Breaking Bharat: তিরুপতি বালাজি মন্দিরে (Tirupati Balaji Temple) দিনের পর দিন মাথার চুল দান করা হয়! কেন জানেন ? তর্কে নয়, ঈশ্বর আছেন বিশ্বাসে! তাই আজও অবাক করা কিছু ঘটনার সাক্ষী থাকে তিরুপতি মন্দির ।
ঈশ্বরের অনুরাগীরা , ভক্তরা মনস্কামনা পূরণের জন্য ভগবানের দুয়ারে প্রার্থনা করেন। তাদের ইচ্ছে পূরণ হলেই ঈশ্বরকে উপহারে ভরিয়ে দিতে চান। টাকা পয়সা ,অলংকার ,পোশাক পরিচ্ছদ, ফলমূলাদি এসব তো আছেই। সঙ্গে আছে মাথার চুল দেওয়ার রীতিও। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মন্দিরে এই রীতি পালন করতে দেখা যায়। তবে আজ আমরা বলছি তিরুপতি মন্দিরের এক অদ্ভুত গল্প, যা শুনলে চমকে যাবেন আপনি।
বেঙ্কটেশ্বর মন্দির, তিরুমালা (Tirupati Balaji Temple):
কথা বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। ঈশ্বর ভগবান নানা দেশে নানা মতে নানা ভাবে রয়েছেন। তিনি ছড়িয়ে আছেন নানা ধর্মে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। টাকা পয়সা দিয়ে ভগবানকে পাওয়া যায় না, ভক্তি ছাড়া ভগবান দর্শন হয় না। কখনো কখনো এই ভক্তির শুরুতে অটুট বিশ্বাসের অনন্ত পথ পেরিয়ে যেতে হয়। কখনো আবার এক ঝলকেই চলে আসে ভক্তি শ্রদ্ধা।
তবে এটা তো ঠিক ঈশ্বর মানে একটা তীক্ষ্ণ বিশ্বাস, একটা জোর , যে হ্যাঁ কেউ একজন আছেন, রক্ষা কর্তা হিসেবে মাথার উপর হাত রেখে। কখনো কখনো সেই বিশ্বাস থেকেই সংস্কারের বেড়াজাল তৈরি হয়ে কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানুষ তার সুযোগ নেন। এটা যতটা সত্য ঠিক এর উল্টোদিকে যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মের রীতিনীতি আচার উপাচার নিয়ম সবটাই চরম সত্য জীবনে।
তিরুপতি মন্দিরের রহস্য (tirupati balaji temple history):
আচ্ছা কোন মন্দিরে কোন দেবতা জাগ্রত সেটা কী ভাবে বোঝা যায়? হয়তো একটু অদ্ভুত শোনালো কিন্তু যেটা বলতে চাইছি সেটা হল মন্দির যদি ধনী হয় তবেই কি বোঝা যায় দেবতা জাগ্রত? নাকি দেবতা প্রচন্ড জাগ্রত হলে ভক্তবৃন্দের ভিড় উপহার বাড়ে আর মন্দিরও ফুলে ফেঁপে ওঠে?
সবচেয়ে বিশ্বাস আর মনের ভক্তি ঈশ্বর তো সর্বত্রই আছেন নানা রূপে নানা মতে। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাইতো বলেছেন যত মত তত পথ। এবার তাহলে তিরুপতি মন্দিরের গল্পে ফেরা যাক। শুধু দেশে নয় বিদেশেও সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই মন্দির।
দেশের ধনীতম মন্দির তিরুপতি বালাজি (tirupati balaji temple):
ভারতবর্ষে যে কটি ধনী মন্দির আছে তার মধ্যে অন্যতম হল তিরুপতি বালাজি মন্দির (Venkateswara Mandir Tirupati Balaji)। এই ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরটি দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর একটি অপূর্ব সুন্দর নিদর্শন। প্রচলিত বিশ্বাস, খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ৩০০ অব্দ নাগাদ এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দিরে আরাধ্য দেবতার প্রতি ভক্তদের বিশ্বাস অসীম এবং অটুট বিশ্বাস।
এখানে দেবতা এতই জাগ্রত ভক্তি ভরে কিছু চাইলে তিনি ফেরাতে পারেন না। তাইতো প্রতিদিন কত মানত ঈশ্বরের দরবারে। মনোবাঞ্ছা পূরণ হলেই ভক্তরা সোনা, রূপা কেউ আবার হিরে, অর্থ, ধনরত্ন তো দেনই, পাশাপাশি আবার আরাধ্যদেবতাকে মাথার চুল অর্পণ করার রীতি রয়েছে ভক্তদের মধ্যে (The ritual of offering hair)।
তিরুপতি বালাজিতে কেন ভক্তরা চুল দান করেন?
দেবতার উদ্দেশ্যে সমর্পিত সেই চুল সেই চুল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে বিশাল আয় হয় তিরুপতি মন্দিরের বলে জানা যায়। এমনকি মন্দিরের চুল অর্পণ করার জন্য মন্দিরের নিজস্ব ৫০০ নাপিত রয়েছেন এখানে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির একাধিক নামে পরিচিত।
কেউ বলেন তিরুপতি মন্দির, তিরুমালা মন্দির কেউ আবার তিরুপতি বালাজি মন্দির হিসেবেই চেনেন এই তীর্থস্থান কে। ভক্তদের মধ্যে বিশ্বাস, যে মানব জাতিকে সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতেই স্বয়ং বিষ্ণু কলিযুগে তিরুমালাতে আবির্ভূত হয়েছেন। এখানে তিনি ভেঙ্কটেশ্বর।
চুল দানের রীতির একটা অজানা ইতিহাস:
যেহেতু নারায়ন আছেন তাই লক্ষ্মীর বিশেষ কৃপা এই মন্দিরে। ভক্তদের মধ্যে বিশ্বাস এখানে যতটা চুল দান করা যায় তার দশ গুণ বেশি ভগবানের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। তবে এই চুল দানের রীতির একটা অজানা ইতিহাস আছে। যেটা আজ আপনাদের জানাতে চাই।
রেকর্ড হারে এই মন্দিরের চুল দান করা হয় সে কথা তো আগেই বলেছি। হিসেব বলছে প্রতি বছর তিরুপতি বালাজি মন্দিরে কয়েক লক্ষ কিলোগ্রাম চুল দান করা হয়। এবার এত চুল নিয়ে কী করে মন্দির কর্তৃপক্ষ? উত্তরটা সহজ, এই চুল বিক্রি করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে চুল এখানে ভক্তরা দান করেন তাকে জীবাণুমুক্ত করা হয় তারপর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুকনো করে আন্তর্জাতিক বাজারে কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
আরো পড়ুন- Selfies is banned : সাবধান! যেখানে সেখানে সেলফি তুলবেন না! হতে পারে কড়া শাস্তি?
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান এখান থেকে যে টাকা উপার্জন করা হয় তার থেকে দুধ , ফলমুলাদি, মিষ্টান্ন ক্রয় থেকে শুরু করে নারায়ণ সেবাও করা হয়। এবার চুল দানের ইতিহাস সম্পর্কে বলা যায়। পুরাণ মতে, প্রাচীনকালে ভগবান বালাজির মূর্তির উপর নাকি পিঁপড়ের পাহাড় তৈরি হয়েছিল।
আরো পড়ুন- Kongthong : যেন জীবন পাখির মতো! কথা হয় সুরের ভাষায়, একে অন্যকে ডাকা হয় শিসের সুরে
সেখানে প্রতিদিন একটি গরু দুধ দিয়ে চলে যেত। গরুর মালিক এটা মেনে নিতে পারিনি রেগে গিয়ে গরুকে মেরে ফেলেন। এই কাজটা করার সময়ে বালাজীর মাথায় আঘাত লেগে কিছু চুল পড়ে যায়। তারপর তার মা নীলা দেবী তাঁর চুল কেটে বালাজীর মাথায় রাখেন। সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের সেই ক্ষত সেরে যায়।
আরো পড়ুন- shimla manali tour : পাহাড় ঘুরতে যাচ্ছেন? পকেট সামলে, আরও দামি সিমলা আর মানালির হোটেল!
এতে প্রসন্ন হয়ে যান। চুল নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম ভূষণ। কিন্তু এক নারী নির্দ্বিধায় সেই চুল ভগবানকে অর্পণ করায় স্বয়ং নারায়ণ খুশি হয়ে বলেন এবার থেকে যারা চুল দান করবেন সৌন্দর্যকে দূরে ঠেলে রেখে তারাই প্রভুর কৃপা এবং প্রভূত আশীর্বাদ পাবেন। ব্যাস সেই থেকেই রীতি চলে আসছে। মনে করা হয় ঈশ্বরকে কিছু একটা দিলে তিনি তার দশ গুণ বেশি ফিরিয়ে দেন ।
এক্ষেত্রেও সেই একই বিশ্বাস। যদিও এই পুরান কাহিনীর সত্যতা আমরা যাচাই করিনি। কারণ শুরুতেই যে বলেছি বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।