Breaking Bharat: পাপের শাস্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা! পাপ করলে রেহাই নেই কিছুতেই ! শাস্তি তোলা আছে অন্য কোথাও? “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে” । অর্থাৎ স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে আর কে শাস্তি দেবেন সেটা বিধাতা আড়াল করে রেখেছেন।
আজ যারা অন্যায় করছেন তারা কিন্তু ভবিষ্যতে সাবধানে থাকবেন, আপনি কখনোই ভাববেন না যে আপনি পার পেয়ে গেছেন, কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা কিন্তু আপনাকেও করতে হবে (punishment of sin is just waiting for time)।
ছোটবেলায় মা কাকিমারা বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের বা ধর্মগ্রন্থের প্রসঙ্গ তুলে আমাদের অনেক কিছু শেখানোর চেষ্টা করেছেন। তা সে মঙ্গলকাব্যের গল্প হোক বা ধর্মকথা। এইসব গল্পকথা, ছড়ার মধ্যে দিয়ে জীবন বোধের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এমনই একটা লাইন আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবার পালা।
তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে:
‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’ – এই লাইনটা পড়া মাত্রই চোখের সামনে অংশ আর কৃষ্ণকে মনে পড়ছে তো আপনার? এটাই খুব স্বাভাবিক কারণ এই লাইনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তাদের মাহাত্ম্য। অন্তর্নিহিত অর্থে কিন্তু বলাই আছে অন্যায় করলে শাস্তি পেতে বাধ্য আপনি।
মহাভারতের গল্প কথা অনেকেই জানেন। অনেকে আবার পুরো ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে মুখস্ত বলতে না পারলেও আসল ঘটনাটা কী আর কী সের জন্য মহাভারত সেটা সংক্ষেপে বলতে পারেন। আর মহাভারতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিটা শ্লোক, স্তোত্র, উদাহরণ আমাদের জীবনের সঙ্গে যে কতটা জড়িয়ে আছে তা বোধ হয় একটু চিন্তা করলে বেশ উপলব্ধি করা যায়।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষে অষ্টম তিথির মধ্যরাতে জন্ম নেয় কৃষ্ণ। যেহেতু দিব কি অষ্টম গর্ভের সন্তান কংসের বিনাশের কারণ হবে বলে দৈব বাণী আগে থেকেই হয়েছিল, তাই সেই সন্তানকে মেরে ফেলতে উদ্যত ছিল কংস। বংশ রক্ষার পাশাপাশি নিজের সন্তান হারানোর কষ্ট অষ্টম বারের জন্য না পাওয়ার আশা নিয়ে জন্য কৃষ্ণকে ঝড় জলের রাতেই গোকুলে নন্দরাজের কাছে ঘরে গোপনে রেখে আসেন বাসুদেব।
আর সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নন্দের ঘরে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তানকে। বাসুদেব জানতেন না তিনি যাকে দেবকীর কোলে রাখতে চলেছেন তিনি আসলে দেবী মহাশক্তিরূপে ‘যোগমায়া’। নন্দের স্ত্রী যশোদার কাছে কৃষ্ণকে রেখে, স্বয়ং যোগমায়াকেই মথুরায় নিয়ে আসেন তিনি। কংস সকালবেলা দেখেন কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন দেবকী।
সেই সন্তানকে হত্যা করতে গেলে তখনই দৈব বাণী হয় “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে” । অর্থাৎ স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে আর কে শাস্তি দেবেন সেটা বিধাতা আড়াল করে রেখেছেন। গোপনে তিনি বেড়ে উঠছেন একটু একটু করে।
পাপের শাস্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা!
এই প্রসঙ্গ প্রতিবেদনে তোলার আসল কারণ এটাই যে মানুষ যখন অন্যায় করে তখন কোনও দিক খেয়াল করে না। অর্থাৎ এর ফলে অন্য জনের কতটা ক্ষতি হচ্ছে বা অন্যজনকে কতটা কষ্ট দেয়া হচ্ছে এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় পায়না অন্যায়কারী। যার ফলে তার পাপের বোঝা বাড়তেই থাকে আর সেই পাপ খন্ডন করার জন্য বিনাশ করার জন্য অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা কাউকে না কাউকে তৈরি করেই রাখেন।
আজকালকার সমাজে অনেক সময় দেখা যায় যৌবনকালে নানা ধরনের অন্যায় করছেন যে মানুষ, বার্ধক্যে গিয়ে তাকে কোনো না কোনোভাবেই খারাপ থাকতে হয়েছে। হতে পারে তিনি প্রচুর মানুষকে কাঁদিয়েছেন আর বয়সকালে হয়তো তার সন্তানের ব্যবহারের জন্যই প্রতিদিন চোখের জল ফেলতে হচ্ছে তাকে।
আরো পড়ুন – বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর জীবনে ঝগড়া কি আবশ্যিক? বিবাহিত সম্পর্কে ঝগড়া ঠিক কতটা প্রয়োজনীয়?
এগুলো আগে থেকে হিসেব করে বলা মুশকিল কিন্তু মাথায় রাখতে হবে অন্যায় পাপ ঈশ্বর কখনো ক্ষমা করেন না। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে ভগবানের অস্তিত্ব নিয়ে। সেটা অবশ্যই তর্কাতীত একটা বিষয়। তবে এটা সত্যি কথা কেউ যদি দোষ করে শাস্তি তাকে পেতেই হয়। সাময়িকভাবে রেহাই পেয়ে গেলে বা দোষ ধরা না পড়লে অনেকেই মনে মনে খুশি হন।
আরো পড়ুন – বিবাহিত দম্পতিরা প্রথম সন্তান নিয়ে এত ভাবেন কেন? সন্তান নিতে সমস্যা কোথায়?
কিন্তু তিনি জানেনই না যে অচিরেই তার বিনাশের কারণ তৈরি হচ্ছে বা বেড়ে উঠছে। ঠিক যেমন কংস জানতেই পারেননি যে কী ভাবে কৃষ্ণ গোকুলে বড় হয়ে মথুরাতে আসেন কংসকে তার পাপের শাস্তি দিতে। নানাভাবে কৃষ্ণকে হত্যার পরিকল্পনা করলেও তা বারবার অলৌকিক কারণে বানচাল হয়ে যায়।
আরো পড়ুন – বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ? প্রতিদিন কতটা পরিমান খাবার অপচয় হয়?
এর থেকেই প্রমাণিত দোষে যতই দোষ করে নিজেকে আড়াল করে রাখার বা ভালো থাকার চেষ্টা করুক না কেন কেউ একজন সেই অন্যায়ের বিচার করার জন্য কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে। আর সময় হলে সে সামনে এসে দাঁড়াবে ন্যায়বিচার দিতে।
এত তত্ত্বকথা আমাদের ভাবার প্রয়োজন নেই কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমাদের সৎ পথে থাকার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। ভালো থাকুন ভালো রাখুন।