Breaking Bharat: আপনার বাড়িতে কি প্যারালাইজ়ড রোগী আছেন? তাকে নিয়ে ভাবনার শেষ নেই? এবার স্বস্তি পাবেন আপনি, কারণ তিনিও হাঁটাচলা করবেন সহজেই! এবার নতুন মিরাকল অপেক্ষা করছে। সম্পূর্ণ প্যারালাইজ়ড রোগীকেও হাঁটানোর পথ দেখাচ্ছে বিজ্ঞান। ভাবা যায় (Patients suffering from paralysis)!
বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান সেই জ্ঞান মানুষের ভালোর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। আবিষ্কার থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভালো দিক মেডিকেল সাইন্সে উন্নতি। জটিল অপারেশন আজ মুহূর্ত হয়ে যায়, মরনাপন্ন রোগীকে ওটি টেবিল থেকে বাঁচিয়ে আনেন ডাক্তারেরা, ৯০ এর ওপর যাদের বয়সের পর তারা ভেন্টিলেশন রুম থেকেও ফিরে এসে সুস্থ জীবন যাপন করেন। আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদের জন্য।
জীবন সবসময় এগিয়ে চলে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম তার গতিপথ। কিন্তু সব সময় সেই পথ এক ভাবে চলতে পারে না। কোনও ঘটনা বা দুর্ঘটনা থমকে দেয় জীবনের গতিকে, ভেঙে পড়ে মানুষ। কিন্তু বিরতি মানে হেরে যাওয়া নয় , আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। আবার হাঁটতে হবে, ছুটতে হবে, উড়তে হবে।
প্যারালাইজ়ড রোগীকেও হাঁটানোর পথ দেখাচ্ছে বিজ্ঞান:
কিন্তু প্যারালাইসিস বা অক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত রোগীর (Patients suffering from paralysis) কাছে এ যেন মরীচিকা। শুধু তিনি নন, তার পরিবারও বোঝে তার কষ্ট। দিনের পর দিন বিছানায় বা হুইল চেয়ারে একইভাবে থাকা- এ যেন মৃত্যুর থেকেও ভয়ংকর জীবন। কিন্তু এবার ভালো খবর এইসব রোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য।
মেডিকেল সাইন্স বলছে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত যারা তারাও এবার হাঁটাচলা করতে পারবেন। কীভাবে জানার জন্য, একটু রোগের বিষয়ে কথা বলা দরকার। প্যারালাইসিস হলে নার্ভের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। শিরদাঁড়ার আঘাত বা স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির ক্ষেত্রেও শরীর আংশিক বা সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে যায়।
শিরদাঁড়ার উপরের অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে শরীরে সম্পূর্ণ অসাড়তা দেখা যায় – ডাক্তারির ভাষায় একে বলে টেট্রাপ্লেজিয়া বা কোয়াড্রিপ্লেজিয়া। অন্যদিকে, আঘাত যদি শিরদাঁড়ার নিম্নভাগে লাগে, সে ক্ষেত্রে শরীরের নিম্নাংশ ও দুই পা অসাড় হয় – ডাক্তারির ভাষায় একে বলে প্যারাপ্লেজিয়া। প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত শরীরকে অসাড় করে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে (Paralysis partially or completely numbs the body.)।
প্যারালাইসিসের কারণগুলির মধ্যে অন্যতম স্ট্রোক, শিরদাঁড়ায় আঘাত, নার্ভের অসুখ প্রভৃতি। নড়াচড়ার বা হাঁটাচলার ক্ষমতা, শারিরীক অনুভূতি, ইন্দ্রিয়ের কাজ, স্বাভাবিক অভিব্যক্তি সবই প্রায় হারায় শরীরের যে অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় – সেই অংশে।
সাধারণত প্যারালাইসিস হওয়া অংশও তার আশেপাশের নার্ভ কোষ গুলির মৃত্যু হয়। যদি খুব অল্প পরিমাণ কোষের মৃত্যু হয়, সে ক্ষত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে প্যারালাইসিস প্রায় পুরোপুরো সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে যদি নষ্ট হয় নার্ভ কোষ, যদি সম্পূর্ণ ভাবে লোপ পায় হাঁটাচলার ক্ষমতা, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি তাহলে? এখানেও ম্যাজিক দেখালো প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান।
কিছুদিন আগেই ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে একই দেহে এইডস এবং ক্যান্সারের ভাইরাস বাসা বেঁধেছিল এমন ব্যক্তিকে, স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিল চিকিৎসা বিজ্ঞান। এবার প্যারালাইসিস নিয়ে আরেকটা বাস্তব ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছি।
স্পাইনাল কর্ডের ভয়াবহ আঘাতের পর, চলাফেরার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়েও কেবল ইমপ্ল্যান্টের সাহায্যে পায় হাঁটতে পারলেন তিন ব্যক্তি। শুধু তাই নয় সাধারণ কাজ, সাঁতার কাটা, ট্রেডমিলে দৌড়নো সব কাজই করতে পারছেন তাঁরা শরীরে ইমপ্ল্যান্ট ইলেক্ট্রোডটি বসানোর পরে।
সুইস ফেডেরাল ইনস্টিট্যুট অফ টেকনোলজির নিউরোসায়েন্টিস্ট গ্রেগরি কার্টাইন সেই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছেন ইমপ্ল্যান্ট ইলেক্ট্রোডটি অবিষ্কারের মাধ্যমে। তাঁর সাড়া জাগানো এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার মেডিসিন নামের সায়েন্টিফিক জার্নালে।
গবেষকদের বক্তব্য প্রাথমিক ভাবে এই ইমপ্ল্যান্ট ইলেক্ট্রোডকে বানানো হয়েছে এমনভাবেই, যাতে এই ইমপ্ল্যান্ট ইলেক্ট্রোডটি কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে আসা সিগন্যাল বা বার্তাকে অনুকরণ করে শরীরের নিম্নাংশের প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া রোগীদের হাঁটাচলা এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুন- Electric cars : জ্বালানির যন্ত্রণা ভুলতে ইলেকট্রিক গাড়িতেই ভরসা বিশেষজ্ঞদের?
এই পদ্ধতিটি কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নার্ভগুলিতে বৈদ্যুতিক সঞ্চার ঘটিয়ে তাদের উদ্দীপিত করবে এই ইলেকট্রোড। মেডিকেল টার্ম ব্যবহার করলে যদি বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে একটু সহজ করে বলি। আসলে শরীরকে চালানোর জন্যে আমাদের কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে বার্তা পাঠায়, যে বার্তা আসে নার্ভের মাধ্যমে।
আরো পড়ুন- Avoid online traps : বাড়ছে প্রতারণা! অনলাইনের ফাঁদ থেকে বাঁচতে মনে রাখুন এই নিয়ম
কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের আবার দুটি অংশ – মস্তিষ্ক এবং শিরদাঁড়া বা স্পাইনাল কর্ড। কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকেই নার্ভগুলি এসে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে। এবার যদি আপনার প্যারালাইসিস হয়, তবে শরীরের সেই অংশে কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে বার্তা পাঠানোর কেউ থাকে না। ফলে প্যারালাইজ় অংশে না থাকে নড়াচড়ার ক্ষমতা, না থাকে অনুভূতি।
আরো পড়ুন- Education : ডিজিটাল ভারতে সত্যি কি বদলে যাবে অতীতের পড়াশোনা? কতটা নিশ্চিত শিশুদের আগামী শিক্ষা?
এবার এই আবিষ্কৃত ইলেক্ট্রোডগুলি ক্ষতিগ্রস্থ নিউরোনগুলিকে উদ্দীপিত করবে। আর উদ্দীপিত নিউরোন থেকে ছড়িয়ে পড়া বৈদ্যুতিক বার্তা পৌঁছে যাবে শরীরের নিম্নাংশে। ফলে হাঁটাচলা বা শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করবে। ফলে প্যারালাইজ়ড অংশও আবার অনুভূতি পাবে এবং কাজ করবে আগের মতই।
আরো পড়ুন- cake business : বাড়িতে কেক বানিয়ে দু মাসেই হয়ে যান লাখপতি! নেশাকে পেশা বানান সহজেই
তাহলে বুঝলেন তো? অসম্ভব কিছুই নয় শুধু মনে একটু জোর রাখুন। আপনি অসুস্থ হয়েছেন মানে শেষ হয়ে গেছে এটা ভাববেন না। আপনার চারপাশের সুন্দর পৃথিবীর অনেক কিছু দেখার বাকি। সেগুলোকে দেখতে, চিনতে উঠে দাঁড়াতেই হবে আপনাকে।