Breaking Bharat: ফুলন দেবী কে চেনেন? ডাকাত হিসেবে নাকি লোকসভার সদস্য হিসেবে? একই অঙ্গে এত রূপ (Phoolan Devi Biography in Bengali)!
নারী চরিত্র কখনো চন্ডী কখনো লক্ষী, বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। আজকের এই প্রতিবেদনে এমন একজনের কথা বলা যার জীবনটা কলঙ্কময় আবার বর্ণময়। এক বাক্যে তার পরিচয় পর্ব দিতে গেলে আঁতকে উঠবেন সাধারণ মানুষ। আবার সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে জনগণের জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা হয় যেখানে সেই লোকসভার সদস্য তিনিই।
ফুলন দেবী কে ছিলেন?
উত্তর প্রদেশের এক অতি গরিব পরিবারে মিলনের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। কন্যা সন্তান মানেই তো বাড়ির বোঝা, তাই না? তাই সবার আগে বিয়ে দিয়ে দেয়া। ১১ বছরের বাচ্চা মেয়েটার বিয়ে হয় ৩০ বছরের এক লোকের সঙ্গে। কিন্তু স্বামীর নির্যাতন ফুলন সহ্য করতে পারিনি।
বাড়ি ফিরে এসেছিল বাবার বাড়ি কিন্তু সেখানে অভিজ্ঞতার সুখের ছিল না। তার খূড়তে তো ভাইয়ের চক্রান্তে জেলে যেতে হয় মেয়েটাকে। আর সেখানেই পাশবিক পৃথিবীর একটা রূপ তার সামনে ধরা পড়ে। তিন দিনের জেল হেফাজতে ধর্ষিতা হতে হয় তাকে। না এই মেয়েটার আর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পরিবার বা পাড়ায় ঠাঁই হয়নি। অনেকটা সিনেমার গল্পের মত শোনাচ্ছে না সূচনাটা ? চলুন বিস্তারিত জীবনটুকু চিনিয়ে দিই আপনাদের।
ফুলন দেবী: যেভাবে হয়ে উঠেন দস্যু রানী:
আশির দশকের প্রাক্কালে সঙ্গে এক ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ফুলন। যদিও কী ভাবে ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। কেউ বলেন ঘটনাচক্রে, কেউ বলেন অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে স্বেচ্ছায় সে দলে যোগদান।
কিন্তু যেহেতু মেয়ে তাই সেখানেও দৃষ্টি এসে পড়েছিল তার শরীরের দিকে। এবার উল্টোদিকে ছিলেন ডাকাত সরদার বাবু গুজ্জর। যদিও দ্বিতীয় বিক্রম ফুলনকে রক্ষা করে। যখন ফুলন কে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় তখন প্রতিবাদ করে বিক্রম দলনেতাকে হত্যা করে। এরপর বিক্রম ফুলনের প্রেমের কাহিনী শুরু।
বিয়েও হয় আর নববধূ ফুলন তখন তার প্রাক্তন স্বামীর বসবাসের গ্রাম দখলে সবার আগে আগ্রহী হয়। জনসমক্ষে তার প্রাক্তন স্বামীকে শাস্তি দেয় ফুলন। এখানেই শেষ নয়, বেশি বয়সের পুরুষেরা যাতে নাবালিকা কে বা কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে না করতে পারে তার জন্য একটি হুমকি লেখাও ওই গ্রামে দিয়ে যায় ফুলন।
আরো পড়ুন – কিছু মানুষকে দেখলে কুকুর মাত্রা অতিরিক্ত চিৎকার করে কেন?
নিজে মেয়ে তাই মেয়েদের উপর হওয়া অত্যাচারের যন্ত্রনা তিনি অন্তর থেকে বুঝেছিলেন। তাকেও তো বারবার সহ্য করতে হয়েছে এই যন্ত্রনা। এরপর এক বিয়ে বাড়িতে সদল বলে ডাকাতি করতে গিয়ে নিজের দুই ধর্ষণকারীকে খুঁজে পায় ফুলন।
আরো পড়ুন – বাংলাদেশে ভালো বাংলা ছবি তৈরি হচ্ছে না? বাংলাদেশের সিনেমায় শিল্পী সংকট বড় সমস্যা?
না সবাইকে অবশ্য পাওয়া যায়নি তাই রাগে ক্ষোভে উন্মত্ত ফুলন বাকিদের পাওয়া না যাওয়ায় লাইন ধরে ঠাকুর বংশের ২২ জনকে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলেন। বেমাইয়ের এই গণহত্যা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে সরকার, এর প্রতিবাদে চলে ভারত জুড়ে আন্দোলন।
আরো পড়ুন – বাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্ল্যানিং করছেন? কোন কোন নিয়ম আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে সেটা জানেন?
১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন সরকার সন্ধিপ্রস্তাব দিতে চাইলে ফুলন আত্মসমর্পণের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেন।। যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ নয় মধ্যপ্রদেশে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন সেটাও যেমন ছিল সঙ্গে পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি, ভাইয়ের চাকরির বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিয়েছিলেন ফুলন। প্রায় আট হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ফুলন আত্মসমর্পন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়ে পরপর দুবার লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ২০০১ এ সংসদ থেকে যখন বেরিয়ে আসছিলেন তখন নয়া দিল্লিতেই ঠাকুর পরিবারের লোকেরা তাকে হত্যা করে। যদিও আজও ঠিক সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই রয়ে গেছে ফুলন দেবী চরিত্রটি জনমানুষের মাঝে।