Breaking Bharat: উল্টোডাঙ্গা, হাতিবাগান, শিয়ালদহ কিংবা টালিগঞ্জ বা বালিগঞ্জ নাম সৃষ্টির ইতিহাস জানেন (History of name)? নাম দিয়ে যায় মানুষ চেনা, নাম দিয়ে যায় জায়গা চেনা । কিন্তু চেনা জানা জায়গাগুলোর নামকরণের ইতিহাস কি আদৌ জানা?
এই নামকরণের ব্যাপারটা কিন্তু ভারী অদ্ভুত। জানেন?
মানুষের বা কোনও জিনিসের পরিচয় বহন করে তার নাম। মানে ধরুন আকাশেরই নাম আকাশ, জলের নাম জল মানুষের বিভিন্ন নাম হয় পাশাপাশি জড় পদার্থেরও নামকরণ করা হয়। ঠিক সেভাবেই নামকরণ হয় বিভিন্ন রাস্তার যাতে আমাদের চিনতে বা জানতে সুবিধা হয়।
আসলে এই পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা বিশেষ পরিচয় আছে কখনো সে পরিচয় কর্মী কখনো সে পরিচয় ধর্মে। তবে এ ধর্ম মানে কাজ করার ধর্মের কথাই বলা হলো। কিন্তু পরিচয় পেতে গেলে একটা নাম দরকার যেমন একটা ঠিকানা তৈরি করতে গেলে একটা নামের প্রয়োজন হয়।
যদিও নাম ব্যাপারটা না থাকলে খুব একটা সমস্যা হয়তো সেই বস্তু বা সেই ব্যক্তির হতো না কিন্তু বাকিদের তো হত! যেমন ধরুন কলকাতার রাস্তাঘাটের নাম না জানলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতেন কী করে? আর এই নামকরণের ব্যাপারটা কিন্তু ভারী অদ্ভুত।
যেমন ধরুন উল্টোডাঙ্গা, হাতিবাগান, বা ধরুন শিয়ালদহ কিংবা দক্ষিণের টালিগঞ্জ বা বালিগঞ্জ। নামগুলো শুনে মনে হয় এগুলোর মানে কি? বা কী করেই বা হলো এসব নাম? আজ তাহলে মহানগরীর বিভিন্ন জায়গার নাম সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা।
কিভাবে জায়গার নাম হয়ে যায় লালবাজার?
আলোচনার শুরুটা কলকাতা পুলিশের হেড কোয়ার্টার লালবাজার (Lalbazar) দিয়েই করা যাক। এখানে বলে রাখা দরকার লালবাজারের পুলিশের হেড অফিসের প্রতিটি বিল্ডিং এর রং কিন্তু সত্যিই লাল। এখানে অবশ্য লালদিঘি আছে।
কিন্তু আপনি জানেন কি এই নামের সঙ্গে বাঙালির এক প্রিয় উৎসবের ইতিহাস জড়িয়ে আছে? কলকাতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ইংরেজরা বাংলায় আসার আগে থেকেই প্রত্যেক বছর এই দিঘির পারে মঞ্চ তৈরি করে বিখ্যাত জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের কাছারিবাড়ির দোল উৎসব পালন করা হতো।
গোবিন্দপুরের মুকুন্দরাম শেঠ এবং তার ছেলেরা এই দিঘি খনন করিয়েছিলেন বলে জানা যায়। দোল উৎসব রঙের উৎসব, দিঘির জল লাল আবিরে সহজেই রঙিন হয়ে যেত । ব্যাস সেই থেকেই লালদিঘি।পাশাপাশি দোল উপলক্ষে দিঘির কাছে এক জায়গায় বিশল পরিমানে আবির কুমকুম জমিয়ে রাখা হতো।যাতে তা বিক্রি করা যায়। সেই থেকেই এই জায়গার নাম হয়ে যায় লালবাজার।
উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অদ্ভুত তাইনা?
এবার বলি উত্তর কলকাতার হাতিবাগান (Hati Bagan) এলাকার কথা। নাম শুনেই কীরকম অদ্ভুত লাগে তাইনা? হাতিদের বাগান ছিল কি একসময়? এই প্রশ্ন অনেকেরই মনে আছে। আসলে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নবাবের ইতিহাস।
সিরাজ-উদ-দৌল্লা যখন কলকাতা আক্রমণ করেন তখন উত্তর কলকাতার বাগবাজারে নবাবের সৈন্য এবং ইংরেজ সেনার মধ্যে যুদ্ধ হয়। সেই সময়ে কলকাতার বাগবাজারকে (Kolkata’s Bagbazar) বারুদখানা বলা হতো। আসলে ইংরেজরা সেখানে একটা কেল্লা এবং বারুদখানা বানিয়েছিল, তাই এমন নাম।
কিন্তু বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজ সেই বারুদখানা ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। লোকমুখে প্রচারিত আছে যে, এই যুদ্ধের সময় একদল বুনো মোষ আচমকা ইংরেজ সেনাদের আক্রমণ করে। তখন এখানে হাতি রাখা হত। ব্যাস সেই থেকে হাতিবাগান। একটু আগে যে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের কথা বললাম, সেই জমিদারিতে এক পরিচিত নাম ছিল কেশবরাম।
তিনি কলকাতার দক্ষিণ চাকলার রাজস্ব আদায় করতেন। যেহেতু তিনি সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের করতে পারতেন, তাই তিনি লাভের সব থেকে বড় ভাগ পেতেন। সেই সবথেকে বড় ভাগ থেকেই একটা এলাকার নাম হয়ে গেল বড়িশা।
তবে শুধুই যে ঐতিহাসিক কারণ থেকেই নামের জন্ম হয়েছিল তেমনটা নয়। অনেকসময় কলকাতার বহু জায়গার নাম সেখানকার বাসিন্দাদের পেশা থেকে তৈরি করা হয়েছে। যেমন মূর্তি তৈরি করা কুমোরদের এলাকা পটুয়া পাড়া বা বলা যায় কুমারটুলি। আবার কিছু এলাকা তার কর্মসংস্কৃতির জন্যও নাম পেয়েছে।
এই যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পবিত্র গঙ্গা স্নান করে ফেরা পুণ্যার্থীদের সঙ্গে থাকা জিনিস লুঠ করার জন্য চোররা যে বাগানে লুকিয়ে থাকত, সেই এলাকার নাম হয়েছে চোরবাগান।
উল্টোডাঙা নামকরণের একটা কারণ আছে:
এবার বলি উল্টোডাঙার (Ultadanga) কথা। না না সবটাই সোজা, উল্টো কিছু নেই। কিন্তু উল্টোডাঙা নামকরণের একটা কারণ আছে। অনেকেই বলেন খাল এবং নদীপথে যাতায়াতের জন্য যে নৌকো ব্যবহার করা হত সেইগুলো মেরামতির জন্য উল্টো করে রেখে কাজ করা হতো বলেই জায়গাটার নাম উল্টোডাঙা।
শিয়ালদহ নামকরণের ইতিহাস জানেন?
আজকের শিয়ালদহ (Sealdah) এলাকায় নামকরণের ইতিহাস জানেন? মনে করা হয় এক সময়ে এক হ্রদ আর ঝোপ-জঙ্গল ছিল। হ্রদের পাশে সেই জঙ্গলে থাকা শিয়ালের দল সন্ধ্যা হলেই ডাকাডাকি শুরু করত। সেই থেকেই নাম হয়ে যায় শিয়ালদহ।
দমদম নাম কী করে হল বলুন তো?
দমদম নাম কী করে হল বলুন তো? লোকমুখে শোনা যায় যে খুব কাছেই প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে কামান দাগা হতো। দম করে সেই গোলা দাগার আওয়াজ থেকেই এই এলাকার নাম দমদম (Dum Dum) হয়েছে।
আজ কিছু উদাহরণ দিলাম। বাকি আরও অনেক কিছু নিয়ে আমরা আসি আপনাদের কাছে প্রতিবেদনের মাধ্যমে। পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন।