Breaking Bharat: নারী মানেই কি তিনি যৌন দাসী? নারীর জীবনের পটভূমির পরিবর্তনের নেপথ্যে কী থাকে? নারী মানেই শয্যাসঙ্গিনী ? মানে যাকে দেখলেই বিছানায় টেনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে? এই ধারণাগুলো পুরুষের মনে যত বেশি করে থাকবে ততই সমাজ অধঃপতনের পথে যাবে।
একটা সময় ছিল যখন নারীদের দুটো ভাগে বিভক্ত করা হতো। একজন যে ঘরে থাকবে আর একজন যে বাজারে বা রাস্তায় থাকবে। সোজা কথা বলতে গেলে একজন যদি হন স্ত্রী, অন্যজন তবে যৌনদাসী বা বেশ্যা। কিন্তু কেন এইভাবে জীবন যাপন করতে হয় নারীদের, ভেবে দেখেছেন কখনো?
১৮ শতকের বেশ্যালয় নিয়ে নারীদের অবস্থান:
যৌন দাসী শব্দ তার বর্তমান নামকরণ বেশ্যা। বাংলার বুকে বিশালের সূচনা কিন্তু সূদূর অতীতে। একটা সময় ছিল যখন ‘কলকাতাকে বাংলার বেশ্যালয়ের রাজধানী বলা হত‘। সাল ১৮৫৩, বেশ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের বেশি ৷
এর পরের সালের হিসেব ১৮৬৭ অর্থাৎ মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধান বেশ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার। ভাবতেই পারেন জোর করে সেখানে নারীদের আনা হয়। কিন্তু সার্ভে বলছে মহিলারা এই পেশায় যুক্ত হন মূলত দুটি কারণে। একটা অবশ্যই জোর করে অর্থাৎ বাধ্য হয়ে আরেকটা নিজের ইচ্ছেতেই স্বভাবগত কারণে।
অনেকেই নিজের শরীরকে পণ্য হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরে ব্যর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে এই পেশাকে ব্যবহার করেন। ১৮ শতকের বেশ্যালয় নিয়ে যে পরিসংখ্যান একটু আগেই দিলাম সেখানে কিন্তু দেখা গেছিল বেশিরভাগ মহিলারাই হিন্দু ধর্মের। এই প্রসঙ্গে আপনাদের একটা মানসিক রোগের কথাও জানিয়ে রাখা দরকার।
এই রোগে মহিলারা নিজেদের যৌন ইচ্ছে তীব্র করতে চান:
‘নিম্ফোম্যানিয়া‘ – এটা একটা মানসিক রোগের নাম এই রোগে সাধারণত মহিলারা আক্রান্ত হন। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে মহিলারা উদ্বিগ্ন আর অবসানের মধ্যেই নিজেদের যৌন ইচ্ছে প্রবল ভাবে তীব্র করতে চান। স্বভাবতই একাধিক পুরুষের সঙ্গ তারা কামনা করেন।
হতে পারেন তিনি বিবাহিত হতে পারেন অবিবাহিত কিন্তু অতিরিক্ত যৌন কামনা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায় আর সেটা এই রোগের লক্ষণ অর্থাৎ এনারা সুস্থ নন। তবে সমাজের বরাবরই একটা ধারণা ছিল নারী মানেই তার পরিচয় দেহ এবং শরীর দিয়ে সে ক্ষেত্রে কোন মহিলার মধ্যে যদি এই রোগ থাকে তাহলে সমাজ এবং পুরুষ সেটাকে আমাদের উপায় বলেই ভেবে নিয়ে এসেছে। রোগীর রোগ সেখানে গুরুত্ব পাইনি তাই তার চিকিৎসাও সম্ভব হয়নি।
উনিশ শতকের বাঙালি মহিলাদের যৌনতার প্রসঙ্গ:
এইসব মহিলাদের জীবন নিয়ে সাহিত্যিকরা নানা সময় গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন। উনিশ শতকের বাঙালি মহিলাদের যৌনতার প্রসঙ্গ সাহিত্য উল্লেখ করতে গিয়ে, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বলেছেন, ‘একঘেয়ে জীবনযাপন প্রসূত মানসিক অবসাদ এবং তা থেকে বেরিয়ে রোমাঞ্চকর যৌন অভিজ্ঞতা আহরণের জন্য সম্ভ্রান্ত ঘরের হিন্দু মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হতেন’।
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা থেকে রোমান সাম্রাজ্য, চাণক্যের রাজনীতি থেকে কলকাতার বাবু সম্প্রদায় – যৌনতার সঙ্গে নারীত্বের মিশেল খুঁজেছেন প্রত্যেকেই। সুন্দর পৃথিবীতে নিঃসন্দেহে প্রত্যেকেই ভালোভাবে বাঁচতে চাই কিন্তু তার জন্য যে সুখ স্বাচ্ছন্দ প্রয়োজন হয় সেটা জোগাড় করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
আরো পড়ুন – Block ex: প্রাক্তন কে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করতে চাই, অতীতের স্মৃতি এখনো ব্যথা দিচ্ছে?
তাই সমাজের তথাকথিত স্বাভাবিক পথে না হেঁটে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হয় অনেককেই। দিনে যুদ্ধবন্দী নারীদের আশ্রমে রাখা হতো। সেখানেও চলত তাদের শরীরের ব্যবহার। যৌনপল্লীতেও একই খেলা। জমিদার আমলে বাইজী বাড়িতেও একই নিয়ম।
আরো পড়ুন – প্রথমবার যৌন সম্পর্কে নার্ভাস! শারীরিকভাবে একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে জেনে নিন
এই নিয়েএকাধিক সিনেমা হয়েছে, সাহিত্যেও বলা আছে যে জোর করে অভাবের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিক্রি হওয়া নারীরা আশ্রয় পায় এই যৌনতার কুটিরে। আবার অনেকে বিক্রি হতে নয়, নিজের শারীরিক চাহিদাকে পূরণ করতে অর্থ রোজগারও এই কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান।
আরো পড়ুন – স্বামীর সঙ্গে তার স্ত্রীর পাসওয়ার্ড শেয়ার করা কতটা প্রয়োজনীয়?
সমাজের একটা ধারণা হলো নারীর সম্মান নির্ধারিত হয় তার শরীরের পবিত্রতা ও অপবিত্রতা নিয়ে। স্বামী যদি নারী দেহ স্পর্শ করে তাহলে সেটা পবিত্র। অন্য মানুষ হলে তা অপবিত্রতার লক্ষণ। অতএব সম্মানহানি তো বটেই, সোজা কথায় শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের মতো নামও আসতে পারে।
ভাবুন তাহলে প্রতি রাতে প্রতিদিনই বা প্রতি দুপুরে এই যৌনদাসীভাবে সারা তাহলে কত সম্মানের ডালি সাজিয়ে বসে আছেন যে এত পুরুষ সেই সম্মান নষ্ট করলেও তাদের সম্মানের ঝুলি কখনোই খালি হয় না। শুধু তারা নিজেদের কষ্টকে বুকে আগলে রেখে, আড়াল করে রেখে, নিজেদের সম্মান বিক্রি করে পৃথিবীর বুকে তথাকথিত সমাজের ভালো মেয়েদের সম্মান বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আরো পড়ুন – স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার! অর্থাৎ স্বামীর উপর নির্ভর করে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক?
এবার বলুন,স্বভাবগত কারণ বা বাধ্য হওয়া কারণ, বিকৃত যৌনতাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক কোন মানসিকতার উদাহরণ?