Breaking Bharat: জেনে নিন ‘মা কালীর আরাধনায়’ লুকিয়ে দেবীর রূপের মাহাত্ম্য (Maa Kali)। দেবী চণ্ডী রণরঙ্গিনী রূপে সৃষ্টিকে রক্ষা করতে প্রলয়ের সংঘারে উদ্যত। তিনি চামুন্ডা তিনি ভয়ংকর। দীপাবলির আলোই যখন ঝলমল করে চারপাশ তার মধ্যেই মা কালীর আরাধনা লুকিয়ে দেবীর রূপের মাহাত্ম্য।
হিন্দু পুরাণ অত্যন্ত জটিল বিষয় সহজে যার তল পাওয়া যায় না। কোথাও মন্ত্র সাধনা কোথাও তন্ত্র সাধনা, মায়ের আচার উপচারে এতোটুকু ভুল হলে মাশুল দিতে হয় বিশ্ব সংসারকে।
“ওঁ কালী কালী মহাকালী কালীকে পাপহারিণী
ধর্মার্থমোক্ষদে দেবী নারায়ণী নমোস্তুতে”
দেবী দুর্গা ঠিক যেভাবে আবির্ভূত হন ধরা ধামে তার বিপরীত ‘রণচন্ডী রূপে মা কালীর আগমন’। ঈশ্বরের প্রার্থনা করার বা ডাকার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম হয় না। সেখানে ভক্তিই হল আসল মন্ত্র।
এ কথা সঠিক হলেও, বৈদিক মতে পুজো-অর্চনার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম আছেই যা কিনা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তা ছাড়া কালীপুজোর দিন পুজোর জন্য উপবাস থেকে শুরু করে জপতপ, দেবীর আরাধনা এই সবকিছুর মধ্যেই দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনীয়।
আসলে মা কালী হলেন সময়ের প্রতীক। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার রাস্তা দেখিয়ে দেন তিনিই। কমবেশি আমরা সকলেই জানি যে পুরাণ মতে সতী দক্ষরাজের যজ্ঞে আমন্ত্রণ না পেয়ে উতলা হয়ে ওঠেন বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু শিব জানতেন পতি নিন্দা সহ্য করতে পারবেন না সতী।
তাই তিনি পার্বতীকে দক্ষ রাজার যজ্ঞস্থলে যাওয়ার অনুমতি দিতে চাননি। তখন দশমহাবিদ্যা অর্থাৎ দশটি রুপে শিবের সামনে প্রকট হন স্বয়ং পার্বতী। কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা।
ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজম্।
কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুণ্ডমালা বিভূবিতাম্।।
কালি সাধনা সহজ নয় আর যুগ যুগ ধরে ‘মা কালীর আরাধনায় তন্ত্র-মন্ত্রে’ নানা উপচার প্রচলিত। তন্ত্র অনুসারে বিভিন্ন রূপে পূজিতা হন কালী। মা কালী অষ্টধা, অর্থাৎ তাঁর আটটি রূপ আছে বলি তন্ত্রসাধনায় বিশ্বাস করা হয়ে থাকে।
দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডা, শ্মশানকালী এবং শ্রীকালী। – এই হল মায়ের আটটি রূপ। কালীর সবথেকে প্রসিদ্ধ ও জাগ্রত রূপ হিসেবে দক্ষিণাকালীর রূপকে পুজো করা হয়। শাস্তি বলা আছে দক্ষিণ দিকের যিনি অধিপতি অর্থাৎ যমরাজ তিনি কারীর এই রূপে ভয় পান।
আরো পড়ুন – Holding the toilet: আপনার কি ‘পটি চেপে রাখার অভ্যাস’ আছে? ‘পায়খানা চেপে রাখলে’ কি হতে পারে জানেন?
মা কালীর এইরূপে তিনিই মুণ্ডমালা বিভূষিতা। মায়ের দুই ডান হাতের একটিতে তিনি ভক্তদের বর দেন এবং অপরটিতে অভয়। বামদিকের দুই হাতে তিনি ধরে থাকেন সদ্যকাটা নরমস্তক। তাঁর ডান পা মহাদেবের বুকের উপর রাখা থাকে। এই না ধরা দেন শ্যামা রূপে।
অনেকেই বলেন ‘কালীপুজো সাংঘাতিক মা নাকি ভীষণ ভয়ংকরী‘। এক্ষেত্রে তাহলে শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাটা একটু জেনে রাখা দরকার। ‘কাল’ অর্থাৎ সময়ের জন্মদাত্রী পালনকর্ত্রী এবং প্রলয়কারিণী বলেই দেবীর নাম মা ‘কালী’। তিনি শিব বা শব – এর উপর দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দেন মৃত্যুর ওপর তিনিই শাশ্বত জীবনের প্রতীক।
আরো পড়ুন – Benefits of ayurveda: আয়ুর্বেদিক ঔষধের উপকারিতা! গাছ গাছালি থেকে কিভাবে ঔষধের আবিষ্কার ?
তিনি সৃষ্টি, তিনি ধ্বংস। তিনি রক্ষা আবার তিনিই পালন। শনি এবং মঙ্গলবার বিভিন্ন জায়গায় রক্ষাকালী পূজা অর্চনা দেখা যায়। এই মা কিন্তু দক্ষিণাকালীর একটি নাগরিক রূপ। শাস্ত্র মতে সাধকদের আরাধ্যা হলেন দ্বিভূজা গুহ্যকালী। পুরাণ মতে ইনি দেবী ভয়ংকরী।
আরো পড়ুন – Conjunctivitis: বাচ্চাদের চোখে ইনফেকশন হচ্ছে? কনজাংটিভাইটিস নিয়ে সতর্ক থাকুন!
কালিকাপুরাণ অনুসারে ভদ্রকালীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো । তিনি একদিকে ভদ্র ভালো অন্যদিকে কালি অর্থাৎ শেষ কাল সেই সময়ের প্রতীক অর্থাৎ বিনাশ কালে তিনি মঙ্গলময়ী। তাঁর কপালে অর্ধচন্দ্র, মাথায় জটা। শাস্ত্রমতে মহাকালী দুটি রূপে বিরাজমান।
কিন্তু এই রূপে সাধনার পূর্বে ভক্তকে তিনি ভয় দেখান ।কিন্তু সেই ভয়কে জয় করে যদি ভক্তি রসে ডুব দিতে পারেন ভক্ত তবে কালী তার সহায় হন।