Breaking Bharat: মায়ের সঙ্গীত সাধক পান্নালাল ভট্টাচার্য (Pannalal Bhattacharya) কেন পালালেন জীবন থেকে? মায়ের গান গেয়ে যিনি সবার মন জয় করেছিলেন, সেই তিনি জীবন ছেড়ে পালালেন মাত্র ৩৬ বছর বয়সে? কেন? কী এমন ঘটত তাঁর জীবনে যার কারণে বারবার ছুটে যেতেন শ্মশানে?
পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনী :
একজন মানুষ যার গলায় ছিল মায়ের ভক্তি রস। তিনি কীভাবে পাল্টে গেলেন? কেন বা অকাল মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন তিনি? জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছিলেন পান্নালাল। পরিবার সূত্রে জানা যায় ১১ ভাই-বোনদের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। দাদার কাছেই মানুষ তিনি।
দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য নিজের ছেলের মতো করে বড় করে তুলেছিলেন পান্নালালকে। গলায় ছিল সুর কিন্তু মেন স্ট্রিম ছবির গায়ক হয়ে ওঠা আর হল না। বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগে সেই সময় দাপুটে রাজপাট ছিল শচীন কর্তা, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়দের মতো কালজয়ী শিল্পীদের।
না সেই দৌড়ে পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন না। তিনি একটা সময় ছিলেন ঘোরতর সংসারী। ফুটবলের ভক্ত ছিলেন তিনি। আজীবন মোহনবাগানকে ভালবেসে সমর্থন করে গেছেন তিনি।
মায়ের দর্শন পেতে ব্যাকুল ছিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য:
একজন মানুষ কীভাবে বদলে জেতে পারেন তা বোধহয় পান্নালালের জীবন দর্শন না দেখলে বোঝা যায় না। ঘোরতর সংসারী মানুষটা নিজের জীবন নিয়ে খুশি ছিলেন না। যেন সবসময় খুঁজে গেছেন নিজেকে। দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর দর্শন পেতে আকুল ছিলেন তিনি।
তাঁর জীবনে নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই বলেন হয়তো বা সঠিক গুরুর অভাবে সেই সিদ্ধিলাভ হয় নি। শোনা যায় কালিপুজোর সময় দক্ষিণেশ্বরে অনুষ্ঠান করার পরে সেখানেই সারা রাত কাটাতেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। মায়ের দর্শন পেতে ব্যাকুল ছিলেন তিনি।
পান্নালাল ভট্টাচার্যের শ্যামা সংগীত:
কিন্তু সেই দেবী দর্শন হল না সারা জীবনে। কথিত আছে একদিন অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় আগে হঠাৎ করেই ট্রেনের মধ্যে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য (Pannalal Bhattacharya)। সবাই অবাক, কেন কাঁদছেন তিনি? পান্নালাল জানান মাকে তুঁতে বেনারসি পরান হয়েছে! কেউ বিশ্বাস করেন নি।
আরো পড়ুন – APJ Abdul Kalam :কেমন ছিল ‘ভারতের মিসাইল ম্যান এপিজে আবদুল কালামে’র জীবনের শেষ মুহূর্ত?
পান্নালাল কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। পান্নালালের কথায় যখন অন্যান্য শিল্পীরা মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্রের মত শিল্পীরা মন্দিরে গিয়ে দেখেন মা ভবতারিণীকে তুঁতে রঙের বেনারসি পরান হয়েছে। এতটাই মায়ের প্রতি টান ছিল তাঁর। গলায় ছিল শ্যামা মায়ের আশীর্বাদ।
আরো পড়ুন – Lion : হিংস্র প্রাণী ‘পশুরাজ সিংহ’কে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে? কি?
শ্মশানে গিয়ে শিশুর মত করে কাঁদতেন একবার যদি দেখা দেন সেই আশায় মা ভবতারিণীকে স্মরণ করতেন। ক্রমাগত জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছিলেন তিনি। বিবেক বৈরাগ্য বাড়ছিল কিন্তু মায়ের দেখা মেলেনি। ঈশ্বর দর্শন হয় নি , তাই অবসাদ এবং অতৃপ্তি নিয়ে নিজেকে শেষ করে দিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য।
আরো পড়ুন – Pizza Man : পাঞ্জাবের পিৎজা ম্যানকে চেনেন কি? তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পিৎজা আর বার্গারের নাম!
তিনি ৩৬ টি আধুনিক, ১৮টি রেকর্ড, ৩টি বাংলা সিনেমার গান, এবং ৪০টি শ্যামা সংগীত রেকর্ড করেছেন (pannalal bhattacharya shyama sangeet)।তাঁর জীবনে মাকে পাওয়া হল না এই আক্ষেপ কাটল না। ৩৬ বছরেই জীবন শেষ! মরণের পরে হয়তো মিলবে মায়ের দেখা।