়
আর বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তার নানান্তরিত হয়েছে গেট টুগেদার হিসাবে। ভাত ডাল লুচি তরকারি জায়গায় হয়তো কন্টিনেন্টাল চাইনিজ এইসব জায়গা করে নিয়েছে পারিবারিক পিকনিক বা অফিস পিকনিকে। কিন্তু একটা দিন চেনা জীবনের ছকে বাঁধা রুটিন থেকে আলাদা হয়ে থাকতে যে পিকনিকের ভূমিকা কতটা সেটা অস্বীকার করেন না কেউই।