Breaking Bharat: ফুচকার প্রথম আবিষ্কার (Fuchka History)! ফুচকা মানে জিভে জল আনা স্বাদ! মহাভারতে ফুচকার সূচনা দ্রৌপদীর হাত ধরে? ঐতিহাসিক সঙ্গে পুরাণের যোগ আছে? জানতেন না তো?
খাবার দাবারের কথা উঠে কিছু মন মাতানো আর মন ভোলানো খাবারের নাম যেন চোখের সামনে কিলবিল করতে থাকে। কিছু খাবার যা যখন তখন খেতে ইচ্ছে করে। এবং এই খাবার খাওয়ার জন্য কোন বয়সের সীমা থাকে না। বাচ্চা থেকে বুড়ো, আট থেকে আশি সবারই জিভ লকলক করে ওঠে যে খাবার খাবার জন্য আজ তাকে নিয়েই এই প্রতিবেদন। ঠিক ধরেছেন জিভে জল আনার স্বাদের ফুচকার কথাই বলছি আমরা।
কোথা থেকে এল বাঙালির প্রিয় ফুচকা (Fuchka Recipe):
রাস্তার ধারে একজন মানুষকে ঘিরে জটলা মাঝে একটা বক্স যেখানে ভর্তি ফুচকা। ১০ টাকায় পাঁচটা নাকি মূল্যবৃদ্ধির বাজারে চারটে, একটা ফাউ কি মিলবে না? এই নিয়ে অবিরাম দরকষাকষি চলতে থাকে। তার মাঝেই টপাটপ কুড়মুড় করে ফুচকা চলে যায় মুখের ভেতরে। কারোর পছন্দ টক জল কেউবা বলেন ঝাল করে আলু মাখা।
কেউ আবার মিষ্টি চাটনি ছাড়া ফুচকা খেতেই পারেন না। উত্তর থেকে দক্ষিণ ,পূর্ব থেকে পশ্চিম, শহর থেকে গ্রাম ,স্কুল থেকে কলেজ, দুর্গাপূজা থেকে বিয়ে বাড়ি – সর্বত্রই ফুচকার দাপাদাপি। কিন্তু জনপ্রিয় এই স্ট্রিট ফুড কোথা থেকে এলো জানেন কি? ভাবতে অবাক লাগে এই খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস এবং পুরান দুইই।
যে মানুষটি ফুচকা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন:
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, ঘটনা যাই হোক না কেন ফুচকা যে মেনুতে থাকবে এটা অস্বীকার করা যায় না। ফুচকার আবির্ভাব সম্পর্কে প্রথমে একটু ইতিহাসের কথা নেড়েচেড়ে দেখা যাক। আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন মগধ সাম্রাজ্যে অধুনা বিহারে এই ফুচকার আবিষ্কার হয়।
ফুচকার দু-টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আলু ও লঙ্কা এই দুইই আজ থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ বছর আগে ভারতে এসেছিল বলে জানা যায়। যে মানুষটি ফুচকা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তিনি কালের বিস্মৃতিতে ইতিহাসের পাতায় বিলীন হয়ে গেছেন । তার সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
ফুচকার স্বাদ বদলেছে?
কিন্তু জায়গা আর রকম ভেদে ফুচকা নানা নাম নিয়ে ফেলেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পানিপুরি, গোলগাপ্পা,পানি কে বাতাসে, ফুলকি, টিক্কি, পাকোরি-সহ নানা নামে ফুচকা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। তবে একথাও সত্যি বিভিন্ন জায়গায় যেমন নাম বদলেছে তেমনি ফুচকার স্বাদও বদলেছে (taste of fuchka has also changed)।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার ফুচকার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত নাম হল পানিপুরি, যার সৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণ বিহারের মগধে। আবার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জার্নাল অব ইন্ডিয়াতে এই খাবারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে অবশ্য বেনারসের কথা বলা হয়েছে।
একেক জায়গায় ফুচকা একেক রকম:
ফুচকা বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন নামে প্রচলিত। ফুচকার জন্য প্রয়োজনীয় আলুর পুর, সবজির পুর, বা কোথাও কোথাও স্যালাদের পুর ব্যবহার করা হয়। ফুচকা খেতে গেলে জল টা খুব দরকারি। সব জায়গায় যে জিভে জল আনা তেঁতুল জল ব্যবহার করা হয় তেমনটা ঠিক নয়।
কোথাও আবার ধনে পাতার চাটনি কোথাও লেবু জল কিংবা মিষ্টি খেজুর জল দেওয়া হয়। পুদিনা মেশানো জল পছন্দ করেন অনেকে। দই-ফুচকা বা টকদই দিয়েও ফুচকাও বেশ জনপ্রিয়। এতে অবশ্য এক্সট্রা ব্যাপার আছে ছোলা, চানাচুর, মিষ্টি পাপড়, সঙ্গে আবার বাদাম কুচি।
আরো পড়ুন – Domestic violence : কেউ অত্যাচার করবে আর সেটা মুখ বুঝে মেনে নেবেন? এটা হতে দেবেন না!
একেক জায়গায় ফুচকা একেক রকম। গোলগাপ্পা মানেই আপনি হরিয়ানাতে আছেন। আবার মহারাষ্ট্রে পানিপুরি নামেই পরিচিত। ফুচকার বেশ কিছু নাম জানাই আপনাদের, উড়িষ্যাতে গুপচুপ, উত্তরপ্রদেশে ফুলকি, গুজরাটে পকোড়ি, মধ্যপ্রদেশে সেভপুরি, হায়দরাবাদে টিক্কি।
মহাভারতে ফুচকার সূচনা দ্রৌপদীর হাত ধরে?
এবার পূরণের দিকে মন দেওয়া যাক। পৌরাণিক মতে, মহাভারতের নাকি ফুচকার উল্লেখ ছিল। অনেকে মনে করেন, মহাভারতে ফুচকার সূচনা দ্রৌপদীর হাত ধরে। আসলে কথিত আছে কুন্তী চেয়েছিলেন বৌমার রন্ধন শিল্পের পরীক্ষা নিতে, ঠিক সেই কারণেই একটি আটা ময়দার তাল দিয়ে তাঁকে বলেন সবার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে।
আরো পড়ুন – Naga Sanyasi : মকর সংক্রান্তিতে যাদের ভিড় গঙ্গাসাগর জুড়ে, সেই নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন কেমন?
আসলে দ্রৌপদীর পক্ষপাতিত্ব দেখার জন্য এমন টা করেছিলেন তিনি। কুন্তীর চ্যালেঞ্জের জবাব কিন্তু মোক্ষম ভাবে দিয়েছিলেন পঞ্চ পাণ্ডব পত্নী। দ্রৌপদী সেই আটার মন্ডটাকে সমানভাবে ভাগ করে তার মধ্যে আলুর পুর দিয়ে ফুচকা আবিষ্কার করে ফেলেন। ব্যাস বাকিরা কুপোকাত। ফুচকায় বাজিমাত!
আরো পড়ুন – Dada Boudi Biryani : দাদা বৌদির বিরিয়ানি! কোন ম্যাজিকে মানুষের মন জয় করল এই বিরিয়ানি?
আবিষ্কার যেভাবেই হোক না কেন, জনপ্রিয়তায় সবার আগে ফুচকা। এই স্বাদের কোনও ভাগ হবে না। ঠিক কিনা? তাহলে এই প্রতিবেদনের শেষে ফুচকায় এক কামড় হয়ে যাক!