Breaking Bharat: চোখের জলের কোন দাম হয় না ? ডাক্তাররা বলছেন ভালো থাকতে গেলে চোখের জল ফেলা জরুরি ! কেন?
গানের কথাই বলাই আছে, “চোখের জলের দেয় না কেউ দাম”। এখন বলতেই পারেন গোটা বিষয়টাই তো প্রেমের নিরিখে লেখা হয়েছে। কিন্তু যাই বলুন চোখের জলের সঙ্গে আবেগ অনুভূতির একটা আলাদাই সম্পর্ক আছে। যাকে বলে অনুভূতির আবেদনে চোখের জলের আমন্ত্রণ।
চোখের জল ফেলা মানে খারাপ থাকা বা কষ্টের অনুভূতি:
খুব ভারী শব্দ শোনালো? বেশ তাহলে হালকা করেই বলা যাক। শুধুমাত্র দুঃখ-কষ্ট বা আঘাত পেলেই যে চোখে জল আসে এ কথা কে বলল? পিঁয়াজ কাটতে গেলে যে চোখ থেকে জল পড়ে তাকে কী বলবেন?
সবথেকে অবাক করার মত কথা হলো যে চোখের জল ফেলা মানে খারাপ থাকা বা কষ্টের অনুভূতির কথা ধরে নেওয়া হয় , সেই চোখের জল পড়া কতটা জরুরী তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আজকের গবেষকরা (It is important to shed tears to stay well)।
মানুষ মাত্রই অনুভূতি আবেগপ্রবণ। জীবনের প্রতিটি পরতে ঘটতে থাকা নানা ঘটনার সঙ্গে যেন ভালোলাগা আর খারাপ লাগা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। ভালো লাগলে বা ভালো কিছু হলে যেমন একরাশ হাসি চলে আসে ঠোঁটের কোণে, ঠিক তেমনি খারাপ থাকা বা খারাপ অবস্থার কথা ভাবার মধ্যেও চোখে আসে জল।
দুঃখের কোন কথাও চোখে জল আনতে পারে:
এটা যে শুধুমাত্র নিজের সঙ্গী হয় নিজের জীবনের কোন ঘটনার সঙ্গে হয় তা নয় অন্যের জীবনের সঙ্গে জড়িত দুঃখের কোন কথাও চোখে জল আনতে পারে (Any words of sadness can bring tears to the eyes)। অনেকে তো সিনেমা সিরিয়াল দেখেও কষ্ট পেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। রান্নার জন্য পেঁয়াজ কাটতে কাটতে কেঁদে ফেলা নতুন কথা নয়।
অর্থাৎ চোখ থেকে জল পড়বেই। ডাক্তাররা বলছেন এই চোখের জল ভীষণ দামি । অন্তত টাকার নিরিখে না হলেও শরীর সুস্থ রাখার জন্য তো বটেই। গবেষণা বলছে আপনার চোখ সুস্থ কিনা বা ঠিক আছে কিনা সেটা জানার জন্য চোখ থেকে জল পড়া দরকার। এই চোখের জলই আপনার চোখকে মসৃণ এবং আর্দ্র রাখে। পাশাপাশি সংক্রমণ এবং চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে চোখের জল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
এই চোখের জল আসলে কী?
অশ্রু বা কান্নার আসল কারণ হরমোনাল কিছু পরিবর্তন। আবেগপ্রবণ ঘটনা যদি আঘাত করে মনকে অর্থাৎ মস্তিষ্ক সেই সিগনাল পায় তখন চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। এটা আসলে এক ধরনের তরল। চোখের ল্যাক্রিমাল নালী থেকে বেরিয়ে জল এবং লবণের মিশ্রণে এই চোখের জল তৈরি হয়।
সেই কারণেই স্বাদ কিছুটা নোনতা বটে। অনেকেই হয়তো জানেন না কারনই অকারণে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জলের মধ্যে কত ধরনের রাসায়নিক উপাদান আছে। বিজ্ঞান বলছে এতে তেল, শ্লেষ্মা এবং এনজাইম থাকে যা জীবাণুকে ধ্বংস করে চোখ সুরক্ষিত ও সুস্থ রাখে।
আরো পড়ুন – শিক্ষাগুরু অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের সম্পর্ক কেমন?
কাঁদলে মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়:
আপনি কি জানেন যে চোখের জলে লাইসোজাইম নামে একটি বিশেষ ধরনের তরল পাওয়া যায়, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা সম্পন্ন ফলে এটি সংক্রমণের হাত থেকে চোখকে রক্ষা করে। পাশাপাশি কান্না আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক চাপ মুক্ত করে মানুষকে।
আরো পড়ুন – ৭৫ বছর পর ভাই বোনের হঠাৎ দেখা! হারিয়ে যাবার সম্পর্কের মিলন গাথা নিয়ে তৈরি এক রূপকথা
কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কাঁদলে মন অনেকটা হালকা হয়ে যায় (Crying makes the mind a lot lighter) এটা যেমন সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা রয়েছে, ঠিক তেমনি বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিও রয়েছে। কান্নার বেসিক দুটো প্রকারভেদ আছে। এক হল বেসাল টিয়ার্স এবং দ্বিতীয়টি হল রিফ্লেক্স টিয়ার্স।
আরো পড়ুন – পুজোর সময় মাথায় ঘোমটা দেওয়ার রীতির পেছনে আসল কারণ কি ভেবেছেন কখনো?
পেঁয়াজ কাটতে কাটতে চোখ থেকে জল পড়া:
প্রথমটা হল চোখের পলক পড়লে জল পড়া এর জন্য আলাদা করে কোন আবেগ লাগে না। দ্বিতীয়টির জন্য অর্থাৎ রিফ্লেক্স টিয়ার্সের ক্ষেত্রেও চোখে যদি ধুলো পড়ে বা চোখ কড় কড় করে, অনেক সময় ঠান্ডা লাগে কিংবা পেঁয়াজ কাটতে কাটতে চোখ থেকে জল পড়া – এগুলি তার লক্ষণ।
আরো পড়ুন – My hair : ভেজা চুলের সমস্যা? সময়ের অভাবে স্নান করে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে রাখেন?
ডাক্তার বলেন কান্না শরীরে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে এর ফলে শরীরের ব্যথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেসাল টিয়ার্স মস্তিষ্ককে শ্লেষ্মা শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। তাহলে বুঝলেন তো চোখের জলের সত্যিই কত দাম!