Breaking Bharat – Coffee: খাবারের জিনিস তৈরি হয় প্রাণীর মল থেকে? খাবার পর মলত্যাগ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, কিন্তু মল থেকে খাবারের জিনিস? গা ঘিনঘিনে ভাবনাটার কত দাম জানেন? যা কিনা খাওয়ার জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সেলিব্রেটিদের মধ্যে। বিদেশে কয়েক হাজার টাকায় তা বিক্রি হয়।
জীবন মানে শুধুই কি ডাল ভাত তরকারি? মাঝেমধ্যে চিরাচরিত খাবারের বাইরে গিয়ে এটা ওটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ইচ্ছে তো হয়। কখনো আবার এইসবের জন্য বিপদে পড়তে হয় অনেককে। তবে কি বলুন তো, কোনও কিছু সহজ ভাবে ঘটলে বা সহজভাবে পেলে সেটার অতটা গুরুত্ব বা মূল্য থাকে না।
দেখেন না কথায় কথায় বলে, think out of the box. চেনা জগতের বাইরে গিয়ে অন্য কিছু ভাবতেই পারেন। কিন্তু সেই ভাবনা থেকে যদি এমন কিছু আবিষ্কার হয় যেটা ভাবতে গেলে গা ঘিনঘিন করবে! কিছু আন্দাজ করতে পারছেন? তাহলে ঠান্ডা মাথায় বসে প্রতিবেদন পড়তে পড়তে কফি খেয়ে নিন। কারণ লেখাটা যতক্ষণে শেষ হবে , ততক্ষণে কফি খাওয়ার ইচ্ছেটা চলেও যেতে পারে।
শুরুতেই বিশেষ হেঁয়ালি করার প্রয়োজন নেই। আসলে আজ কফি কিছু ইতিহাস নিয়ে কথা বলব। এই বিষয়ে পড়াশুনা করতে করতে আমরা যেটা পেলাম তা আপনি জানলে অবাক তো হবেনই পাশাপাশি বলবেন এটা কি সম্ভব? কথায় আছে “গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না”।
পৃথিবীর সবথেকে দামি কফির উৎপত্তি কোথা থেকে?
অর্থাৎ কিনা আমরা কাছের জিনিসের বা অল্প দামের জিনিসের গুরুত্ব খুব একটা বুঝি না, ছুটি ব্র্যান্ডের পেছনে। আপনিও কি ব্র্যান্ড ম্যানিয়াক? তাহলে পৃথিবীর সবথেকে দামি কফির উৎপত্তি (Origin of the world’s most expensive coffee) কোথা থেকে হয় সে বিষয়ে জানা আছে? এমন কফির কথা বলছি যা এক কাপ খাওয়ার জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সেলিব্রেটিদের মধ্যে।
বিদেশে কয়েক হাজার টাকায় তা বিক্রি হয়। সেই কফি যা কিনা তৈরি হয় প্রাণীর মল থেকে (Coffee is made from animal feces)। একদম ঠিক শুনেছেন। এই মত নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে সিভেট নামের প্রাণীর মন থেকে মানে বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরি হয়, পৃথিবীর সবথেকে সুস্বাদু এবং মূল্যবান কফি। যার নাম কপি লুয়াক ।
আসলে বেড়ালের মতো দেখতে এই প্রাণী যাকে ফেভারেট বলা হয় তার বাসস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের লক্ষ্য করা গেছে। এদের খাদ্যাভ্যাস ভারি অদ্ভুত। কেয়া ছোট ছোট প্রাণী ভক্ষণ তো করেই পাশাপাশি কফি গাছ থেকে বেছে বেছে ফল খায়। মানে এটাই এদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই প্রাণী কফির যে ফল খাচ্ছে তার বীজটা কোনভাবেই হজম করে উঠতে পারে না। তার ফলে এটি অপাচ্য থেকে যায়। আর আমরা সকলেই জানি অপাচ্য অংশ অবশ্যই বর্জ্য পদার্থ হিসেবে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তখন কফি প্রস্তুতকারকরা মন থেকে সেই অপাচ্য বীজ বের করে তাকে ধুয়ে নিয়ে পরিষ্কার করে গুড়ো করে কফির গুঁড়ো তৈরি করেন।
কি? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে আপনি সত্যিটা যাচাই করতে ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য বের করতে পারেন। এর মধ্যে ম্যাজিকের কিছু নেই পুরোটাই বিজ্ঞান। দেখুন যখন সিভেক নামের প্রাণীটি কফির ফল খাচ্ছে তখন সেই ফলের উপাদান হিসেবে প্রচুর অ্যাসিটিক বস্তু থাকে।
কিন্তু যখনই প্রাণীটির খাদ্যনালীতে তা পৌঁছেছে তখন যে এনজাইম বা উৎসেচক তার শরীর থেকে বেরোয় তা সহজেই ওই অ্যাসিটিক ভাবকে কাটিয়ে দিতে পারে। আর এইটা হয়ে যাওয়ার পর যখন বীজ নির্গত হয় মানে বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে বেরিয়ে যায় এবং তাকে ধুয়ে গুঁড়ো করা হয়, তার স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা হয় ।
আরো পড়ুন- Power shortage : দেশে বিদ্যুতের সংকট! রিপোর্ট বলছে দেশে বাড়ছে রেকর্ড বিদ্যুতের ঘাটতি। এবার?
বলা বাহুল্য অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে যায়। তারপর দামি ব্র্যান্ডিং, নামী প্যাকেজিং আর কয়েক হাজার টাকা মূল্য দিয়ে এই কফি যা আদতে সিভেট নামের প্রাণীর মল থেকে তৈরি হয় (Made from animal dung called civet)।
আরো পড়ুন- Princep Ghat : নৌকা চড়ে,গঙ্গায় প্রেম করতে গেলে প্রিন্সেপ ঘাট কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না , তাই না?
ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে ভারত বিশেষ করে কর্ণাটক কফির জন্য বেশ বিখ্যাত। কফি পান করতে ভালোবাসেন যারা, তারা সুস্বাদু কফি খোঁজেন বিভিন্ন ফ্রুট জয়েন্টে গিয়ে। অবশ্য নেপথ্যের কাহিনীটি তারা বোধহয় জানেন না। আপনি জানলে অবাক হবেন এই যে বিশেষ কফির কথা বলা হলো, মানে কপি লুয়াক – এটি কিন্তু আদৌ সেরার সেরা স্বাদ সৃষ্টি করে না।
কফি বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা অন্যরকম খেতে, মানে বলা যেতে পারে স্বাভাবিক কফির স্বাদের থেকে আলাদা। আর আমরা তো জানি একটু ব্যতিক্রমী কিছু হলে তার দিকে আগ্রহ আর স্পেশাল তকমা দেওয়ার অভ্যাসটা আমাদের কিছু কম নয়। ব্যাস সেই কারণেই এত কিছু।
তাহলে এবার নামী দোকানে কফি খেতে যাওয়ার আগে একবার প্রতিবেদনের কথা মনে করবেন কিন্তু। তবে মতামত অত্যন্ত ব্যক্তিগত দয়া করে আমাদের নামে কেস করে দেবেন না । নিজে পরখ করে যাচাই করুন।