Breaking Bharat: জলের অপর নাম জীবন কিন্তু জীবনটা কি জলেই চলে যায়? জীবনযাত্রা করতে গিয়ে ৭৭ বছর ধরে শুধুই জল যাত্রা করলেন গোবিন্দাম্মা (Govindamma)! জলজ প্রাণী আর এই মানুষটির মধ্যে জীবনযাপন নিয়ে হয়তো কোন তফাৎ নেই কিন্তু ভাবতে পারছেন সাতাত্তর বছর ধরে শুধু জলেই কাটালেন এক মহিলা? বিস্ময় আর সয় না, কথা বন্ধ হয়ে আসে আমাদের যখন এইসব ঘটনা চোখের সামনে আসে।
জল ছাড়া জীবন বাঁচেনা। ছোট থেকে বিজ্ঞান বইয়ে সবার আগে এটাই আমাদের শেখানো হয়। কিন্তু ভাবতে পারেন এই জলই জীবনকে শেষ করে দিতে পারে। আজকের এই প্রতিবেদনে যার কথা বলব তার জীবনের গল্পটা শুনলে সিনেমা না বাস্তব বুঝতে পারবেন না আপনি। তবে না গল্প নয় সত্যি আর কোনো রূপকথা নেই বরং রয়েছে কষ্টের এক ইতিহাস।
দিবানা অন্য জোগাড় করতে একটা মানুষ সারাদিন সারা জীবন জলেই নিজেকে শেষ করে দিলেন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপিত হতে চলেছে অথচ এখনো এই দেশ পোড়া দেশ হয়েই রয়ে গেল। অভাব আর বেঁচে থাকার লড়াই এই দুটোকে সঙ্গে নিয়ে দাঁতের দাঁত চেপে জীবনের সফর চলছে চলবে।
আজকে প্রতিবেদনে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে ভারতবর্ষের একদম দক্ষিণ প্রান্তে ভীষণ বিখ্যাত এক শহর চেন্নাইয়ে। আপাতত দৃষ্টিতে সচ্ছল এবং সুন্দর দেখতে শহরটার ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে অনেক যন্ত্রনা। তামিলনাড়ুর এক ছোট্ট জনপদে চিংড়ি ধরে পেট চালাচ্ছেন এক বৃদ্ধা মহিলা ,নাম গোবিন্দাম্মা (An old woman is holding shrimp and running her stomach)।
এখন বয়স প্রায় ৭৭ বছর। নানা প্রতিবন্ধকতা, অভাবের যন্ত্রণা সব নিয়েই বেঁচে চলেছেন তার জীবন। কি আর করবেন ঈশ্বর না চাইলে মৃত্যু যে আসে না । তাই যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ! সুজলাং সুফলং ভারতবর্ষের সৌন্দর্য আর তার সভ্যতা নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু রুরাল ইন্ডিয়া বা প্রত্যন্ত ভারতের গভীরে কত ক্ষত লুকিয়ে আছে কেউ সেই হিসেবে রাখে না।
চেন্নাইয়ের এন্নোর অঞ্চলের ঠিক মাঝবরাবর কোসস্তালাইয়ার এবং আরানিয়ার নদী বয়ে গেছে। বহু যুগ ধরে এভাবেই নদীর ব্যাপ্তি ও বিস্তার। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনকালে নদীগুলির নাব্যতা বাড়ানোর জন্য আর গভীরতা বৃদ্ধির কারণে একটি খাল খোঁড়া হয়। নাম দেওয়া হয় বাকিংহাম ক্যানাল।
এখান থেকেই আমাদের গল্প শুরু। কারণ এই দুই নদী ও বাকিংহাম খালের সঙ্গেই জড়িয়ে এক ৭৭ বছর বয়সি বৃদ্ধার জীবনের কঠিন লড়াই যা কার্যত জলেই শুরু হয়তো বা জলেই হবে শেষ (Old age is a tough fight in life)। প্রায় ২৭ কিমি লম্বা নদীপথে না না প্রজাতির জলজ মাছ বিশেষ করে চিংড়ির বসবাস। এই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে যারা থাকেন, বেশিরভাগেরই জীবিকা হল মাছ ধরা।
আর সেই তালিকায় আছেন ৭৭ বছরের গোবিন্দাম্মা। প্রতিদিনই এখানে তিনি মাছ ধরতে আসেন। কোমরে তালপাতার একটি থলি বাঁধা থাকে। নদীপক্ষের বালিতে হাত ঢুকিয়ে চিংড়ি সংগ্রহ করে চলেছেন রোদ ঝড় বৃষ্টি সবকিছুকে উপেক্ষা করেই।দু’মুঠো অন্নের সংস্থানের জন্য লড়ে যেতে হয় তাঁকে।
আরো পড়ুন- The Great Khali : জেনে নিন কী খেয়ে মহা শক্তিশালী WWE খ্যাত ‘গ্রেট খালি’ ?
অত্যন্ত ক্ষিপ্র গতিতে নদীবক্ষের বালিতে হাত ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে চিংড়ি ধরেন। তারপর সেগুলি জমা হয় কোমরে বাঁধা একটি তালপাতার থলিতে। তফিশিলি সম্প্রদায়ের সদস্য গোবিন্দাম্মা এখন থাকেন গাছের নিচে। চেন্নাইয়ের কামরাজার বন্দরের দিকে আগে বসবাস করলেও সুনামির ঢেউ সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আর অনিশ্চিত করেছে ভবিষ্যৎকে।
আরো পড়ুন- old people : আর বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না! এবার নিঃসঙ্গ বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গী খুঁজে দেবে তরুণরা!
ভাবতে পারেন যখন দেশের অর্ধেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকেন সেই সময়ে ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে ভোরবেলা এই বৃদ্ধা পাড়ি দেন আথিপাট্টু স্টেশনের দিকে। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে ফের দুটো স্টেশন পেরিয়ে পৌছে যান পুরুনগর স্টেশনে।
আরো পড়ুন- Migraine pain : যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাচ্ছে? মাথার ব্যথা কিছুতেই কমছে না? মাইগ্রেনের সমস্যা না তো?
সেখান থেকে আবার প্রায় সাত কিলোমিটার পথ হেঁটে আসেন কামরাজার বন্দরেই মাছ ধরার কাজে লেগে পড়েন গোবিন্দাম্মা (Govindamma started fishing in the port of Kamraja)। কিন্তু এই বয়সে এত ধকল কি সয়? জাল ফেলতে পারেন না তাই বালির ভেতর হাত ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে রক্তাক্ত হতে হয় চিংড়ি ধরতে হয়। তবে যদি পাওয়া যায় মাত্র ২০০ টাকা!
আরো পড়ুন- Stone Baby : পাথর সন্তানকে দেখেছেন? মায়ের শরীরের ভেতরেই পাথর হয়েই রইল শিশু!
প্রতিবেদন করতে করতে চোখে জল চলে আসছে আমাদের অথচ ভাবুন এই লড়াইটা ৭৭ বছরের বৃদ্ধা করে চলেছেন অকপটে। উন্নয়নের জোয়ারে যখন চারিদিকে কলকারখানা বাড়ছে বলে শিল্পপতিরা জানাচ্ছেন তখন সেখানকার আবর্জনা জলে এসে জলজ প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে।
চিংড়ি সেভাবে মিলছে না তাহলে এবার খাবারটুকু কি আর জুটবে না গোবিন্দাম্মার মত মানুষদের? এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভ্রুকুটি আর দাপট তো আছেই। এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে জলজ্যান্ত জীবন জলের মাঝেই?