Breaking Bharat: পাথর সন্তানকে দেখেছেন? স্টোন ম্যান শুনেছেন কিন্তু স্টোন বেবি (Stone Baby)? প্রায় তিন যুগ ধরে মায়ের শরীরের ভেতরেই পাথর হয়েই রইল শিশু! সিনেমা জগতে স্টোনম্যানের আধিপত্য আমরা দেখেছি। কিন্তু পাথর মানবের মতো পাথর সন্তানকে দেখেছেন কোনওদিন? অবাক হবেন না , স্টোন বেবির সঙ্গেই পরিচয় করাব আপনাদের (stone baby born)।
এই দুনিয়ায় কখন কি হয় তা কেউ বলতে পারেনা। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় সমস্যায় পড়ছেন মানুষ নানা কারণে। শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কিছু ঘটনা ইতিহাস তৈরি করে আর বিজ্ঞানকে চমকে দেয়। সে নিয়ে গবেষণা আর সেখান থেকে নতুন তথ্য পেয়ে তত্ত্ব আবিষ্কার হয়।
অহল্যার পাথর হয়ে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে?
আজ যে বিষয় নিয়ে কথা বলব শুনলে কিছুটা অবাস্তব মনে হতে পারে আপনার। কিন্তু বিজ্ঞানীর বিস্ময় বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার মধ্যে এটি অন্যতম। অহল্যার পাথর হয়ে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে? শ্রীরামচন্দ্রের পদস্পর্শে তিনি আবার নিজের মনুষ্য রূপ ফিরে পান। মহাকাব্যে এ কাহিনী বর্ণিত আছে।
শিরোনাম দেখে বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই আজকের আলোচনা বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত অপারগতা নিয়ে। কঠিন শব্দ মনে হল ? সহজ করে দিচ্ছি । মেডিকেল সাইন্স নতুন মানুষকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাহায্য করে। কিন্তু কখনো তারাও ব্যর্থ হয়ে যান। আপনাদেরকে নিয়ে যাব আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালে।
পেটের সমস্যা নিয়ে ওই বছর লতা মঙ্গেশকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগে ৬০ বছর বয়সী এক মহিলা ভর্তি হন। তিনি চার সন্তানের মা। মেনোপজ শুরু হয়েছে প্রায় ১০-১২ বছর আগে। তার পরিবার সূত্রে জানা যায় সপ্তাহ দুই ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত।
কেস হিস্ট্রি ঘেঁটে জানা যায় ১৯৭৮ সালে শেষবারের মতো গর্ভবতী হয়েছিলেন যদিও সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়নি।গর্ভেই তাঁর ভ্রূণের মৃত্যু ঘটে। তখন চিকিৎসকরাই তাকে অপারেশন করার পরামর্শ দিলেও তিনি তা না করিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকেই শুরু হয় তলপেটে ব্যথা যন্ত্রণা।
২০১৪ সালে তলপিটের বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর হাইপোগ্যাসট্রিক অঞ্চলে একটি স্পন্দনশীল পিণ্ড পাওয়া যায় যা প্রায় নাভি পর্যন্ত বিস্তৃত। আশ্চর্যের বিষয় হলো তার মধ্যে স্পন্দন থাকলেও কোনও ধরনের নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায়নি। এরপর তার পেটে আলট্রা সোনোগ্রাফি করা হয় মূল বিষয়টি জানার জন্য।
আর ঠিক তখনই পেলভিক অঞ্চলে জমাট পাথরের সন্ধান মেলে। চিকিৎসকরা এই কেসকে লিথোপেডিয়ন আখ্যা দেন।আসলে লিথোপেডিয়ন একটি গ্রিক শব্দ যার মানে করলে দাঁড়ায় ‘লিথো’ অর্থাৎ পাথর এবং ‘পেডিয়ন’ মানে ‘শিশু’। এক কথায় পাথর শিশু বা স্টোন চাইল্ড (stone child)।
যে মহিলার কথা বলা হচ্ছে তার বিষয়ে চিকিৎসকরা জানান, গর্ভাবস্থা থাকাকালীনই তার ভ্রূণের নাকি মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসা বিজ্ঞান স্বভাবতই এরপর অপারেশন করার কথা বলে যাতে মৃত ভ্রূণকে শরীর থেকে বাদ দেওয়া যায়।
আরো পড়ুন- The Great Khali : জেনে নিন কী খেয়ে মহা শক্তিশালী WWE খ্যাত ‘গ্রেট খালি’ ?
খুব স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসাশাস্ত্রের বিধি অনুসারে তাঁকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই মৃত ভ্রূ গরিব দেশে সেটা করাবার মতো সামর্থ্য আর কুসংস্কাতে আচ্ছন্ন সমাজে সাহস জোটাতে পারেননি ওই মহিলা। ফলোতো, প্রায় তিন যুগ ধরে অসহ্য পেটের যন্ত্রণা নিয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন তিনি।
আরো পড়ুন- Dal Bhat : ডাল ভাত খেতে ভালোবাসেন? এবার কিন্তু ডাল খেলেই মহাবিপদ!
তবে লিথোপেডিয়ন কিন্তু নতুন কোনও শব্দ নয়। ইতিহাস বলছে প্রায় দশম শতকে প্রথম এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এক বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক আলবুকাসিস তার “কিতাব-আল-তাশরিফ” বইয়ে এই স্টোন বেবি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন- Migraine pain : যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাচ্ছে? মাথার ব্যথা কিছুতেই কমছে না? মাইগ্রেনের সমস্যা না তো?
জানলে হয়তো অবাক হবেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ০০০.৫৪ % গর্ভে স্টোন বেবি জন্মাতে দেখা যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে হয়তো এই সমস্যার সমাধান আছে কিন্তু অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এভাবেই যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন মহিলারা।
যতদিন না পর্যন্ত সমাজ ভাবনাচিন্তা পরিবর্তন করবে, যতদিন না পর্যন্ত মানুষ নিজেকে পাল্টাবেন ,ততদিন পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনা থেকেই যাবে পৃথিবীর বুকে, কলঙ্ক হয়ে।