Breaking Bharat: মাত্র ১ লাখে চার চাকা? আশ্চর্য না হয়ে, ন্যানোর নাম চট করে বলতে পারেন তো? কিন্তু এত কম দামে কী করে আর কী ভাবে ন্যানো (Nano Car) আর কেন? ইতিহাস তৈরি করেছে যে ন্যানো গাড়ি, আজ বাজারে যাকে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়- তার সৃষ্টির ইতিহাস কতটা জানেন?
একটা গাড়ি যা কিনা বলতে দিল একটা রাজ্যের রাজনীতির সংজ্ঞা। একটা গাড়ি যা কিনা ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে ফেলল তৈরি হওয়ার, আগেই কারণ রাজনীতি। ভারতের এক ঐতিহ্যশালী রাজ্যের এক বিশেষ জেলায় জমি নিয়ে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠা কে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটে গেছিল বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। কারোরই বলতে বা বুঝতে কোন অসুবিধা নেই।
কেন ন্যানো বানিয়েছিলেন রতন টাটা? (Nano Car):
যার মাথা থেকে এসেছিল ভাবনা তিনি রতন টাটা। সফল শিল্পপতি হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ বলেই তাকে চেনে পৃথিবী। মধ্যবিত্তের সাধ পূরণ হয় না সাধ্য না থাকার জন্য। কিন্তু স্বপ্ন তো দেখেন তারাও। রতন টাটার মস্তিষ্কপ্রসূত এই ড্রিম প্রোজেক্ট যা দেখে চমকে গিয়েছিল সারা বিশ্ব, সবটাই হয়েছিল মধ্যবিত্ত মানুষের স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেকে বাস্তবের পরিণত করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
কোনও বিদেশি ব্র্যান্ড নয়, সম্পূর্ণ ভারতীয় একটি ব্র্যান্ড ভারতীয়দের সমস্যার কথা চিন্তা করেই নিয়ে এসেছে বাইকের দামে চারচাকার গাড়ি, এ ছিল বিস্ময়কর! তাই বলাই যায়,ভারতীয় গাড়ির শিল্পে একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছিল ন্যানো। যেমনটা আশা করা হয়েছিল ঠিক তেমন উন্মাদনা তৈরি হলেও, সফলতা কিন্তু আসেনি।
কেন ফেল হয়েছিল ভারতের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি?
বাস্তবের মাটিতে এই গাড়ি এলেও তার ডিজাইন এবং স্পেসিফিকেশনের কারণে খুব কম দিনের মধ্যেই গাড়িটি হয়ে উঠেছিল একটি কমিক মেটেরিয়াল। ফলে শেষমেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উৎপাদন। বিতর্কের অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ন্যানো গাড়ি। টাটা মোটরস (Tata Motors) এই গাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমে সিঙ্গুরকেই বেছে নিয়েছিল।
কিন্তু রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় হুগলি জেলার সিঙ্গুরে। না এভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে চাননি রতন টাটা। পরবর্তীতে ন্যানো কারখানা সরাসরি স্থানান্তরিত হয় গুজরাতের সানন্দ-এ। যদিও সেটা লাভ জনক হয়নি বলে আফসোস করেছিলেন খোদ টাটা কর্তা।
ন্যানো গাড়ির ইতিহাস তুলে রতন টাটার আবেগঘন বার্তা:
একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করে তিনি বর্ণনা করলেন, কীভাবে এই গাড়ি তৈরি করার জন্য তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং কীভাবে দেশবাসীর জন্য তিনি নিজের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছিলেন। রতন টাটা বরাবরই ভালো লেখেন এ কথা জানে সোশ্যাল মিডিয়া। সম্প্রতি নস্টালজিয়ায় ফিরলেন তিনিও।
তাঁর কথায়, “আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম সেই সমস্ত ভারতীয় পরিবারগুলোকে দেখে, যাঁরা প্রতিনিয়ত স্কুটারে চেপে যাতায়াত করেন। কখনও বর্ষায় ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় যাওয়ার সময় স্কুটারে বাবা এবং মায়ের মাঝে ছোট্ট শিশুগুলি একেবারে স্যান্ডউইচ হয়ে যেত।
স্কুল অফ আর্কিটেকচার-এ থাকার কারণে আমি আমার অবসর সময়ে ভাবতাম কীভাবে ভারতীয় পরিবারগুলোর জন্য কিছু একটা করতে পারব। আমি সবসময় তাদের আরামপ্রদভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় তৈরি হয়েছিল ন্যানোর একটি ব্লু প্রিন্ট। আমি এই গাড়িতে কোনওরকম জানলা-দরজা তৈরি করিনি। ছিল শুধুমাত্র একটি বগি।
কিন্তু তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, একটি সম্পূর্ণ গাড়ির মতো এর ডিজাইন হওয়া উচিত। আর তা থেকেই তৈরি হয়েছিল আমার স্বপ্নের ন্যানো। ৮৪ বছর বয়সি রতন টাটার কথায়, “ন্যানো হলো দেশের আম আদমির গাড়ি।” তবে এত কম টাকায় গাড়ি বানানো আদৌ কি সম্ভব ছিল?
যারা স্বপ্ন দেখার কারিগর তারা সেই স্বপ্নকে সত্যি করার পথটা নিজেরাই খুঁজে নেন। ন্যানো তৈরি করতে গিয়ে বিশাল কস্ট কাটিং করতে হয়েছিল টাটা মোটরসকে। কিন্তু তাতে যেন কমফোর্ট কোনভাবেই কম্প্রোমাইজড না হয়ে যায় নজর ছিল টাটার। কিন্তু বাস্তবে সেটা কার্যকরী করা যায়নি বরং সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ১ লক্ষ টাকার মধ্যে এই গাড়ির দাম (Nano car price 1 lakh) রাখার জন্য অনেক কাটছাঁট করতে হয়।
- প্রথমেই একটি উইন্ডস্ক্রিন বাদ দেওয়া হয়েছিল গাড়ির মডেল থেকে।
2.গাড়ি থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল এয়ারব্যাগ, যার ফলে প্রশ্ন উঠেছিল গাড়ির সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে।
3.স্পেয়ার টায়ারের আকার ছিল অত্যন্ত ছোট।
4.পেট্রোল ট্যাঙ্ক শুধুমাত্র অপারেট করা যেত গাড়ির সামনের অংশ থেকেই, যার ফলে পেট্রোল নেওয়া এই গাড়িতে ছিল অত্যন্ত সমস্যার।
5.দু’টির জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছিল সিঙ্গল উইং মিরর।
এত কাণ্ড ঘটানোর পর সুপার ফ্লপ ন্যানো প্রজেক্ট। এই গাড়ির অত্যন্ত খারাপ বিল্ড কোয়ালিটি এবং খারাপ ডিজাইন। মূলত এই দুটি কারণ ডুবিয়ে দিল ন্যানোকে। পাশাপাশি ১ লাখ টাকা দাম হলেও ভ্যাট, জিএসটি এবং অন্যান্য ট্যাক্স মিলিয়ে এই গাড়ির দাম অনেকটাই বেড়ে যায় (Nano car Price on road)। তাই, ১ লাখ টাকার যে তকমা টাটা ন্যানো ধারণ করেছিল, সেটা কিন্তু বাস্তব জীবনে সম্ভব ছিল না।
আরো পড়ুন – Mushroom : মাশরুম চাষ করে বড়লোক হতে চান? তাহলে আজ থেকেই শুরু করে দিন, তারপর দেখুন কামাল!
কিন্তু যারা স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন বাধা বিপত্তি হলেও স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা তারা কিছুতেই ছাড়েন না। সেইমতো ২০১৮ সালে বাজার থেকে ন্যানো গাড়ি তুলে নেওয়া হলেও এবার নতুন করে আসতে চলেছে এই প্রোজেক্ট। এবার আসছে টাটা ন্যানো ই ভি (Tata Nano EV)। ইলেকট্রিক সাইকেলের হাত ধরেই আবার নতুন করে পুনর্জন্ম হবে টাটা ন্যানোর (Tata Nano will be reborn again)।
আরো পড়ুন – বাড়িতে কি প্যারালাইজ়ড রোগী আছেন? এবার স্বস্তি পাবেন আপনি, কারণ তিনিও হাঁটাচলা করবেন সহজেই!
আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা (Nano car new model)। রতন টাটা যখন ভাবেন তখন তা মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখেই ভাবেন এটা ভুললে চলবে না। বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমরা ফিরব খুব শিগগিরই চোখ রাখুন ব্রেকিং ভারতে।